চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

ভালবাসি ৫৭ ধারা

৫৭ ধারা বাতিল করিবেন না হুজুর, আমি বড়ই ভালবাসি ফেলিয়াছি এই আইনকে। আহা, এই আইন বাতিল হইলে আমি কেমন করিয়া যাহাকে দেখিতে নারি, তাহাকে শায়েস্তা করিবো? এই আইন বাতিল হইলে আমি যাহাকে ঈর্ষা করি তাহাকে একহাত কেমনে দেখাইবো? যাহার উচিত কথায় অঙ্গ জ্বলিয়া যায়, তাহাকে সমুচিত জবাব দিব কি প্রকার? না না হুজু্‌র ধর্মাবতার, এই আইন বাতিল করিবেন না, যদি একান্ত করিতেই হয় তাহলেই কিন্তু ইহার বদলে আরো কঠিন করিয়া আরো একটি উদোর পিন্ডি, বুদোর ঘাড়ে টাইপ আইন চাহিয়াতিছি। না হইলে কিন্তু ভোট দিব না হু, না মানে অন্ধ-তোষামোদি আর ,করিবো না বলে রাখলুম। ( ভুলেই গিয়াছিলাম যে, আজকাল তো নির্বাচিত হইতে ভোটের কোন দরকার নাই) ভোট হইতে তোষামোদি ভাল, ইহাতে তেলের প্রকারভেদ বোঝা যায়, কোন ব্র্যান্ডের তেল বা দেশি কি বিদেশি সব বোঝা যায়, এমনকি তেলের ঝাঁঝও বোঝা যায়।

কেন উদোর পিন্ডি বুডোর ঘাড়ে বলিয়াছি বলি, ধরুন, খাঞ্জা খাঁ ভালো মনে একটা লেখা লিখলো, যাহা তাহার ফেসবুকে বা পত্র-পত্রিকাতে প্রকাশ করিল, যাহার অন্দরে কোন প্রকার অসৎ উদ্দেশ্য নাই। উক্ত লেখা নিয়া প্যাচাল খাঁ, তাহার ফেসবুকে বা পত্রিকাতে ইচ্ছে মত অর্থ করিয়া, প্যাচাইল এবং ব্যাখ্যা করিল যে, ইহা ব্যক্তির বা জাতির, বা কোন গোষ্ঠীর মানহানি করিয়াছে বা সে রাষ্ট্রে জনরোষের প্রতি উস্কানি দিতেছে। রাষ্ট্রের ক্ষতিসাধনের মানস এই লেখনীতে প্রকাশ পাইয়াছে। তাহলে খাঞ্জা খাঁ এর বদলে প্যাঁচাল খাঁ কে দোষী করিবার বিধান দেশের প্রচলিত আইনে রহিয়াছি। কিন্তু ৫৭ ধারার আইনে খাঞ্জা খাঁ ধরা খাইবে। হইল তো বুদোর ঘাড়ে।

দোষী প্রমাণ হইবার আগ পর্যন্ত এই আইনে ধৃতব্যক্তি আসামী বলিয়া পরিগনিত হইবে, কি বুঝিলেন ভায়া। কথা হইবে না হইলেই কট। বারবার আইসিটি আইন পড়িয়া আজো পরিষ্কার বুঝিতে ব্যর্থ হইয়াছি যে ইহা বলিতেছে কি? সন্দেহে হইলেই কট হইবেন বা লঘু পাপে গুরু দন্ড ইহা বুঝিয়াছি আর ইহাও বুঝিয়াছি, পুলিশের যেকোন কর্মকর্তা হুট করেই কাউকে এ্যারেস্ট করিতে পারিবে কোর্টের আদেশ ব্যতিরেকে কোন সন্দেহ হইলে। আমি সত্যি ভালবাসিয়া ফেলিয়াছি কারণ এই আইনে রহিয়াছে আইসিটি আইনের ৫৭ ধারায়:

(১ উপ-ধারা): ‘‘কোনো ব্যক্তি যদি ওয়েবসাইটে বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যাহা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেহ পড়িলে, দেখিলে বা শুনিলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হইতে উদ্বুদ্ধ হইতে পারেন অথবা যাহার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করিতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে প্রদান করা হয়, তাহা হইলে তাহার এই কার্য হইবে একটি অপরাধ৷”

(২): ‘‘কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১)-এর অধীন অপরাধ করিলে তিনি অনধিক চৌদ্দ বছর এবং ন্যূনতম সাত বৎসর কারাদণ্ডে এবং অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন৷”

ছাগলের খবর
প্রতিমন্ত্রীর বিতরণ করা ছাগল মারা যাওয়ার খবর শেয়ার করে ৫৭ ধারায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন সাংবাদিক আবদুল লতিফ মোড়ল

মানবাধিকারকর্মী এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলিয়াছিলেন, ‘‘এটা স্পষ্ট যে, রাষ্ট্রযন্ত্রে যাঁদের প্রভাব আছে, তাঁরাই মামলাগুলো করছেন৷ আগে বলা হতো তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৪ ধারা সাংবাদিক নির্যাতনের হাতিয়ার৷ এখন দেখছি সাংবাদিকদের হয়রানি এবং নির্যাতনে প্রভাশালীদের জন্য এই আইনটি আশীর্বাদ হিসেবে দেখা দিয়েছে।” খান আরো বলেন, ‘‘এই ৫৭ ধারার আইনটি নিজেই হয়রানির সুযোগ করে দিয়েছে৷ কারণ, এখানে মানহানি, ভাবমূর্তি বা অনুভূতি’র কোনো ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি৷ আর কী কাজ করতে তা আঘাতপ্রাপ্ত হবে তা-ও নির্দিষ্ট করে বলা নাই৷ ফলে কোনো সাংবাদিক যদি কোনো সরকারি কর্মকর্তা বা রাজনৈতিক নেতার দুর্নীতি নিয়ে সঠিক তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদন করেন এবং তা অনলাইনে প্রকাশ হয়, তাহলে ওই সাংবাদিক মামলার শিকার হতে পারেন৷ এবং হচ্ছেও তাই৷”

আপনি কাউকে উদ্দেশ্যমূলক হয়রানি, নির্যাতন, নিপীড়ন বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করতে চাহিতেছেন, আসুন আপনার জন্যেই ৫৭ ধারা ওয়েট করিতেছে। নিন দিয়ে দিন মামলা তারপর বসিয়া বিরলে তা দিন গোঁফে, আর অপরদিকে, মামলা দ্বারা হামলার শিকার মানুষটির নাভিশ্বাস উঠিয়া যাইবে। আমিও ইনু সাহেবের মত এই আইনের বাতিল চাহিতেছি না। ইনু সাহেব আপনাকেও আমি ভালবাসিয়া ফেলিলাম। ছোটবেলার একটা খেলা খেলতে যেয়ে আমরা ছড়া কাটিতাম, কানা মাছি ভোঁ ভোঁ, যারে চাবি তারে ছোঁ। অনেকটা ৫৭ ধারা হো হো, যারে মন চাই তারে ধো (ধর)। আপনার সাথে থানা পুলিশের সাখ্যতা আছে কি? থাকিলে আপনার পোয়া বার। আর ক্ষমতাশীন ব্যক্তিদের পোয়া বার, এক্ষণ তাহারা মনের মাধুরী মিশাইয়া দিতে থাকিবে ৫৭ ধারা। ঘটনা ঘটিল, ৫৭ ধারা ছাগলে মুড়ে খাইবার পর, তাহা পুলিশ হেফাজতে পৌছাইল।

তবে আশাজাগানিয়া কথা হইল দেশের সর্ব ক্ষেত্রে যে হারে ইসলাম ধর্মের প্রয়োগ চলিতেছে, আইসিটি আই্নের ৫৭ ধারা না থাকিলেও আমরা আবার ক্ষমতায় আসিব। মানুষ আগে পাশে আসিয়াছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আশ্বাসে। এইবার তো কিছু নাই প্রলোভনের। একমাত্র আছে পরকালের অনন্ত আরাম-আয়েশের প্রলোভনের। ইহার জন্য কিছু করিবার আবশ্যকতা নেই। মদীনা সনদের হাতছানি ও জান্নাতুল ফেরদৌসে যাবার পথ সুগম করিবার প্রলোভনই যথেষ্ট। হোক মওলা, পারলে নৌকা ঠেকা। আরে বাবা ঢাকা-চট্রগ্রাম পানির নীচে, কে আছে ভরসার? একমাত্র আমাদের নৌকা রহিয়াছিল ভরসার, ইহা আবার দুর্যোগ পাড়ি দেবার বাহনও বটে, ভুলিয়া গেলে চলিবে না, নূহ নবীর নৌকার কথা। তাহা হইলে আপনাদিগের ভরসার জায়গা কোনটি বলুন তো?…… ঠিক ধরিয়াছেন উহা হইল নৌকা।

ভরসার জায়গা দেখিয়া, জামাতিরা জামায়াত ছাড়িয়া আওয়ামী লীগে দলে দলে যোগদান করিতেছে, সাথে বিএনপি’র লোকজনও। কত বড় ভরসার জায়গা হইলে চরমপন্থীরা ভিড়িতেছে দলে। দলে মনে হইতেছে, আত্মপ্রাণ নিবেদিত কর্মীর সঙ্কট চলিতেছে বিধায়, জামাত ইস্লামী হয়তে আগাতদের বেশ দায়িত্বপূর্ণ পদ প্রদান করিয়া কর্মী বাড়ানো হইতেছে। এইখানেই প্রমাণ করিতেছে যে, আওয়ামী মাল্টি কালচার দল, যে কেউ চাহিলে ভর্তি হইতে পারিবে, বড়ই ভরসায় কথা। আসল কথা হইল, নৌকা ছাড়া গতি নাই। পৃথিবীর অন্যদেশের জনগণ রকেট চড়িবার প্রয়াস করিতেছে আর আমরা নূহ নবীর নৌকার দিকে ফিরেতেছি। আমাদিগকে উন্নয়নের রোল মডেল ভাবিতেছে দিকে দিকে। এইবার ভাবিয়া বলুন, নৌকায় ভোট না মারিলে আর কোথায়ই বা মারিবেন? বাকিরা তো নৈব নৈব চ।

কিযে হইয়াছে, মনে হইতেছে বয়স বাড়িতেছে, বিধায় খেয় হারাইয়া ফেলিতেছি, বলিতেছিলাম ৫৭ ধারার কথা। আর চলিয়া গেলাম নৌকার চড়ে অন্য কোথা।

ইয়ে মানে সেদিন একজন তো বাড়ির সামনে গাড়ি রাখিয়াছিল রাস্তা ব্লক করিয়া, আর আরেকজন হাসপাতালে অসুস্থ রোগী লইয়া যাইতে যাহিয়া প্রতিবাদ করিলো, এমনি আমাদের সমমনা ভ্রাতা ৫৭ ধারায় মামলা দিল করিয়া, কিছু দিবস পূর্বে, এক সরকারী অফিসার অকৃত্রিম দেশপ্রেম দেখালো, উহা দেখিয়া গা জ্বলিয়া হৃদকম্প বন্ধ হইয়া যাইতেছিল আমাদের সমমতের এক ভাইয়ার, তিনি দিলেন ঠুকিয়া ছবি বিকৃতির অভিযোগে ৫৭ ধারায় মামলা, অদ্য দেখিয়া থাকি কেউ ফেসবুকে কিছু লিখিলে বা বলিলেই ধরাইয়া দিতাছি মামলা ঠুকিয়া।

সদ্য তো আমাদের মনোভাবের এক শিক্ষক, উদার মনের আরেক শিক্ষকের উপর করিল মামলার হামলা, কারণ সে তাহার ফেসবুকে জ্ঞান বিতরণ করিতেছিল। আরে জ্ঞান দান করিবি শ্রেণী কক্ষে ছাত্রদের, ও না ছাত্রদের আবার নীতি জ্ঞান দেয়া সঠিক হইবে না, কারণ ইহাতে আবার কাহার কোন অনুভূতিতে লাহিয়া যায়, সে তখন আবার দিবে ঠুকিয়া মামলা। ছাত্রদিগের জ্ঞান দান করিতে হইবে প্রাইভেট পড়ানোর ক্ষণে। বাসায় বউ-বাচ্চা ও কাজের লোককে জ্ঞান দিবে। সমস্ত মেধা ব্যয় করিতে হইবে তেল-তোষামোদিতে। কেন রে বাবা ঘরের খাইয়া বোনের মোষ তাড়াইবি। চাকরি টিকিইয়া রাখিতে কি আর সঠিক দায়িত্ব পালন করিতে হয় নাকি? লাগিবে শুধু জায়গামত তেল আর তোষামোদি, সাথে দরকার ৫৭ ধারা। ক্ষমতাবান হুজুরদের তেল মর্দনের সর্বশ্রেষ্ঠ পন্থা যদিও মাঝে মধ্যে ব্যাক ফায়ার করিয়া থাকিতেছে।

৫৭ ধারা যদি নির্বাচনে বিজয়ী হইতে অসুবিধা করিবে বলিয়া অনুভূত হয় তাইলে কিন্তু তা বিরাট ভাবিবার বিষয়। অগাস্ট মাসের মধ্যে কিছু একটা ভাবিবেন হুজুর। নির্বাচনের আগে কেহ যেন উচিত কথা কইতে না পারে। নির্বাচন টাইম পার হইলে না হয় আবার অন্য নামে ৫৭ ধারা আনা যাইবে। নির্বাচনের পর কাউরে টু শব্দ করিবার ক্ষমতা রহিত করিতে হইবে। দরকার হইলে চৌদ্দগুস্টির নাম ধরিয়া ধরিয়া মামলা প্রদান করিতে হইবে। আসামীর পক্ষে যেন কেহ টু শব্দ করিতে না পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফাহমিদুল হকের বিরুদ্ধে ৫৭ ধারায় মামলা করেছিলেন অপর শিক্ষক আবুল মনসুর আহমেদ।

আমার কিন্তু মনটা উটাচন হইয়াছে ৫৭ ধারা বাতিলের কানাঘুষা শুনিয়া। হায় হায় জুজুর ভয় আর থাকিবে না। তাইলে কি উচিত কথাওয়ালা কথা কইয়া আমাদের পিত্তথলি জ্বলাইয়া দিবে। উফ ভাবতেই কষ্ট লাগিতেছে, আমজনতা কথা কইতেই থাকিবে, ক্ষমতাবান, টাকাওয়ালা, পুলিশ আর্মি রাজনীতিক কিছুই মানিবে না। উফ দেশে এমনই টেকা দায়, যানজট, দুর্নীতি, অনিয়ম অবিচারে তাহার উপর যদি সবকিছুতেই আমজনতা অবিরত কথা বলিতে শুরু করে তাহা হইলে কি হইবে।

মাননীয় আইন প্রণয়নকারী হুজুরবৃন্দ, ভাবিয়া করিবেন কাজ, করিয়া ভাবিবেন না। সমস্যা কি অনুধাবন করিয়াছেন, আপনারা যারা আইন প্রণয়নে নিয়োজিত, তাহার অধিকাংশ আবার বিদ্যার জাহাজ কিনা তাই আপনাদিগের গৃহিত যেকোন পদক্ষেপে ভয়ই ধরিয়া যায়। আহা সদ্য আমাদের মাননীয় এক মন্ত্রী মশাই, বিচার বিভাগ সম্পর্কে যে বানী দিলেন শুনিয়া তো আমার হৃদকম্প বন্ধ হইবার জোগার, আহা এমনতর বানীই আমাদিগের প্রধানমন্ত্রীকৃত সকল সুকর্ম মলিন করিয়া দেয়। আপনাদিগের এহেনও বানী সুচ্চোরিত হয়ে ধুলায় লুটাই তাহার সকল অর্জন। সমর্থক হইয়াও মাঝে মাঝে আপনাদিগের ন্যায় উদ্ধত কিছু ব্যক্তিকে বঙ্গোপসাগরে নিক্ষেপের অভিলাষ জন্মে মনের কোনে। যদিও আমি আপনাদেরই একান্ত অনুগত তোষামোদকারী।

অনেক ভাবিলাম বিরলে বসিয়া, নাস্তিক বন্ধে ৫৭ ধারা করা হইয়াছিল, নাস্তিকতা কি দেশে বন্ধ হইয়াছে? নাকি এখনো চালু আছে, মনে হয় নাই। যে হারে দেশে ধর্মের প্রয়োগ হইতেছে, তাতে মনে হইতেছে না দেশে আর নাস্তিক অবশিষ্ট রহিয়াছে, সকলে সম্ভবত আকিকা দিয়া আস্তিক হইয়া গিয়াছে। না হয় দেশ ছাড়িয়া গিয়াছে। হৃদমাঝে দুঃখ জাগিয়া ওঠে, আপন দেশে টিকিতে পারিতেছি না, জান হারানোর ভয়ে অন্য দেশে যাইয়া আশ্রয় লইতে হয়। আহা কেন কোন আইন নাই আপন দেশ ছাড়িয়ে না যাইবার। আপন দেশে প্রান না থাকিবার ভয় বন্ধে কি কোন আইন হইবে? কোন কারনে যদি অন্য দল সরকারে আসিয়া পরে, তাহলেই যেন আমাদিগকে দেশ ছাড়িয়া যাইতে না হয়।

আমাদের নেত্রী কত কিছু করিতেছেন দেশ আগাইয়া নিতে, তার সমস্ত অর্জন মিথ্যে করিয়াদিতেছি আমাদের অতিভক্তির তেলে। তার চারপাশে এমন করিয়া ঘিরিয়া রাখি, যাহাতে কোন অন্যায়ের সংবাদ তাহার কর্ণকুহরে পৌছাইতে না পারিতে পারে। তথাপি ফাঁক পাইয়া পৌছাইয়ে যায়। আর তখনই যাত্রা নাটকে বিবেকের মত আমাদিগেরও বিবেক জাগিয়া থাকে। আমাদিগের হায় হায়ে দেশ কাঁপিয়া উঠিতে থাকে। আমাদিগের নেত্রী না জানিলে আমাদিগের কন্ঠ থামিয়া থাকে, আমাদিগের বিবেকও ঘাপ্টি মারিয়া থাকে। আমাদিগের মত ধামা ধরা তোষামোদিরাও মাঝে মাঝে বিবেক দ্বারা জাগিয়া উঠি, যখন নেত্রীর খুব নিকটের কিছু মানুষের উচ্চ লেভেলের তেলবাজি দেখিয়া থাকি, আমরাও অভিভুত হইয়া পরি। আর ভাবি ওহ আল্লাহ, তাহাদের মত উচ্চ লেভেলের তেলবাজি শিখিতে আরো সাতবার জন্ম লইতে হইবে। যাক সাতবার জন্ম লইবার সাধ আর নাই, তাহাদের মত শৈল্পিক তেলবাজি পারিবার সাধ্য বিধাতা দেন নাই আমাদিগকে। দিয়াছে সব কিছু নিরবে দেখিয়া সহ্য করিয়া যাইবার অপার্থিব শক্তি।

আমাদিগের মত ৫৭ ধারার মামলাবাজরা যতই খুশি থাকি এই ধারা দিয়া অপছন্দের মানুষকে হয়রানী করিতে, কিন্তু আবার পাছে ভয় জাগে, আমাদের কৃতকর্মের ফল না জানি পুরা দলের উপর যাইয়া পরে। আমজনতা রাগে দুঃখে, ঘৃণায় যদি মুখ ফিরাইয়া নেয়, তাহলে দেশে থাকায় মুশকিল আম্মাদিগের। অপর দলের তাঁবেদারগণ আবার আমাদিগের ৫৭ দ্বারা হয়রানি করিবে। তাহা ভাবিয়া যেকোন মূল্যে সম্পদের পাহাড় গড়ে ফেলিতেছি যাহাতে দুঃসময়ে বিদেশ গিয়ে আরাম-আয়েশে সাত পুরুষ বসিয়া খাইতে পারি। পরের জায়গা পরের জমি ঘর বানাইয়া আমি রই, আমিই তো পরের সব কিছুর মালিক হই।

আমার বিরুদ্ধে কিছু বলিবেন ভাবিতেছেন, ভুলেও ভাবিবেন না। আমি কিন্তু ৫৭ ধারা ভালবাসি। দিবো হুট করে আপনার নামে ভাবিবার দায়ে ৫৭ ধারার আইনের রশি।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)