কিছু স্বপ্ন এবং উদ্যোগ আন্তরিকতা আর অনন্যতায় এক সময় আদর্শ হয়ে দাঁড়ায়। অভ্যাস হয়ে ওঠে। ছয় পেরিয়ে সাতে পদার্পণ সেই স্বপ্ন এবং উদ্যোগের। হাজারো কণ্ঠে বর্ষবরণ। কেবল বাংলাদেশ নয় বরং ৬ মহাদেশে সমগ্র বাঙালির অভ্যাস এবং অধীর অপেক্ষার নাম হয়ে উঠেছে এই চ্যানেল আই-সুরের ধারা হাজারো কণ্ঠে বর্ষবরণ।
এবার বরণ হচ্ছে ১৪২৫। ফুটছে আলোর ভোর। তবে বর্ষবরণ কেবল হঠাৎ করে হয়ে যাচ্ছে তা কিন্তু নয়। তার আগে রাত ভর চলেছে বাউল গান। তারও তিন দিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেছেন সুরের ধারা ২৫ বছর পূর্তি ও চ্যানেল আইয়ের হাজারো কণ্ঠে বর্ষবরণের চার দিনব্যাপী অনুষ্ঠান।
মঞ্চে বেগুনী-নীলের উদ্ভাস। মেজন্টায় নীল-সাদা ছক ঘরের শাড়ির নারী আর নীল পাঞ্জাবীতে সাজানো পুরুষ কণ্ঠ। এক হাজার নারীপুরুষ। তারা গাইবেন। গানে গানে বরণ করবেন ১৪২৫ এর সূর্য। চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ভাষায়, প্রচন্ড গর্ব হচ্ছে। এমন মঞ্চে দাড়িয়ে রয়েছি যে মঞ্চ নতুন সূর্যকে স্বাগত জানাবে। ১০০০ জন গাইবে। এত বড় মঞ্চ এত শিল্পী, নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি পৃথিবীর কোথাও কোন জায়গায় কখনও একসঙ্গে নতুন বছরকে এভাবে স্বাগত জানায়নি।’ তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, গত সাত বছর ধরে চ্যানেল আই ও সুরের ধারা এভাবেই নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়ে আসছে। সঙ্গে ছিলো সাধারণ মানুষর সমর্থন। আমরা আশা করি নতুন বছরটা আমাদের শুভ কামনা বয়ে আনবে। বাঙালির উৎসবের সবচেয়ে বড় প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠবে বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্র।
বেজে ওঠে সরোদ। নতুন ভোরের নতুন দিনের সুর। ২০ মিনিটের বাদনে বিমোহিত পুরো পরিবেশ। সূর্য উঠে গেছে। ১৪২৫ এর সূর্য। ওঠো ওঠোরে/ প্রভাত বিফল বুঝি যায়রে/ ম্যালো আঁখি জাগো জাগো থেকোনারে অচেতন’। পেছনে হাজার কণ্ঠকে রেখে সরোদ শেষে গানের পর্ব শুরু করেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। তার সঙ্গে কণ্ঠ মেলায় হাজারো কণ্ঠ। তারপর একে একে কখনও একক কখনও সমবেত গানের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চলে পরিবেশনা। ‘আমার খোলা হাওয়া’, ‘দূর বেশে রাখাল ছেলে’, ‘মনরে তুই কাঁচা সোনা’, ‘এমন মানব জনম’সহ মন অবশ করা সব সঙ্গীত পরিবেশনা। এসো হে বৈশাখ এসো দিয়ে প্রাঙ্গণে উপস্থিত সবাইকে দাঁড় করিয়ে একসঙ্গে গাইয়ে থামে সুরের ধারার পরিবেশনা।
বর্ষবরণের আয়োজনে সঙ্গী হন খুরশীদ আলম, রফিকুল আলম, রথীন্দ্রনাথ রায় ও বাপ্পা মজুমদার। আর সবার শেষে ব্যান্ডদল এলআরবি। ‘মায়ের চোখের মনি নয়’, ‘দিন বাড়ি যায়’ অথবা ‘আশা ছিল মনে মনে’, ‘তুমি আর একবার আসিয়া’ অথবা অনিবার্য এলআরবি’র ‘সেই তুমি কেন এত অচেনা হলে’।
পুরো অনুষ্ঠানের মাঝে স্বাদ বাড়াতে সম্পৃক্ত হয় নাচ। পরিবেশিত হয় আজরার কোরিওগ্রাফে ফ্যাশন শো। বৈশাখের নানা গানে নাচ এবং বর্ণিল শাড়ি-মুখোশের দারুন কোরিওগ্রাফের ফ্যাশন শো মাতিয়ে দেয় সবাইকে।
বর্ষবরণে উপস্থিত ছিলেন নানা পেশার নানা শ্রেণীর প্রতিনিধি। ছিলেন জাতীয় সংসদের হুইপ সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হোসেন এমপি, লে. জেনারেল হোসেন সোহরাওয়ার্দী, ভারতীয় রাষ্ট্রদূত হর্ষবর্র্ধণ শ্রিংলা। ছিলেন চ্যানেল আইয়ের বার্তাপ্রধান শাইখ সিরাজ, ইমপ্রেস গ্রুপের পরিচালক জহিরউদ্দিন মাহমুদ মামুন, ইনসেপ্টার চেয়ারম্যান আব্দুল মুক্তাদির, গ্রামীণ ফোনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এরিক অস, আনন্দ আলো সম্পাদক রেজানুর রহমান, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি এবং ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচনে আওামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আতিকুল ইসলাম।
হুইপ আসম ফিরোজ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, এটি এমন অনন্য আয়োজন যে বাংলাদেশকে অন্ধকার থেকে রক্ষা করবে। গ্রামীন ফোনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কানাডিয়ান এরিক অস বলেন, ‘আমি কানাডার মানুষ। কিন্তু এটি আমার জন্য অসাধারণ অভিজ্ঞতা। আমাকে এখানে আনবার জন্য ধন্যবাদ।’ ব্যবসায়ী নেতা এবং ঢাকা উত্তরের মেয়র পদপ্রার্থী আতিকুল ইসলাম বলেন, এটি আমাদের অহংকার। ১৪২৫ এর প্রতিজ্ঞা হোক দেশকে ভালোবাসি। ঢাকাকে ভালোবাসি। এমন আয়োজন বাংলাদেশকে বিশ্বে নিজেকে নিজস্বতায় চিনতে সাহায্য করছে।’ লে. জেনারেল চৌধুরী সোহরাওয়ার্দী বলেন, ‘এ উৎসব সার্বজনীন। মুসলমান-হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সকল বাঙালির জন্য। সাগর পারের মানুষ। ছোটবেলায় নতুন বছরের সূর্য ওঠা দেখতে সাগরের কাছে চলে যেতাম।’ আনন্দ আলো সম্পাদক রেজানুর রহমান,‘পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় সারা বিশ্বের যেখানে যত বাঙালি আছেন তাদের জন্য শুভ কামনা।’।
সেই যে শুরুতে বলা, অভ্যাস। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতে হাজারো মানুষের যে সমাগম। দিন বেড়েছে, সে জনসমাগম জনারণ্যে পরিণত হয়েছে। মেলার আবহে পালিত হয়েছে বর্ষবরণ। শিশুদের তৈরী সাবান-পানির বেলুন, কিডস পার্ক, ভাজাপোড়া বা ফলের রস। ভর দুপুর। এলআরবির মন মাতানো গানের পর্ব শেষ। নতুন বছরে নতুন কিছুর উদ্দীপনা সঙ্গে নিয়ে ফিরতি পথে আবালবৃদ্ধবণিতা।
ছবি: জাকির সবুজ