জামায়াত-শিবিরের নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রায় পঙ্গু হতে বসা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সাইফুর রহমান বাদশা একটি চাকরির জন্য এখন দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তার চাকরির ব্যবস্থা করে দেবেন-এমন আশ্বাস দিলেও দুইমাস পর এখন বাদশার ফোনই ধরেন না তারা। এমনকি দেখা করতে গেলেও ভিড় ঠেলে সুযোগ মেলে না কথা বলার।
গত ১১ জুন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কাছে খোলা চিঠি লিখে ‘যেকোনো’ একটি চাকরির জন্য আবেদন করেছিলেন বাদশা। বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হবার পর, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে তা ভাইরাল হয়।
এর দুইদিন পর ১৩ জুন সংগঠনের বর্ধিত সভা ও প্রশিক্ষণ কর্মশালার শেষ দিন কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বাদশার চাকরির ব্যবস্থা করে দেবেন বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু এরপর প্রায় দুই মাস পেরিয়ে গেলেও বাদশার খোঁজ কেউ নেননি। এখনও চাকরি পাননি বাদশা।
এ বিষয়ে শনিবার সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতা চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, চাকরির আশ্বাস দেয়া হলেও আমাকে এখনও কোনো চাকরির ব্যবস্থা করে দেয়া হয়নি। আমি বর্তমান কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে দেখা করে তাদের কাছে জীবন বৃত্তান্ত (সিভি) জমা দিয়েছিলাম। তখন তারা বলেছিলেন, “চেষ্টা করে দেখবেন।”
“তাদের সঙ্গে শেষবার দেখা করার পর এক মাস পেরিয়ে গেলেও চাকরির ব্যবস্থা করতে অসমর্থ হওয়ায়, আমি তাদের সঙ্গে পুনরায় দেখা করার চেষ্টা করতে থাকি। কিন্তু তারা আমার ফোন ধরেননি। স্বশরীরে উপস্থিত হয়েও দেখা করতে পারিনি। এখনও আমি তাদের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। চাকরি দিতে চেয়ে দুই মাসেও তা দিতে না পারলে তাহলে আশ্বাস দেয়া হল কেন?”
২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারী জামাত-শিবিরের নির্মমতার শিকার হন বাদশা। ওই দিন জামায়াত-শিবিরের অতর্কিত হামলায় নিহত হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের কর্মী গণিত বিভাগের ছাত্র ফারুক হোসেন। আর বাদশা ও ফিরোজ নামের দুই কর্মীর হাত পায়ের রগ কেটে দেয়া হয়। এছাড়াও কুপিয়ে আহত করা হয় ১৫-২০ জন নেতা কর্মীকে। মারাত্মক আহত বাদশা দীর্ঘদিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে কোন মতে বেঁচে ফিরলেও, চিরদিনের জন্য পঙ্গু হয়ে যান তিনি।
গত জুন মাসের ১৩ তারিখে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) অডিটরিয়ামে ছাত্রলীগের বর্ধিত সভা ও প্রশিক্ষণ কর্মশালা শুরু হয়। ওই কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সংগঠনটির সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ‘অপকর্ম’ থেকে দূরে রাখতে টাকা, চাকুরি- যা দরকার তার ব্যবস্থা করে দিবেন বলে আশ্বাস দেন।
এমন ঘোষণার পর তার কাছে চাকরি চেয়ে খোলা চিঠি দেন বাদশা। ওই চিঠিতে নিজের চরম দুর্দশা এবং সংগ্রামের বিষয় তুলে ধরেছিলেন তিনি।
টানা দুইদিনব্যাপী ওই কর্মশালার শেষ দিনের আলোচনার ফাঁকে সাইফুর রহমানের চাকরির বিষয়টি সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে তুলে ধরেছিলেন সংগঠনের শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।
যোগ্যতা অনুসারে তাকে যথাযথ চাকরির ব্যবস্থা করে দিতে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন। ওইদিন সেখানে সংগঠনের সাবেক সভাপতি লিয়াকত শিকদার, প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সহকারি সাইফুজ্জামান শিখরসহ বিভিন্ন ইউনিটের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তারা ফোন রিসিভ করেননি।