ধর্মীয় উগ্রবাদে অনুপ্রেরণা দানসহ জাতীয়, স্বাধীনতার চেতনাবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগে শিক্ষা মন্ত্রণালয় লেকহেড গ্রামার স্কুলটি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু স্কুলের পরিচালনা পর্যদ জানিয়েছে এখনো তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোন চিঠি পায় নি। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের চিন্তায় উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে অভিভাবকরা।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির গুলশান ও ধানমন্ডিতে দুটি ক্যাম্পাস রয়েছে। মঙ্গলবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে সরেজমিনে লেকহেড গ্রামার স্কুলের ধানমন্ডির ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা গিয়েছে প্রতিটি অভিভাবকই শিক্ষার্থীদের নিয়ে ভবিষ্যৎ নিয়ে আতঙ্কিত। তারা জানিয়েছেন ব্যাপারটি নিয়ে অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন, স্কুল কৃর্তপক্ষের অবশ্যই উচিত বিষয়টি ঘোলাটে না করে সবকিছু প্রকাশ করা।
ধানমন্ডির ১১/এ রোডের ৭৮ নম্বর বাসায় লেকহেড গ্রামার স্কুল। বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমের কর্মীরা সেখানে অবস্থান করলেও স্কুল কর্তৃপক্ষ তাদের ভিতরে ডোকার অনুমতি দেয় নি।
প্রায় ঘন্টাখানেক পর মুঠোফোনে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা আসিফ ইসতিয়াক চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, লেকহেড স্কুল বন্ধের যে গুজবটি উঠেছে, এর ভিত্তিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আমরা এখনো কোন চিঠি পাই নি। যখন আমরা এ সংক্রান্ত চিঠি পাবো আমরা তখন সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের যোগাযোগ করব। প্রয়োজন হলে সাংবাদিক সম্মেলনও করব। কিন্তু গণমাধ্যম যেন আমাদের স্কুল নিয়ে গুজব না রটায়।
লেকহেড স্কুল বন্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশটি গণমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত হয়েছে। সেটা দেখেই অভিভাবকরা উৎকণ্ঠার মধ্যে পড়েছে। তারা বলছেন বছরের শেষের দিকে স্কুলটি বন্ধ হয়ে গেলে সন্তানদের কোথায় ভর্তি করাবেন।
হুমায়ূন কবীর চৌধুরী নামের এক অভিভাবক চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, বিভিন্ন অনলাইন মিডিয়া ও টেলিভিশনের নিউজটা দেখেছি, ব্যাপারটা কতোটুক সত্য তা জানা প্রয়োজন। আমি স্কুলের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি, কিন্তু তারা চিঠিটা এখনো পায়নি বলে জানিয়েছে।
স্কুলটিতে শিক্ষার্থীরা খুব ভালো আদব কায়দা শিখে জানিয়ে রাজিয়া সুলতানা নামে এক অভিভাবক চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধকরণের কোনো বইপত্র এ স্কুলে নেই। ব্রিটিশ ক্যারিকুলাম অনুযায়ী এখানে শিক্ষা প্রদান করা হয়। আমরা অভিভাবকরা সব সময় চিন্তা ভাবনা করেই সন্তানদের স্কুলে ভর্তি করি। কারণ এখানে সন্তানের ভবিষ্যৎ জড়িত। আমরা আসলে বুঝতেই পারছি না কেন এই স্কুলের নামেই বারবার অভিযোগ উঠে।যদি বাচ্চাদের ‘ব্রেইন ওয়াশ’ করা হতো তাহলেতো আমাদের ব্যাপারগুলো চোখে পড়ত।
জানা যায়, সাড়ে তিন বছরের একটু বেশি হলে স্কুলটিতে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করানো হয় না।
সোমবার ঢাকা জেলা প্রশাসককে এ নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য চিঠি পাঠানো হলেও ঢাকা জেলা প্রশাসক অফিস সূত্র জানিয়েছে লেকহেড স্কুল বন্ধের চিঠি তারা এখনো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে পায় নি।
এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র চ্যানেল আই অনলাইনকে নিশ্চিত করেছে যথাযথ মাধ্যমে সঠিক সময়েই স্কুল কর্তৃপক্ষ চিঠিটি পেয়ে যাবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সালমা জাহান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, লেকহেড গ্রামার স্কুলটি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনপ্রাপ্ত নয়। এটির বিরুদ্ধে ধর্মীয় উগ্রবাদে অনুপ্রেরণা, উগ্রবাদী সংগঠন সৃষ্টি, জঙ্গি কার্যক্রমে পৃষ্ঠপোষকতাসহ জাতীয় ও স্বাধীনতার চেতনাবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে। এ জন্য প্রতিষ্ঠানটির সকল কার্যক্রম বন্ধ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেয়া হল।