নিয়মিত বিভিন্ন পুষ্টিগুণসম্পন্ন খাবার শিশু দৈহিক ও মানসিক বিকাশে সাহায্য করে। তবে এটাও ঠিক, একেক খাবারে থাকা পুষ্টি বেশি কাজে লাগে শরীরের একেক অংশে। বড়দের পাশাপাশি বিশেষ করে শিশুদের বেড়ে ওঠায় এসব খাবার অনেক বেশি ভূমিকা রাখে।
মস্তিষ্ক মানবদেহের অন্যান্য অংশের বিকাশ ও সঠিক পরিচালনা অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণ করে। তাই শিশুকালেই এই অতি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটির উপযুক্ত বিকাশ নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
চলুন জেনে নেই মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়াতে সন্তানকে কোন ৭টি খাবার খেতে দেয়া দরকার:
ব্রেকফাস্ট সিরিয়াল বা কর্নফ্লেকস
দিন শুরু করার স্বাস্থ্যকর একটি উপায় হলো এক বাটি সিরিয়াল। তবে সাবধান! বাচ্চারা যে সব সিরিয়াল পছন্দ করে তার উপাদানের প্রায় ৫০ শতাংশ জুড়েই থাকে চিনি। এই সিরিয়ালগুলো অনেক বেশি প্রসেসিংয়ের মধ্য দিয়ে যায়। যার ফলে এগুলোতে ফাইবার, ভিটামিন ও খনিজ উপাদান থাকে খুবই কম আর লবণ থাকে প্রচুর।
ওইসব ক্ষতিকর সিরিয়াল বাদ দিয়ে কর্নফ্লেকস, উইটাবিক্স, গ্র্যানোলা, মিউজলি এবং পরিজের মতো সিরিয়ালগুলো খাওয়া অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর। আপনার সন্তান যদি তার এই সিরিয়ালের বাটিতে আলাদা চিনি মেশায়, তাও ওই চিনিভরা সিরিয়ালগুলোর চেয়ে অনেক অ-নে-ক কম চিনি থাকবে প্রতি বাটিতে।
ডিম
ডিমে থাকে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন বা আমিষ, জিংক, ভিটামিন এ (ভালো দৃষ্টিশক্তির জন্য), ভিটামিন ডি (হাড়ের বৃদ্ধির জন্য), ভিটামিন ই (রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য) এবং ভিটামিন বি১২ (রক্তের লোহিত কণিকার গঠনে অত্যাবশ্যক)।
ডিমের কুসুমে রয়েছে ‘লেসিথিন’ নামক উপাদান, যাকে মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য খুবই জরুরি মনে করা হয়। লেসিথিন স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। এছাড়াও মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে ডিমের কুসুমে থাকা আয়রন।
কিউই
একটি কিউইতে একটি কমলার প্রায় দ্বিগুণ ভিটামিন সি থাকে, যা পূর্ণবয়স্ক একজন মানুষের একদিনের ভিটামিন সি’র চাহিদা পূরণে সক্ষম। ভিটামিন সি খাদ্য থেকে দেহে আয়রন শোষণের ক্ষমতা বাড়ায়। ভিটামিন সি দেহে জমা থাকতে পারে না। তাই শিশুদের প্রতিদিনই কিউই বা ভিটামিন সি’তে ভরপুর অন্য খাবার খেতে দিতে হবে।
কলা
কলা এমন একটি ফল, যাতে আছে প্রচুর পরিমাণে বলকারক কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা। সকালে নাস্তার কিছু সময় পর হালকা স্ন্যাক হিসেবে একটি কলা খেলে আপনার বাচ্চাটি পুরোটা সকাল জুড়েই তার শক্তি ধরে রাখতে পারবে। ফলে যে কোনো কাজে তার মনোযোগ দেয়ার ক্ষমতাও বাড়বে।
তাই টুকিটাকি স্ন্যাক হিসেবে সন্তানের ব্যাগে চিপস বা বিস্কিটের প্যাকেটের বদলে একটি কলা দিয়ে দিন।
শুকনো ফল
যে সব ফল শুকিয়ে রাখা যায় সেগুলোতে থাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। এগুলো হলো ব্যাপক শক্তির উৎস। তাই শিশুদের শুকনো ফল খাওয়ানোর অভ্যাস করতে হবে।
তেলযুক্ত মাছ
কিছু কিছু ফ্যাটি অ্যাসিড মানবদেহে তৈরি হয় না, কিন্তু দেহের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। ফ্যাট বা চর্বি মস্তিষ্কের অনেক বড় একটি উপকরণ। মস্তিষ্কের গঠনে ফ্যাটি অ্যাসিডের অনুপাতটি অনেক বড়। এগুলো মস্তিষ্কের কার্যাবলীতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই ফ্যাটি অ্যাসিড খাবারের মাধ্যমেই গ্রহণ করতে হয়।
মাছের তেল মানব দেহের জন্য খুব উপকারি। বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছের তেলে থাকে ‘ওমেগা থ্রি’ ফ্যাটি অ্যাসিড। স্যামন, টুনা, কিপারস েএবং সার্ডিন মাছের দেহে তেল থাকে প্রচুর পরিমাণে। বিভিন্ন গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, ফ্যাটি অ্যাসিডে সমৃদ্ধ খাবার নিয়মিত খেলে ডিসলেক্সিয়া, ডিসপ্রাক্সিয়া এবং অ্যাটেনশন ডেফিসিট ডিজঅর্ডার-এর মতো মানসিক সমস্যাযুক্ত শিশুদের অবস্থার উন্নতি হয়।
পনির
ফ্যাট কম, ফাইবার বেশি – এ ধরণের খাদ্য গ্রহণের গাইডলাইন বড়দের জন্য, ছোটদের জন্য নয়। শিশুদের বর্ধিষ্ণু দেহের জন্য দরকার তুলনামূলক বেশি ফ্যাট ও কম শর্করা। এতে তারা দেহে বেশি শক্তি পায় এবং বিভিন্ন কাজ অনেক ভালোভাবে করতে পারে।
ছোট ছেলেমেয়েদের পাকস্থলী ছোট হওয়ায় তাদের পেট অল্পতেই ভরে যায়। তাই এদের ক্ষেত্রে অল্প পরিমাণ খাদ্যে বেশি করে পুষ্টিগুণ থাকতে হবে। পনির প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিসমৃদ্ধ একটি দুধজাতীয় খাবার। এতে আছে প্রচুর আমিষ এবং ক্যালসিয়াম, যা সুস্থ হাড় ও দাঁতের জন্য আবশ্যক। একই সাথে পনির মুখের ভেতর যে অ্যাসিড দাঁতের ক্ষয়ের জন্য দায়ী, সেগুলোকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়।