চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আর কোনো টালবাহানা নয়

আর মাত্র কয়েকদিন পর রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে প্রবেশের দুই বছর পূর্তি হবে। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর কথিত হামলার অভিযোগ এনে সেদেশের রাখাইন রাজ্য থেকে কয়েক লাখ রোহিঙ্গাকে ভয়াবহ নির্যাতন করে বাংলাদেশে পালাতে বাধ্য করা হয়।

জাতিসংঘের হিসাব বলছে, সেদিনের পর থেকে কয়েকদিনের ব্যবধানে অন্তত সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এসব রোহিঙ্গাদের অভিযোগ, মিয়ানমারের সেনারা তাদের ওপর গণহত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের মতো মনবতাবিরোধী অপরাধ করেছে। যার কোনো বিচার আজ পর্যন্ত হয়নি। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে একাধিকবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও নির্যাতিত এসব রোহিঙ্গাকে দেশেও ফিরিয়ে নেয়নি মিয়ানমার।

তবে শুক্রবার বার্তা সংস্থা রয়টার্স একটি প্রতিবেদন প্রকাশে করেছে। তাতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ২২ হাজার রোহিঙ্গার যে তালিকা পাঠিয়েছে, তার মধ্যে থেকে ৩ হাজার ৫৪০ জনকে ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়েছে মিয়ানমার। ২২ আগস্ট তাদেরকে ফিরিয়ে নেওয়া হবে। কিন্তু আদৌ কি রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেবে মিয়ানমার? গত দুই বছরে দেশটির ভূমিকায় এ ধরনের সংশয় তৈরি হওয়াটাই স্বাভাবিক।

এইতো গত বছরেও প্রত্যাবাসনের সবকিছু ঠিক হওয়ার পরও রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে পাঠানো সম্ভব হয়নি। আমরা জানি, এর পেছনে কাজ করেছিল রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে দেশটির অনীহা। কেননা রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তাসহ অন্যান্য বিষয়গুলো নিশ্চিত না করেও তাদেরকে ‘স্বল্প পরিসরে’ ফিরিয়ে নিতে চেয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি।

আবার যাদেরকে ফিরিয়ে নেওয়া হবে, সেই রোহিঙ্গারাও  বারবার বলছে, তাদের নাগরিকত্ব এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না হলে তারা মিয়ানমারে ফিরবেন না। রোহিঙ্গাদের সংগঠন ‘আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস’ এখন আবার দাবি করছে, ২২ তারিখের প্রত্যাবাসন নিয়ে তাদের সাথে কোনো আলোচনাই করা হয়নি।

এর মানে দাঁড়াচ্ছে রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরানোর এ উদ্যোগের সফলতা নিয়েও সংশয় থাকছে। কেননা এখন যদি রোহিঙ্গা বলে, তারা মিয়ানমারে যেতে নিরাপদবোধ করছে না, তাহলে কি হবে? তাহলে কি গত বছরের মতো এবারও ঝুলে যাবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া?

আমরা মনে করি, রোহিঙ্গা মিয়ানমারের নাগরিক। তাদের নিজ দেশে নিরাপত্তাহীনতা যাতে তৈরি না হয়, সেই নিশ্চয়তা মিয়ানমারকেই দিতে হবে। এতে নিয়ে চতুরতার আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ নেই। খোলা মন নিয়ে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিতে হবে। কেননা বাংলাদেশ যুগের পর যুগ রোহিঙ্গাদের বোঝা টানবে না। এই দায় থেকে আমাদেরকে দ্রুত মুক্তি দিতে হবে।