আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষার সবগুলো খাতেই বরাদ্দ বাড়ছে।
এবারের বাজেটে প্রাথমিক ও গণশিক্ষায় ২৪ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। যা বর্তমান ২০১৯-২০ অর্থবছরে ছিল ২৪ হাজার ৪০ কোটি টাকা।
আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা খাতে ৩৩ হাজার ১১৭ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী। যা বর্তমান ২০১৯-২০ অর্থবছরে ছিল ২৯ হাজার ৬২৪ কোটি টাকা।
কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষার জন্য ২০২০-২১ অর্থবছরে ৮ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা বা প্রস্তাব করা হয়। যা ২০১৯-২০ অর্থবছরে ছিল ৭ হাজার ২৫০ কোটি টাকা।
সব মিলিয়ে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ ৬৬ হাজার ৪শ’ ১ কোটি টাকা।
বাজেট ঘোষণায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, শিক্ষা খাতে আমাদের আগামী অর্থবছরের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হবে করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘ ছুটির ক্ষতি পুষিয়ে নিয়ে পাঠ্যক্রমের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা। এ কাজের জন্য আগামী বছরের বাজেটে আমরা প্রয়ােজনীয় সম্পদের যােগান রাখছি।
প্রাথমিক শিক্ষা ও গণশিক্ষার বিষয়ে তিনি বলেন, বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ, নতুন জাতীয়করণকৃত ও বিদ্যমান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়ন, বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ এবং আইসিটি-সহ শিক্ষা সহায়ক বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ আমরা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। আমরা জাতীয় স্কুল মিল নীতি ২০১৯ মন্ত্রিসভায় অনুমোদন করেছি এবং এ নীতির আলোকে দেশের সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নিয়েছি। ৫০৩টি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইন্টারঅ্যাকটিভ ক্লাসরুম তৈরির কাজ চলমান আছে এবং অচিরেই আমরা সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুইটি করে ল্যাপটপ ও মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর সহ ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করতে যাচ্ছি। শিক্ষায় অন্তর্ভুক্তিমূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে আমরা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য অ্যাসিসটি ডিভাইস তথা হুইল চেয়ার, ক্রাচ ও হিয়ারিং এইড সরবরাহ করছি। পাশাপাশি, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিশুদের নিজস্ব বর্ণমালায় পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন এবং সংশ্লিষ্ট ভাষা জ্ঞান সম্পন্ন শিক্ষক নিয়ােগের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। এসবের পাশাপাশি, দারিদ্রপীড়িত এলাকায় বিশেষ স্কুল ফিডিং, শিক্ষার্থীদের প্রােফাইল প্রণয়ন, বিদ্যালয়গুলােতে আইসিটি ল্যাব স্থাপন ও কাৰ স্কাউটিং সম্প্রসারণের মতাে ব্যতিক্রমধর্মী কার্যক্রমও আমরা শুরু করেছি, যা আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরেও অব্যাহত থাকবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিষয়ে তিনি বলেন, শিক্ষার উন্নয়নকে আরাে বেগবান করতে আমরা এখন জোর দিচ্ছি শিক্ষার গুণগত মানােন্নয়ন ও উচ্চশিক্ষার গবেষণার উপরে। শিক্ষার সুযােগবঞ্চিত দরিদ্র মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীর শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগে আমরা প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছিলাম। এ ট্রাস্ট থেকে স্নাতক (পাস) ও সমমান পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে উপবৃত্তি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঝে টিউশন ফি’র অর্থ প্রদান করা হচ্ছে। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে মাধ্যমিক স্তরে ৫.৫৭ লক্ষ ছাত্র, ১০.৯৫ লক্ষ ছাত্রী, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ১.১৬ লক্ষ ছাত্র, ৪.৬২ লক্ষ ছাত্রী, এবং ডিগ্রী স্তরে ৫০ হাজার ছাত্র ও ১.৫০ লক্ষ ছাত্রীকে উপবৃত্তি দেয়া হবে। পাশাপাশি, পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ইতােমধ্যে প্রায় ৬ লক্ষ শিক্ষার্থীকে মেধাবৃত্তি প্রদান করা হয়েছে এবং ২০২০-২০২১ অর্থবছরে আরাে ১ লক্ষ ৮৭ হাজার শিক্ষার্থীকে মেধাবৃত্তি প্রদান করা হবে। এছাড়াও, সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ কার্যক্রম আয়োজনের মাধ্যমে সেরা প্রতিভাদের স্বীকৃতি দেয়ার ধারাও আমরা অব্যাহত রেখেছি।
শিক্ষক ও শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় জড়িত কর্মচারিদের আর্থিক সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির জন্য আমরা সচেষ্ট আছি। উপযুক্ত আর্থিক সুবিধা এবং আধুনিক প্রশিক্ষণ শিক্ষার গুণগত মানােন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ হিসেবে আমরা বিবেচনা করছি।
কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং মাদ্রাসা শিক্ষার বিষয়ে তিনি বলেন. শিক্ষা ক্ষেত্রে বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে দাখিল, কারিগরি ও এবতেদায়ী স্তরে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হচ্ছে। ইংরেজি ও গণিত শিক্ষকদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষা প্রসার ও আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানী উপযোগী দ্ক্ষ জনশক্তি তৈরির উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এ লক্ষ্যে কম্পিউটার কারিগরি শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ৮ম শ্রেণি হতে তথ্য ও যােগাযােগ প্রযুক্তি (আইসিটি) নামে পাঠ্যপুস্তক বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
আমাদের দেশে মাদ্রাসাগুলাের একটা বড় অংশ নিয়মিত স্কুল-কলেজ গুলোর চাইতে অবকাঠামোর দিক থেকে অনেকটা পিছিয়ে। এ অবস্থা উন্নয়নের জন্য আমরা দেশব্যাপী ১,৮০০টি মাদ্রাসা নতুন ভবন নির্মাণ করছি এবং বিদ্যমান ৬৫৩ মাদ্রাসায় আধুনিক মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করছি।