রোহিঙ্গা সংকটের শুরু থেকেই প্রতিবেশি হিসেবে চীনের ভূমিকা চেয়েছিল বাংলাদেশ। অথচ বিভিন্ন কারণে চীনের ভূমিকা ছিল মিয়ানমারের সামরিক জান্তার পক্ষে। এতে সুযোগ পেয়েছে মিয়ানমারের সেনা নিয়ন্ত্রিত সরকার। কূটনৈতিক মারপ্যাচে নিধনযজ্ঞ চালানো মিয়ানমার প্রতিবেশি কয়েকটি দেশের সমর্থন পাওয়ায় জাতিগত নিধনের শিকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীও ফিরতে পারেনি নিজ ভূমে। তবে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত আশার আলো জাগিয়েছেন।
চ্যানেল আইয়ের প্রতিবেদনে জানা যায়, ‘চীনের রাষ্ট্রদূত লি জি মিং বলেছেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা নিজেদের দেশে কিভাবে স্বদেশে ফিরে যাবে সে লক্ষ্যে চীন সরকার বাংলাদেশ সরকারের সাথে কাজ করে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল পরিদর্শনে এসে চীন সরকারের পক্ষ থেকে মেডিকেল ইকুইপমেন্ট হস্তান্তরকালে তিনি এসব কথা বলেন।
রাষ্ট্রদূত জানান, গত পাঁচ বছর ধরে মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের মধ্যে চীন মধ্যস্থতা করছে। বিগত দুদিন ধরে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনকালে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি, জাতিসংঘের প্রতিনিধি এবং ইউএনএইচসিআর সহ আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের কথা হয়েছে। দ্রুত সময়ে রোহিঙ্গারা তাদের বাড়িতে তাদের দেশে ফিরে যাক সেটাই চায় চীন।’
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চীনের ভূমিকা এটাই হোক, তা আমরা চাই। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের সাথে চীনের সম্পর্ক বেড়েছে। বন্ধুত্বের বোঝাপড়াও গড়িয়েছে অনেক দূর। বিশ্ব রাজনীতির প্রেক্ষাপটে এটা অস্বীকার করার কোনো অবকাশ নেই। এই বোঝাপড়া শুধুই ব্যবসায়িক গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না বলে আমরা আশা করি। রোহিঙ্গা সংকট দক্ষিণ এশিয়াকে হুমকির মধ্যে ফেলেছে। এ সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে বিরূপ প্রভাব চীনেও পড়বে। এছাড়া রোহিঙ্গাদের মানবিক দিক বিবেচনা এবং বাংলাদেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ানোর বিষয়টি তো রয়েছেই।
চীন এখন বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে যে প্রভাব বিস্তারের পথে হাঁটছে তাতে তাদেরকে আরও মানবিক হতে হবে। মিয়ানমারকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চাপ দিয়ে বাধ্য করে বিশ্ব রাজনীতিতে আরও একবার স্বীয় মানবিক অবস্থানেরও জানান দিতে পারে চীন। ভারত এবং চীনের নমনীয় ভূমিকায় মিয়ানমার নিধনযজ্ঞ চালানোর পরও এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন করছে না বলেই প্রতীয়মাণ। এতে গোটা দক্ষিণ এশিয়া বিরূপ পরিস্থিতিতে পড়ছে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে চীন, ভারতসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মিয়ানমারকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাধ্য করবে বলেই আমাদের আশাবাদ।