ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যে স্কুলের চূড়ান্ত পরীক্ষায় ফেল করায় আত্মহত্যা করেছে ২৩ শিক্ষার্থী। গত এপ্রিলে তাদের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হলে এসব শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়। স্বপ্ন ভঙ্গের কারণে হতাশায় তারা আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় বলে পরিবারের সদস্যরা দাবি করেছেন।
ভারতে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য স্কুলের চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফল খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই শিক্ষার্থীরাও এই পরীক্ষা খুব গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে থাকে। কিন্তু সম্প্রতি এই পরীক্ষায় ফেল করার কারণে অনেক শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার বিষয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন অভিভাবকরা। বিতর্কে উঠেছে ঘোষিত ফল নিয়ে।
কিন্তু কেন এমন ঘটছে? কেন ফলাফল এমন হচ্ছে? আর শিক্ষার্থীরাই কেন আত্মহত্যা করছে, সেই বিষয় তুলে ধরেছেন বিবিসির তেলেঙ্গানা প্রতিনিধি দিপ্তি বাথিনি।
বিষপানে আত্মহত্যা করা ১৯ বছর বয়সী ভেন্নেলার ভাই ভেঙ্কটেশ বলেন, গত ১৮ এপ্রিল ভেন্নেলার চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করে। এতে দেখা যায় ভেন্নেলা ফেল করেছে। সে এই ফল মেনে নিতে না পেরে বিষ পান করে। তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেয়া হয়। হাসপাতালে নেয়ার পথেই সে বারবার বলতে থাকে, ‘‘আমার পাস করা উচিত ছিল’’। কিন্তু হাসপাতলে নেয়ার পর তার মৃত্যু হয়।
ভেন্নেলাকে আশ্বস্ত করা হয়েছিল যে, সে আবার পরীক্ষা দিবে বা ফলাফল পুনরায় মূল্যায়ন করা হবে। কিন্তু সেই সুযোগ আর হলো না।
ভেন্নেলার মতো অনেক শিক্ষার্থীই বেছে নিচ্ছে এই পথ। একেকটি ঘটনা কেড়ে নিচ্ছে একেকটি পরিবারের স্বপ্ন। তেলেঙ্গানায় এবছর তিল লাখ ২০ হাজার শিক্ষার্থী চূড়ান্ত পরীক্ষায় ফেল করে। ভেন্নেলা তাদেরই একজন। তেলেঙ্গানা শিক্ষা বোর্ডের দেয়া সিলেবাসেই তারা পরীক্ষায় বসেছিল।
ভারতে স্কুলের চূড়ান্ত পরীক্ষা শেষ করেই শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। স্কুলের ফলাফল বের হওয়ার আগেই অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে থাকে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার পরও যদি কোন শিক্ষার্থী স্কুলের চূড়ান্ত পরীক্ষায় ফেল করে তবে সে আর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবে না।
এজন্যই শিক্ষার্থীরা ফেল করায় বেশি হতাশ হযে পড়ছে। যার শেষ পরিণতি ঘটছে তাদের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা ফল পুনর্মূল্যায়নের দাবি তুলেছেন। তারা বলছেন, পরীক্ষায় নাম্বার দেয়া এবং ফল দেয়ার ক্ষেত্রে ভুল হচ্ছে। রাজ্যজুড়েই বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়।
শিশু অধিকার রক্ষাকারী একটি গোষ্ঠী এ বিষয়ে আদালতে আবেদন করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে যেসব শিক্ষার্থী ফেল করেছে তাদের উত্তর পুনর্মূল্যায়নের নির্দেশ দেন আদালত। গত ২৭ মে নতুন করে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। এতে দেখা যায়, আগের ঘোষিত ফলাফলে ফেল করা ১১শ ৩৭ জন শিক্ষার্থী নতুন ফলাফলে পাস করেছে। এদের মধ্যে একজন শিক্ষার্থী আগের ফলাফলে শূন্য পেয়েছিল, কিন্তু নতুন ফলাফলে সে পেয়েছে ৯৯। আবার প্রথম ফলাফলে পাস করা অনেকে দ্বিতীয়বারের ফলাফলে ফেল করেছে।
এই কিতর্কের প্রাণকেন্দ্রে রয়েছে বেসরকারি সফটওয়্যার কোম্পানি গ্লোবারো টেকনোলজি। ২০১৭ সালে রাজ্যের ৯ লাখ ৭০ হাজার শিক্ষার্থীর পরীক্ষা পরিচালনার দায়িত্ব পায় তারা। এছাড়া চূড়ান্ত ফল প্রস্তুত করার দায়িত্বও পায় তারা।
রাজ্যের শিক্ষা বোর্ড গ্লোবারেনাকে আউটসোর্সিংয়ের ভিত্তিতে এই দায়িত্ব দিয়েছে। শিক্ষা বোর্ড জানায়, শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার ঘটনা ফল প্রকশের যান্ত্রিক ত্রুটি বা প্রক্রিয়ার সঙ্গে জাড়িত নয়।
তবে গ্লোবারেনা ভুলের কথা স্বীকার করেছে। গত এপ্রিলে গ্লোবারেনার প্রধান নির্বাহী ভিএসএন রাজু বিবিসিকে বলেন, আমরা বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করি। যেসব ঘটনা ঘটেছে তা দুঃখজনক। আমরা ভুল সংশোধন করেছি।