রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় মঙ্গলবার দিবাগত রাতে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে ঢাকায় আনা চার রোহিঙ্গা নারীকে উদ্ধার করেছে র্যাব। তাদের সঙ্গে বিপুল পরিমাণ পাসপোর্ট ও ভুয়া জন্ম নিবন্ধনের কপি উদ্ধার করা হয়েছে। তাদেরকে দেশের বাইরে পাচারের জন্য ঢাকা আনা হয়েছিল বলে জানা গেছে। সেসময় পাচারকারী ও দালাল দু’জনকেও আটক করা হয়েছে।
এরআগেও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রোহিঙ্গা জনগণকে আটক করা হয়েছে। আগস্ট ২০১৭ সালে আসা ও তারআগে থেকে বাংলাদেশে আসা মিলিয়ে রোহিঙ্গাদের বর্তমান সংখ্যা প্রায় ১১ লাখ। এরা সবাই কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন শিবিরে অবস্থান করার কথা। কিন্তু বিভিন্ন স্থানীয় দালাল ও পাচারকারী চক্রের সাহায্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোহিঙ্গা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে বলে অনেকে আশঙ্কা করেছেন, এ সংক্রান্ত নানা সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশও হয়েছে। বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক।
বাংলাদেশ অসহায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে শুধুমাত্র মানবিক প্রেক্ষাপটে। তাদের থাকা-খাওয়াসহ নানা বিষয় দেখতে সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় বিভিন্ন দেশি-বিদেশি সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনেও সরকার জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। সেইসঙ্গে দুর্গম পার্বত্য এলাকা থেকে আরেকটু ভাল অবস্থানে তাদের রাখার জন্য এক লাখ রোহিঙ্গাকে ধাপে ধাপে ভাসানচরে সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। সেখানে রোহিঙ্গাদের বসবাসের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও বাজার নির্মাণের কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। ১১ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্টির সবাইকে নজরদারি বা দেশীয় বিভিন্ন নিয়মিত কার্যক্রমের মধ্যে যাচাইবাছাই করা কঠিন বলে আমরা মনে করি। তারপরেও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দক্ষ নজরদারিতে তারা এখন পর্যন্ত বড় আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারেনি।
টেকনাফ দিয়ে নৌপথে মালয়েশিয়াগামী বহু রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে গত কয়েকবছরে। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশ থেকে রোহিঙ্গাদের আটক করে দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে, যারা বাংলাদেশী পাসপোর্টে সেখানে গিয়েছিল। বিষয়টি বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানিতেও প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। বায়োমেট্রিক পদ্বতিতে রেজিস্ট্রেশন করা রোহিঙ্গারা যেভাবে বাংলাদেশী পাসপোর্ট পাচ্ছে এবং বিদেশে যাচ্ছে, তা আমাদের ভাবাচ্ছে।
কীভাবে রোহিঙ্গারা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে, বাংলাদেশী পাসপোর্ট করছে এবং বিদেশ যাচ্ছে, তা সতর্কতার সঙ্গে দেখা দরকার বলে আমরা মনে করি। আমাদের আশাবাদ, সরকারের বিভিন্ন দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে দেখে কঠোর ও কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন।