ব্রিটেনে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যে পরিমাণ মানুষ মারা যায় তার প্রায় ১৫ গুণ বেশি মানুষের মৃত্যু হয় পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়ে। পারিবারিক নির্যাতনবিরোধী প্রচারণায় কাজ করা একদল অ্যাক্টিভিস্ট পরিচালিত গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
এই কারণেই এ ধরনের সমস্যা মোকাবেলার জন্য পুলিশকে আরও বেশি অর্থ বরাদ্দ দেয়া প্রয়োজন বলে দাবি করেছেন তারা।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম গার্ডিয়ান জানিয়েছে, পুলিশ, হাসপাতালসহ বিভিন্ন আনুষ্ঠানিক সূত্র থেকে নেয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে, যার মধ্য দিয়ে বেরিয়ে এসেছে এই ভীতিকর চিত্র।
অ্যাক্টিভিস্টদের দাবি, সন্ত্রাসবাদ ঠেকাতে যেমন পুলিশের জন্য বরাদ্দ নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়, তেমনি পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে ব্রিটিশ সরকারের উচিত পারিবারিক নির্যাতন ও সহিংসতা রোধেও বড় অংকের নির্দিষ্ট বাজেট বরাদ্দ করা, যেটি শুধু এই সমস্যা মোকাবেলার জন্যই ব্যয় হবে।
সরকারিসহ বিভিন্ন স্বীকৃত সূত্র থেকে পাওয়া উপাত্ত অনুসারে, ২০০ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসে পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়ে ১,৮৭০ জন মারা গেছে; যেখানে জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদের কারণে মৃত্যুর সংখ্যাটি ১২৬। পারিবারিক নির্যাতনে নিহতদের বেশিরভাগই নারী।
শুধু তাই নয়, অ্যাক্টিভিস্টদের দাবি, প্রতি বছর আনুমানিক আরও ৪শ’ জন করে ঘরোয়া এসব নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেন।
ওয়েলসের সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি প্লাইড কুমরি’র স্বরাষ্ট্র বিষয়ক মুখপাত্র লিজ স্যাভিল রবার্টস এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, এখন দেশে পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ ও প্রতিকারের জন্য ব্যয় বিপুল পরিমাণে বাড়ানো প্রয়োজন।
‘এটি একই সঙ্গে একটি জঘন্য ও লজ্জাকর একটি বিষয় যে, ২০০০ সাল থেকে ৬ হাজারের বেশি মানুষ, যার বেশিরভাগই নারী, হয় পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা গেছেন অথবা আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন,’ বলেন তিনি।
ঘরোয়া নির্যাতন মোকাবেলায় কী পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে, পুলিশ তা প্রকাশ করতে রাজি না হলেও গবেষণাকারী দলটির দাবি, সাম্প্রতিককালে এই বরাদ্দের পরিমাণ কমিয়ে আনা হয়েছে।
জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলার দায়িত্বে থাকা গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর জন্য বার্ষিক ২.৬ বিলিয়ন পাউন্ডের বাজেট নির্ধারিত রয়েছে।
স্যাভিল রবার্টস বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে লড়াইয়ে নির্দিষ্ট বরাদ্দ রয়েছে, অথচ নারী সহায়তা সেবা এবং এ সংক্রান্ত পুলিশি বরাদ্দ আরও কমিয়ে ফেলা হয়েছে। সন্ত্রাসীদের হামলায় যে পরিমাণ মানুষ নিহত হয় তার ১৫ গুণ বেশি মারা যায় নিজ সঙ্গীর হাতে।’
‘সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমের বরাদ্দ কমানো হয়নি, সেটা ঠিকই আছে। কিন্তু পারিবারিক নির্যাতন রোধ বিষয়ে বাজেট বাড়ানো জরুরি এবং এই সমস্যাটিকে গুরুত্ব দিয়ে বরাদ্দ বজায় রাখাটা পরবর্তী সরকারের জন্য দরকার,’ বলেন তিনি।
পুরো যুক্তরাজ্য জুড়ে পারিবারিক নির্যাতন ও সহিংসতা বাড়ছে, এমন একটি আশঙ্কা ছড়িয়ে পড়ার পরই মিলিতভাবে গবেষণাটি পরিচালনা করে সংশ্লিষ্ট অ্যাক্টিভিস্টদের কয়েকটি সংগঠন। গবেষণায় দেখা যায়, ২০১৭ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে দেশটিতে সার্বিকভাবে নারী নির্যাতন বিষয়ক সহায়তা সেবার চাহিদা বেড়েছে ৮৩ শতাংশ।
অথচ সেবার সরবরাহ উল্টো প্রায় ৫০ শতাংশ কমে গেছে। কেননা সরকারি হিসাব মতে, যুক্তরাজ্যে প্রতি বছর প্রায় ৬৬ বিলিয়ন পাউন্ড ব্যয় হয় পারিবারিক নির্যাতন খাতে।
গড়ে প্রতি ৩০ সেকেন্ডে একটি পারিবারিক নির্যাতনের অভিযোগে জরুরি সহায়তা চেয়ে ফোন পায় ব্রিটিশ পুলিশ। লন্ডন মেয়রের পুলিশিং অ্যান্ড ক্রাইম অফিসের দেয়া তথ্য অনুসারে, শুধু লন্ডনেই ২০১১ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ঘরোয়া নির্যাতনের অপরাধ বেড়েছে ৬৩ শতাংশ।
কিন্তু এসব ঘটনায় মামলার হার কমে যাচ্ছে। ফলে বহু অপরাধী থেকে যাচ্ছে পুলিশের নাগালের বাইরে।