‘চোখ মেললেই জীবন। চোখ বন্ধ করলেই আর জীবন নেই। জীবনের রংটাই এরকম।’ এই উপলব্ধিবোধকে নিজের মধ্যে ধারণ করেই একজন আইয়ুব বাচ্চু চার দশক মাতিয়ে রেখেছিলেন বাংলাদেশের সংগীতের ভুবন।
সত্তরের দশকে ‘ফিলিংস’ ব্যান্ডের হয়ে সঙ্গীত জগতে যাত্রা শুরু করা আইয়ুব বাচ্চুর গাওয়া প্রথম গান ‘হারানো বিকেলের গল্প’ তারুণ্যের মনে আবেগের রিনিঝিনি সুরেলা ছন্দ তুলে দিয়েছিল।
আর ‘রক্তগোলাপ’ নামে জীবনের প্রথম একক অ্যালবাম প্রকাশের দুই বছর পর ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত দ্বিতীয় একক অ্যালবাম ‘ময়না’ আইয়ুব বাচ্চুকে সঙ্গীত জগতে সফলতার পথ দেখায়।
এলআরবি ব্যান্ড গঠনের পর ১৯৯২ সালে আইয়ুব বাচ্চুর প্রথম ব্যান্ড অ্যালবাম ‘এলআরবি’ প্রকাশিত হয়। দ্বৈত এই অ্যালবামের ‘শেষ চিঠি কেন এমন চিঠি হয়?’ এবং ‘ঘুম ভাঙ্গা শহরে’ গানগুলো তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।
১১ টি একক ও ৭ টি ব্যান্ড অ্যালবামে গাওয়া, ‘ফেরারী এই মনটা আমার’, ‘এখন অনেক রাত’, ‘চল বদলে যাই’, ‘আমিও মানুষ’, ‘আমি কষ্ট পেতে ভালোবাসি’ ও ‘সেই তুমি কেন এত অচেনা হলে’র মতো কিছু হৃদয় ছোঁয়া গান আইয়ুব বাচ্চুকে দেশের জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত করেছে।
আইয়ুব বাচ্চুর সর্বশেষ প্রকাশিত একক অ্যালবাম ‘জীবনের গল্প’। যেখানে ১০টি গানেরই সুর ও সঙ্গীত পরিচালনা করেন তিনি। এ অ্যালবামে নিজের মা এবং জীবনের নানা ঘটনা নিয়ে ‘জীবনের গল্প’ শিরোনামে গানটি লিখেন আইয়ুব বাচ্চু নিজেই।
শুধুই গান? না। কেবল গানই নয়। গানের সাথে সাথে আইয়ুব বাচ্চুর গিটারে তোলা সুরের মূর্ছনা মন্ত্রমুগ্ধ করেছে শ্রোতাদের। এক কথায় গিটারকে দিয়ে সুরে সুরে কথা বলাতে পারতেন উপমহাদেশের এই খ্যাতিমান গিটারিস্ট।
গায়ক, সুরকার ও প্লেব্যাক শিল্পী এবং এলআরবির লিড গিটারিস্ট ও ভোকালিস্ট আইয়ুব বাচ্চু আমাদের মাঝে আর নেই।
জনপ্রিয় এই সংগীতশিল্পী বৃহস্পতিবার সকালে নিজ বাসায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
১৯৬২ সালে চট্টগ্রাম জেলায় জন্মগ্রহণ করা আইয়ুব বাচ্চুর ডাক নাম ছিল রবিন। শ্রোতা-ভক্তদের কাছে যিনি এবি (AB) নামেই পরিচিত।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)