চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

ভাইরাসের বিরুদ্ধে কতটা কার্যকর মাস্ক?

সাধারণত নতুন কোনো ভাইরাসের খবরে মানুষের মধ্যে মাস্ক ব্যবহার বেড়ে যায়। করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। চীনের পাশাপাশি সারাবিশ্বেই বর্তমানে মাস্কের ব্যবহার বেড়েছে। কিন্তু ভাইরাসের বিরুদ্ধে এ মাস্ক কতটা কার্যকর?

ভাইরাস আক্রান্তদের নিয়ে যে ভাইরোলজিস্টরা কাজ করেন, তারা মাস্কের কার্যকারিতা বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তবে হাত থেকে মুখে ভাইরাস ছড়ানো রোধ করতে সক্ষম মাস্ক। সে প্রমাণ পেয়েছেন গবেষকরা।

প্রায় দুইশ’ বছর আগে ১৮ শতকে হাসপাতালগুলোতে প্রথমবারের মতো সার্জিকাল মাস্ক ব্যবহার শুরু হয়। তবে সাধারণ জনগণের মধ্যে মাস্কের ব্যবহার শুরু ১৯১৯ সালে। ওই সময় স্প্যানিশ ফ্লু ছড়িয়ে পড়ে। এই ফ্লুতে সারাবিশ্বে প্রাণ হারিয়েছিল প্রায় ৫ কোটি মানুষ।

বাতাসে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার জন্য সার্জিকাল মাস্ক তেমন কার্যকর নয় উল্লেখ করে সেন্ট জর্জের ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের ড. ডেভিড ক্যারিংটন বিবিসিকে বলেন,  ‘বাতাসেই তো ভাইরাস ছড়িয়েই পড়ে। এই মাস্কগুলো খুবই ঢিলেঢালা, কোনো এয়ার ফিল্টার নেই। আবার চোখটাও খোলা থেকে যায়। তবে এটা হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসের সংস্পর্শে আসা রোধ করে। আর হাত থেকে মুখে ভাইরাস যাওয়া খানিকটা রোধ করবে।’

২০১৬ সালে নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি গবেষণা বলছে, মানুষ ঘণ্টায় অন্তত ২৩ বার তার মুখে হাত দেয়।

ইউনিভার্সিটি অব নটিংহামের মলিকিউলার ভাইরোলজির অধ্যাপক জোনাথন বল বলেন, ‘এই ফেসমাস্কগুলো ইনফ্লুয়েঞ্জা ইনফেকশন রোধে বেশ কার্যকর। নিজেই একটা বিশেষায়িত বায়ু পরিস্কারক হিসেবে কাজ করা শ্বাসযন্ত্র সম্ভাব্য বিপজ্জনক বাতাসে ছড়ানো উপাদানগুলো থেকে আমাদের শরীরকে রক্ষা করে।’

‘‘কিন্তু যখন আপনি সাধারণ মানুষের মধ্যে মাস্কের কার্যকারিতার বিষয়ে নজর দেবেন, তখন তেমন জোরালো তথ্য পাবেন না। ফলে দীর্ঘ সময় সেটা পরে থাকাও কঠিন।’’

মাস্কের চেয়ে সাধারণ পরিচ্ছন্নতা মেনে চলাটাই বেশি কার্যকর মন্তব্য করে কুইন্স ইউনিভার্সিটি বেলফাস্টের ওয়েলকাম-ওলফসর ইন্সটিটিউট ফর এক্সপেরিমেন্টাল মেডিসিনের ড. কর্নর বামফর্ড বলেন, ‘হাঁচি দেওয়ার সময় মুখ ঢাকা, হাত ধোয়া, হাত না ধুয়ে মুখে হাত না দেয়া ইত্যাদি নিয়ম মেনে চললেই শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাস আক্রমণের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।’

এনএইচএসের মতে ফ্লুয়ের মতো ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়ার সেরা উপায়গুলো হলো, হালকা গরম পানি ও সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, চোখ ও নাকে যতটা সম্ভব কম হাত দেওয়া, সুস্থ জীবন যাপন করা।

অনেকে ফেসমাস্ক ব্যবহার উপকারী ভাবলেও এর সঙ্গে একমত নন পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ডের হেড অব ইমার্জিং ইনফেকশন অ্যান্ড জুনোজেস ড. জেক ডানিং।

তিনি বলেন, ‘সত্যি বলতে, এই মাস্ক ব্যবহারে ক্লিনিক্যাল উপাদানের তেমন কোনো বিস্তৃত উপকারের তথ্য-প্রমাণ মেলেনি। মাস্ক ঠিকভাবে পরতে হবে, মাঝে মাঝেই বদলাতে হবে আবার ঠিকভাবে সেটা খুলতেও হবে তাহলে ঠিকমতো কাজ করে।’

‘‘আবার লম্বা সময় ধরে ফেসমাস্ক ব্যবহার করলে তার কার্যক্ষমতা কমতে থাকে বলে উঠে এসেছে গবেষণায়। তার থেকে বরং ব্যক্তিগত ও হাতের পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর দিলেই উপকার পাওয়া যাবে বেশি।’’

সম্প্রতি চীনের উহান শহরে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে করোনা ভাইরাস। পরে তাতে আক্রান্ত হয় অন্তত ২৫টি দেশের মানুষ। এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে অন্তত ২০ হাজার মানুষ। শুধু চীনেই মৃত্যু হয়েছে ৪ শতাধিক মানুষ।