শীতকাল মানেই শুষ্ক আবহাওয়া আর শুষ্ক আবহাওয়া মানেই শুষ্ক ও নিস্প্রাণ চুল। একই সঙ্গে এই মৌসুম যেন ধ্বংস ডেকে আনে চুল ও মাথার ত্বকেরও উপরে, কেননা এসময় ত্বক তার স্বাভাবিক আর্দ্রতা হারায়।
এসব থেকে নিজেকে রক্ষা করতে অনায়াসে নির্ভর করতে পারেন বেশ কিছু তেলের উপর। তেলই পারে আপনার ত্বক ও চুলকে সেসব ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে। নিয়মিত ব্যবহারে চুল থেকে নিষ্প্রাণ ভাব দূর করে চুলকে আবার প্রাণ ফিরিয়ে দিবে এই তেলই।
ভারতের আল্পস বিউটিক্লিনিক ও একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ভারতী তেনেজা পাঠকদের উদ্দেশ্যে বেশ কিছু তেলের নাম ও সেগুলোর নানান উপকারিতার কথা তুলে ধরেছেন। নিজের চুলের ধরণ বুঝে সেসব ব্যবহার করলেই পাবেন সবচেয়ে ভালো উপকারিতা।
বাদামের তেল: চুল পড়ে যাওয়া ও চুল ভেঙে যাওয়ার সমস্যা থেকে রেহাই পেতে অবশ্যই দ্বারস্থ হতে পারেন এই তেলটির। ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, ভিটামিন ই, ফসফোলিপিডস ও ম্যাগনেশিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলো রয়েছে এই তেলে। চুলে নিয়মিত ব্যবহার করলে চুল যেমন খানিকটা ঝলমলে ও উজ্জ্বল হয়ে উঠবে তেমনই আপনার মাথার ত্বককেও পুষ্টি যোগাবে তেলটি।
জলপাই তেল: আগা ফাটা ও জট বাধা চুলের জন্য সবচেয়ে ভালো সমাধান অলিভ অয়েল। চুলকে ময়েশ্চারাইজ করার মতো উপাদান এই তেলে আছে। ফলে সহজেই সেটা চুলের জট ও আগা ফাটা রোধ করে। একটি ডিমের কুসুম ও মধু ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে তাতে চার টেবিল চামচ জলপাই তেল যোগ করুন। এবার এটা পুরো মাথার ত্বক ও চুলে লাগান। ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন, তারপর সাধারণভাবে শ্যাম্পু করে চুলে কন্ডিশনার লাগান। তবে কখনোই এই তেল গরম করবেন না, কারণ তাহলে তেলে থাকা চুলকে আর্দ্রতা যোগানোর মতো সব উপাদান নষ্ট হয়ে যাবে।
তিলের তেল: বয়সের আগেই চুল পেকে যাওয়ার সমস্যা থেকে রেহাই দিবে এই তেলটি। চুলে পুষ্টি যোগানোর সমস্ত উপকরণ এই তেলে আছে, সঙ্গে রয়েছে চুল সিল্কি ও সুস্থ করার মতো উপাদানও। এই তেলে থাকা চুল কালো করার গুণের কারণে নিয়মিত এই তেল চুলে লাগালে চুল আরো কালো হয় এবং পেকে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পায়।
এতে প্রয়োজনীয় ফ্যাটি এসিড যেমন ওমেগা-৩, ওমেগা-৬ ও ওমেগা-৯ রয়েছে যা চুলকে পুষ্টি যোগায় এবং চুলকে ঘন ও উজ্জ্বল হয়ে বেড়ে উঠতে সাহায্য করে। তিলের তেলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই, বি কমপ্লেক্স, মিনারেল যেমন ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম ও প্রোটিন আছে যেগুলো চুলের গোড়া শক্ত করতে সাহায্য করে।
সঙ্গে বলে রাখা ভালো এই তেলটি অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল, তাই মাথার তালুতে লাগালে সেটা কোনো ফাংগাল ইনফেকশন ও ব্যাকটেরিয়া ইনফেকশন থেকেও রেহাই দিবে শিগগিরই।
ল্যাভেন্ডার অয়েল: শুষ্ক মাথার ত্বকের জন্য খুবই ভালো সমাধান এই তেলটি। ল্যাভেন্ডার অয়েলে মানিসিক চাপ কমানোর মতো, ব্যাকটেরিয়ারোধক এবং প্রদাহরোধক উপাদান রয়েছে।
মাথার শুষ্ক ত্বকে আর্দ্রতা জুগিয়ে এই তেল তা সুস্থ রাখতে সক্ষম। আপনি চাইলে এর সঙ্গে অন্য কোনো তেল যেমন জোজোবা অয়েল মিশিয়ে নিতে পারেন বাড়তি আর্দ্রতা পাওয়ার জন্য। এই তেলটি অনিদ্রা দূর করতেও সাহায্য করে।
সুগন্ধি তেল: সুস্থ ও ঝলমলে চুলের জন্য সুগন্ধি তেল বেছে নিতেই পারেন। সাধারণত সুগন্ধি তেলগুলোতে সুগন্ধযুক্ত উপাদানের মিশ্রণ রাখা হয়। হালকা সুগন্ধ আপনার মস্তিস্ককে ঠাণ্ডা করবে। মানসিক ও শারিরীক সমস্যার কারণে এসব নানান ধরনের চুলের সমস্যা দেখা দেয়। সুগন্ধি তেলগুলো আপনাকে নতুন করে শান্ত করবে। ফলে এই তেলটির মানুষের মনের উপর খুবই গভীর প্রভাব থাকে এবং এসব ছোট ছোট সমস্যা থেকে চুলকে রক্ষা করে।