মুর্তাজা আহমেদির কথা মনে আছে? প্লাস্টিক দিয়ে বানানো প্রিয় তারকা লিওনেল মেসির জার্সি পরে যে ক্ষুদে আফগান শিশুটি জয় করেছিল বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীদের হৃদয়! যাতে মুর্তাজার নামই হয়ে যায় ‘প্লাস্টিক মেসি’।
২০১৬ সালের জানুয়ারিতে মুর্তাজার একটি ভিডিও পোস্ট করেছিল ব্লিচার রিপোর্ট ফুটবল। পরিত্যক্ত প্লাস্টিক দিয়ে বড় ভাই বানিয়ে দিয়েছিল, মেসির ১০ নাম্বার আর্জেন্টিনা জার্সির আদলে, যে পোশাক পরে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে মুর্তাজার ছোটাছুটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হয়ে যায় ভাইরাল।
পাঁচ বছর বয়সী ভক্তের কথা গিয়েছিল খোদ মেসির কানেও, পরে তিনি কাছে ডেকে নেন মুর্তাজাকে। দুজনে একসঙ্গে কিছু সময় কাটিয়েছেন, আনন্দ করেছেন, তুলেছেন ছবি। তাদের মুহূর্তগুলোও ভাইরাল হয়েছে সেসময়।
কেউ বুঝতেই পারেনি ওই সাক্ষাৎটা কী বিপদ ডেকে আনতে যাচ্ছে মুর্তাজার জীবনে। জীবনের এক শখ পূরণ করতে গিয়ে সে হারিয়েছে স্বাভাবিক শৈশব, খেলার মাঠে ছোটাছুটির বদলে এখন তার পরিবারকে থাকতে হয় লুকিয়ে। ‘মেসি’ নামটাই যেন এখন মুর্তাজার পরিবারের জন্য এক বিভীষিকা!
‘আমি একটা গুঞ্জন শুনেছিলাম যে, মেসি আমার ছোট ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে পারেন।’ মেসি কীভাবে তাদের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে গেলেন সেটাই ব্লিচার ফুটবলকে পাঁচ বছর বাদে শুনিয়েছেন মুর্তাজার বড় ভাই হুমায়ুন।
পরে মেসির পক্ষ থেকে মুর্তাজার জন্য উপহার হিসেবে এলো দুটো বাক্স। মুর্তাজার বাবা আরিফ ভাবলেন তার ছেলের জন্য বিশেষ কিছু পাঠিয়েছেন আর্জেন্টাইন মহাতারকা, ‘আমরা ভেবেছিলাম একটাতে হয়তো মুর্তাজার জন্য খেলনা, আরেকটাতে ডলার। কিন্তু খুলে দেখলাম একটাতে বল, অন্য আরেকটাতে জার্সি’।
কিন্তু এই দুটো বাক্স আসলে বিপদ হয়ে এলো মুর্তাজা পরিবারের জন্য। আশেপাশের মানুষজন ভাবতে শুরু করল দামি কিছু বুঝি পাঠিয়েছেন বার্সা ফরোয়ার্ড। কেউ কেউ গুজব ছড়াতে শুরু করল, আহমেদি পরিবারকে গোপনে মোটা অঙ্কের অনুদান দিতে শুরু করেছেন মেসি।
গুজব থেকেই বাড়তে লাগল বিপদ। এলো মুর্তাজাকে জিম্মির হুমকিও। এমনকি তালেবানরাও চিঠি দিয়ে জানাল, মুর্তাজা ও তার পরিবার আছে মৃত্যুর হুমকিতে! পরে ছেলের জীবন বাঁচাতে ভাইসহ ছেলেকে কাবুলে পাঠিয়ে দেন আরিফ।
কাতারের রাজধানী দোহায় গিয়ে পুরো বার্সা দলের সঙ্গে দেখা করেছে মুর্তাজা। বাবা আরিফ ভেবেছিলেন, ছেলের জীবনকে সাজাতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবেন মেসি, ‘আমরা দোহায় মেসির সঙ্গে দেখা করার আগে ভেবেছিলাম তিনি হয়তো আমাদের সাহায্য করবেন, কিন্তু মুর্তাজার জন্য তিনি কিছুই করেননি!’
দোহা থেকে আসার পর জীবনটা পাল্টে গেল মুর্তাজার। সে এখন আগের মতো স্কুলে যেতে পারে না, মাঠে খেলতে পারে না, নিজেদের পিতৃ ভিটাতেও লুকিয়ে আছে বিপদ। সব জায়গায় একই প্রশ্ন, মেসি তাদের কত টাকা দিয়েছেন? পরে অবশ্য কিছুদিন আগে নিজের গ্রামে ফিরে যেতে পেরেছে মুর্তাজা।
বাবার মতো মেসিকে কোনো দোষ দিতে নারাজ মুর্তাজা। তার মতে প্রিয় তারকার জার্সি পরে সে কোনো দোষ করেনি। বরং, যা কিছুই হোক না কেনো সারাজীবন মেসির প্রতিই অনুগত থাকবে সে, ‘আমার খেলার কোনো জায়গা নেই, বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে পারি না। আমি আবারও মেসির জার্সি পরবো, কারণ আমি মেসিকে ভালোবাসি।’