প্রেম, বিরহ, পারিবারিক গল্পের ছবির বাইরে নব্বই দশকে চলচ্চিত্রে ‘মার্শাল আর্ট’ ঘরানার ছবির নির্মিত হতো। ওইসব ছবিতে অভিনয় করে রুবেল, ড্যানি সিডাক, ইলিয়াস কোবরার মতো অনেকে বেশ পরিচিতি পেয়েছিলেন। ছবিগুলো নির্মাণ ও প্রযোজনা করতেন জাহাঙ্গীর আলম। যিনি ওস্তাদ জাহাঙ্গীর আলম নামে পরিচিত। ২০০০ সালের পর ওস্তাদ জাহাঙ্গীর আলম চলচ্চিত্র থেকে দূরে সরে যান। কেন দূরে সরে গিয়েছিলেন, এখন কী করছেন? চলচ্চিত্রের প্রতি তার মান অভিমান ও ইন্ডাস্ট্রির বর্তমান অবস্থা নিয়ে গত সোমবার চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে আলাপ করেন তিনি:
চলচ্চিত্র ছেড়ে দূরে কেন ওস্তাদ জাহাঙ্গীর?
ইন্ডাস্ট্রির কিছু মানুষ আমার সাফল্যে পিছনে লেগেছিল, সেজন্য আমি দূরে সরে গিয়েছিলাম। তারা মার্শাল আর্ট গল্পের ছবির সাফল্য সহ্য করতো না। কিন্তু সেন্সর থেকে আমার ছবি আনকাট দেয়া হতো। আমার ছবিগুলো ভালো চলতো। আমি এবং রুবেল মিলে মার্শাল আর্ট ছবি করতাম। ৩০-৪০ লাখ টাকা দিয়ে ছবি বানাতাম। সেখান থেকে কোটি টাকা উঠে আসতো। আমার কোনো ছবি লস হয়নি। ক্যারাটে মাস্টার, লড়াকু, মাস্টার সামুরাই, পেশাদার খুনী, কুংফু কন্যা, কুংফু নায়ক, ওস্তাদ সাগরেদ, প্রেমিক রংবাজ এসব মার্শাল আর্টের ছবি পরিচিতি এনে দিয়েছিল। এসব ছবি করতে তিনি রীতিমত যুদ্ধ করেছি। আমার সাফল্য সহ্য করতে না পেরেই আমাকে অশ্লীল ছবির নায়ক বলে ব্যাড পলিটিক্স করতো। এসব করেই ইন্ডাস্ট্রির ক্ষতি করা হয়েছে।
আর ফিরবেন না?
প্রযোজক সমিতির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বে ছিলাম। পরে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট আছি। নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত আমি এই পদে বহাল থাকবো। সমিতির নিয়ন্ত্রণ এখন সরকারের হাতে। আর ছবি না করলেও আমি তো ফিল্মের সঙ্গে আছি। জানুয়ারি মাসের শুরুতেই ছবির কাজ শুরু হবে। ছবির গল্পে মার্শাল আর্টকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে নাম রাখা হয়েছে ‘ডিজিটাল প্রেম’। আমি নিজেই প্রযোজনা, পরিচালনা এবং অভিনয় করবো। ডিসেম্বরে বাকি শিল্পীদের চূড়ান্ত করবো।
বর্তমান চলচ্চিত্র নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী, কেমন মনে হচ্ছে?
একেক সময় একেক ধারা আসে। এখন নাটকের পরিচালকরা ছবি বেশি বানাচ্ছে। সোশ্যাল-রোমান্টিক ছবি বানাচ্ছে। এটা ভালো। তবে ডিজিটাল ছবি হওয়ার পর আগের পরিচালকরা অনেকেই ব্যর্থ হয়েছেন। আগের মতো তো ব্যবসা নেই ফিল্মে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো চলচ্চিত্র এখন বিভক্ত। কাজের চেয়ে অকাজ নিয়ে ব্যস্ত। কেউ কাজ করলে তাকে বাঁধা দেয়া হচ্ছে। এসব করে কোনো লাভ নেই। কাজকে প্রাধান্য দিতে হবে।
বাঁধা দেওয়া হচ্ছে…?
হ্যাঁ তাই তো! শাকিব খান কাজ করলে তার কাজে বাঁধা দেয়া হচ্ছে। তাকে বাঁধা কেন দেবে? তার ছবি মানুষ টাকা দিয়ে টিকেট কিনে দেখে। অন্যদের ছবি দেখেনা সেজন্য? সে তো দেশের বাইরে কাজ করছে। এটা আমাদের জন্য খুব সম্মানের বিষয়। শাকিব আমাদের দেশের সম্পদ। সে সুপারস্টার এটা স্বীকার করতে হবে। দেশের ছবি করছে সঙ্গে বিদেশেও কাজ করছে সমানতালে। শাকিবকে হিংসে করলে হবে না, তাকে সাপোর্ট দিতে হবে। কারণ, শাকিব খান কষ্ট করে তার এই পজিশন অর্জন করেছেন। শুনেছি শাকিব নাকি অনেক বেশি টাকা নেয়। আমি মনে করি, এটা তার প্রাপ্য। এই পজিশনে আসতে তার কষ্ট করতে হয়েছে। আমার সঙ্গে কয়েকটি ছবিতে শাকিব কাজ করেছে। আমি দেখেছি তার স্ট্রাগলটা।
কাজ করলে বাঁধা আসে, এটা পুরনো অভিযোগ। এমনটা কারা করেন বলে মনে হয় আপনার?
যারা বেকার তারাই ভালো কাজে বাঁধা দেয়। শাকিবকে তারাই বাঁধা দিচ্ছে। আমি নাম বলতে চাইনা। এরমধ্যে কয়েকজন মানুষ আমার পিছনেও লেগেছিল। তারা এখনো ফিল্মে আছে। এদের কাজই হচ্ছে মানুষের ভালো কাজে আঙুল দেয়া। যুগ যুগ ধরে ফিল্মে এসব মন্দ মানুষ ছিল। তবে এখন একটু বেশি। আমার মার্শাল আর্ট ছবির সাফল্য তারা সহ্য করতে পারতো না। সেজন্য ব্যাড পলিটিক্স করে আমাকে অশ্লীল ছবির নায়ক বানিয়ে ইন্ডাস্ট্রি থেকে সরিয়েছে। এতে লাভ হয়েছে কার? ক্ষতি যা হওয়ার ইন্ডাস্ট্রির হয়েছে। এসব হিংসা করা মানুষ সবখানেই থাকবে। তাদের হাতে ছবি নেই, যে কাজ করছে তাকে বাঁধা দিচ্ছে। কাজ নাই তো কি করবে!
আপনি কোনো অশ্লীল ছবিতে কাজ করেননি?
এটাই তো বললাম। মার্শাল আর্টের ছবি যখন বেশি চলতো, অন্যদের ছবি চলতো না তখন তারা বন্ধ করার জন্য উঠে পড়ে লাগে। এখন যেমন শাকিব খানের পিছনে লাগছে, তেমনি আমার মার্শাল আর্ট ছবির পিছনে লেগেছিল। শাকিবের জনপ্রিয়তা অনেক বেশি বলে তাকে কিছুই করতে পারছে না। সে তো ঠিকই কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু আমি সেসময় দাঁড়াতে পারিনি। আমি যেসব ছবি বানিয়েছি সেন্সর থেকে কাটিং হতো না। অথচ অশ্লীলতার দোহাই দেয়া হতো। এসব ছবি করেই কিন্তু রুবেল এক সময় ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। এদেশে মার্শাল আর্ট ছবি প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ করেছি।
সিনেমা থেকে এতদিন ধরে দূরে আছেন, কী করছেন?
সারাদেশে মার্শাল আর্ট ক্লাব রয়েছে। সেগুলোতে যাই। আর কক্সবাজার কলাতলিতে আমার নিজের জায়গা ছিল সেখানে একটি রিসোর্ট দিয়েছি। এটা দেখাশোনা করি। মাঝে কয়েক বছর আমেরিকা ছিলাম। সেখানে পুরস্কার পেয়েছি বাংলাদেশের মার্শাল আর্টের অবদান রাখার জন্য। আমার এক সন্তান রয়েছে সেখানে। আমার লাস্ট ছবি দুটো ছিল ‘সাহসী সন্তান’ এবং ‘ডাইরেক্ট অ্যাকশন’। ১০-১২ বছর মুক্তি পেয়েছি।