ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় আন্তর্জাতিক নাট্য উৎসবে অংশ নিচ্ছে ‘সোনাই মাধব’। লোক নাট্যদল ১২ জানুয়ারী উৎসবে অংশ নিতে দলীয় প্রধান এবং শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর নেতৃত্বে ৪০ সদস্যের দল নিয়ে ঢাকা ছাড়বে। ১৪ জানুয়ারী মঞ্চস্থ হবে নাটকটি।
এস.বি. পার্ক সার্বজনীন এর আয়োজনে আগামি ১১-১৪ জানুয়ারি চার দিনব্যাপী ‘২য় আন্তর্জাতিক নাট্য উৎসব’ অনুষ্ঠিত হবে। উৎসব উদ্বোধন হবে ১১ জানুয়ারি ২০১৮, সন্ধ্যা ৬টায়, উদ্বোধন করবেন শ্রীমতি ঊষা গাঙ্গুলী। উৎসবে ভারতের ৪টি, বাংলাদেশ ও ব্রাজিলের নাটক প্রদর্শিত হবে।
৯৩ সালে ঢাকার মঞ্চে প্রথম মঞ্চস্থ হয় ময়মনসিংহ গীতিকা অবলম্বনে পদাবলী যাত্রা ‘সোনাই মাধব’। উৎসবে কলকাতার সুদীপ ভট্টাচার্য্য মঞ্চ (বেহালা শরৎ সদন) এ মঞ্চায়ন হবে।
লিয়াকত আলী লাকীর পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় নাটকে ব্যবহৃত গানের সুরারোপ করেছেন দীনেন্দ্র চৌধুরী ও লিয়াকত আলী লাকী ।
নাটকে সোনাই চরিত্রে অভিনয় করেছেন রোকসানা আক্তার রূপসা এবং মাধব চরিত্রে অভিনয় করেছেন মো. জাহিদুল কবির লিটন। এছাড়া ভাবনা চরিত্রে অভিনয় করেছেন লিয়াকত আলী লাকী। অন্যান্য চরিত্রে রয়েছেন আজমেরি এলাহী নীতি, উম্মে মরিয়ম রুমা, কিশোয়ার জাহান, মো. রওশন হোসেন, সূচিত্রা রানী সূত্রধর, আব্দুল্লাহেল রাফি তালুকদার প্রমুখ।
নাটকের কাহিনীতে দেখা যায় দশ বছর বয়সে রূপসী সোনাই পিতৃহারা হয়ে মা সহ মামা ভাটুক ঠাকুরের বাড়ি দীঘলহাটিতে আশ্রয় গ্রহণ করে। দেখতে দেখতে সোনাই বার বছরে উপনীত হয়। চারদিকে তার রূপের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে এবং প্রতি মাসেই বিয়ের প্রস্তাব আসতে থাকে। কিন্তু সবদিক পছন্দ না হওয়ায় মা ও মামা কোন প্রস্তাবেই সম্মত হচ্ছিলেন না। একদিন মাধবের সঙ্গে নদীর তীরে সোনাইর দৃষ্টি বিনিময় হয়। পরে হয় পত্র বিনিময় ও প্রণয়।
এদিকে দুর্জন বাঘরার মারফত সোনাইয়ের রূপ-গুনের খবর পেয়ে দেওয়ান ভাবনা ভাটুক ঠাকুরের কাছে সোনাইয়ের বিয়ের প্রস্তাব দেয়। সঙ্গে বায়ান্ন পুরা জমি ও অন্যান্য সম্পদ প্রদানের প্রলোভন। অত:পর মামা যজমানী ব্রাহ্মণ রাজী হয়ে যায়। দেওয়ান ভাবনার চরেরা জলের ঘাট থেকে সোনাইকে তুলে নিয়ে যায়। পথে মাধবের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও যুদ্ধ হয়। মাধব দেওয়ান ভাবনার চর ও দাড়ী-মাঝিদের পরাজিত করে সোনাইকে উদ্ধার করে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করে।
কিন্তু দেওয়ান ভাবনা ক্ষিপ্ত হয়ে মাধবের পিতাকে ধরে নিয়ে যায়। পিতাকে মুক্ত করতে গেলে দেওয়ান ভাবনা মাধবকে বন্দি করে তার পিতাকে মুক্ত করে দেয় এবং বলে যে, সোনাইকে ফেরত দিলে সে মাধবকেও ছেড়ে দিবে। একমাত্র পুত্র মাধবকে মুক্ত করে বংশরক্ষার প্রয়োজনে শ্বশুড়ের কথায় সোনাই দেওয়ান ভাবনার কাছে চলে যেতে রাজী হয়।
সোনাইকে পেয়ে দেওয়ান ভাবনা মাধবকে মুক্তি দেয়। কিন্তু গভীর রাতে দেওয়ান ভাবনা সোনাইয়ের সঙ্গে মিলনের আশায় ‘বারবাংলার’ ঘরে এসে দেখে সোনাই সঙ্গে আনা বিষের বড়ি খেয়ে খাটের উপর নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে আছে। প্রাণবন্ধু মাধবকে বাঁচাতে এবং দুশমন ভাবনার হাতে নিজেকে না তুলে দিতে সোনাইয়ের আত্মাহুতি যুগযুগ ধরে চিরায়ত বাংলাকে কাঁদিয়ে এসেছে।।