লিকলিকে গড়নের সেই ছেলেটার কথা মনে আছে? ২০১৫ সালে বাংলাদেশ-ভারত নামক উত্তাপের ‘ব্যাটনের’ ভার যে আচমকাই নিয়ে নিল নবীন কাঁধে? ছেলেটা মোস্তাফিজুর রহমান। বোলিং প্রান্ত থেকে দৌড় শুরুর পর যার প্রতিটি স্টেপের সঙ্গে দুলে ওঠে লাল-সবুজের সকল ক্রিকেটপ্রেমীর প্রত্যাশার-হৃৎস্পন্দন। সামনে আবারো সেই ভারত, আবারো তাই খুব বেশি করে স্পন্দিত মোস্তাফিজের নাম। তিনি আর কিছু কাটারে খেলে দিলেই তো স্বপ্নের ফাইনাল।
স্বপ্নের মতো ঘটা বলতে যা বোঝায়, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রেখে সবকিছু তেমনই ঘটেছিল ফিজের। ভারতের বিপক্ষে আবির্ভাব সিরিজেই খ্যাতির বিশ্ব দুয়ারে প্রবেশ। ২০১৫ সালে ধোনির দলের বিপক্ষে সেই ওয়ানডে সিরিজের সবকিছুই রূপকথার মত। অভিষেকে ক্যারিয়ারের প্রথম দুই ওয়ানডেতে ১১ উইকেট। প্রথম ম্যাচে ৫, আর দ্বিতীয়টিতে ৬ উইকেট। তৃতীয় ওয়ানডেতে ২ উইকেট তো রেকর্ডের পাতাতেই ঠাঁই করে দিল বাঁহাতি পেসারকে। ব্যাটসম্যানদের জন্য আতঙ্কের প্রতিশব্দ হয়ে এল তার ‘কাটার’, নামই হয়ে গেল কাটার মাস্টার।
প্রথম দুই ম্যাচে সেরা, পরে ওই সিরিজে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কারও উঠেছিল মোস্তাফিজের হাতে। এরপর অনেকটা সময় উড়ন্ত কেটেছে। বাংলাদেশের বোলিং মেরুদণ্ডের অন্যতম ভরসাস্থলও হয়ে উঠেছেন ক্রমান্বয়ে। পরে চোট, দীর্ঘ পুনর্বাসনের সময়টা ছোট্ট ক্যারিয়ারকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে উত্থান-পতন শব্দ দুটোর দুপিঠের সঙ্গে।
সেসব পেছনে ফেলে ইতোমধ্যেই স্বরূপে ফেরার ইঙ্গিতও দিয়েছেন ২১ বছর বয়সী মোস্তাফিজ। গত ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে নিউজিল্যান্ড সফরে ফিরে নিজেকে খুঁজছিলেন। মরচে সরিয়ে শ্রীলঙ্কা সিরিজে আরেকটু শানিত হলেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে আলো ছড়ালেন। সবশেষে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে চেনারূপে ফেরার আরো কাছে গেলেন। যদিও চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ঠিক নিজের মত জ্বলে উঠতে পারেননি।
ক্যারিয়ার জুড়ে যেখানে উইকেট নিতে প্রতিটি শিকারের পেছনে ব্যয় করেছেন ১৮-এর সামান্য বেশি কিছু রান, সেখানে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ১ উইকেটের জন্য ১৩০ রান খরচ করতে হয়েছে। নিয়তি যেন একটু বেশি করেই পরীক্ষা নিচ্ছে তরুণ কাঁধের।
সেই মোস্তাফিজ আবারো নামছেন ভারতে বিপক্ষে। উত্থান-পতনের এই সময়ের আগে-পরে গত দুই বছরে আর ওয়ানডেতে ভারতের মুখোমুখি হয়নি বাংলাদেশ। মোস্তাফিজ বনাম ভারত লড়াইও তাই ২২ গজ কাঁপায়নি। প্রতিপক্ষ ভারত বলেই এজবাস্টনের সেমিফাইনালে আলোর অনেকটাই থাকবে ফিজের দিকে।
আসরে তিন ম্যাচে এক উইকেট নিয়ে ফুঁসতে থাকা ফিজ হয়ত ভারত ম্যাচের জন্যই তূণের সবগুলো তির শানিয়ে রেখেছেন। সেগুলো প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের বিদ্ধ করতে পারলে নিজে যেমন ঘুরে দাঁড়াবেন, আরেকটি রূপকথা লিখে বাংলাদেশও হয়ত পৌঁছে যাবে ইতিহাসের দুয়ারে, স্বপ্নের ফাইনালে।