চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

ব্রিটিশদের বেঈমানির পরীক্ষা!

এক আফগান যুবক ইংল্যান্ডে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছিলো শরণার্থী হিসেবে। ইংল্যান্ড তাকে ফিরিয়ে দিয়েছে। কে এই আফগান যুবক?

ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি সূত্রে প্রকাশ, ওই যুবক একজন ইন্টারপ্রেটর অর্থাৎ দোভাষী! আফগানিস্তানে ইংল্যান্ডের সৈন্যদের দোভাষী হিসেবে কাজ করেছে এই ছেলে। আফগানিস্তানে তালেবানদের সাথে যুদ্ধ চলছে তখন। না খেয়ে মরার মতো অবস্থা। এই শিক্ষিত যুবক ভেবেছিলো দোভাষীর চাকরিটা জুটলে অন্তত বাবা-মা আর পরিবারের লোকজনকে না খেয়ে মরতে হবে না। কিছুটা নিরাপদেও থাকা যাবে। এছাড়া ভবিষ্যৎও উজ্জ্বল। কারন ব্রিটিশ বাহিনী তাকে কথা দিয়েছিলো – ওরা যখন আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যাবে, তাকে আর তার পরিবারকেও সঙ্গে করে নিয়ে যাবে।

ব্রিটিশ বাহিনীর যেই দলটার সাথে এই যুবক কাজ করতো, সেই দলটা ব্রিটেনে ফেরত আসার আগে, এই যুবক’কে চাকরিচ্যুত করে। এর পরে দলটি ব্রিটেনে ফেরত চলে আসে। এইদিকে ওই যুবক থেকে যায় আফগানিস্তানে। ব্রিটিশ বাহিনী চলে যাবার সাথে সাথেই তালেবান বাহিনী এই যুবকের বাবাকে ধরে নিয়ে যায়। তাকেও ফোন করে বলেছে-যেখানেই তাকে পাওয়া যাবে, হত্যা করা হবে। ব্রিটিশ বাহিনীর সাথে কাজ করার ফল তাকে পেতেই হবে।

এই ছেলে শেষ পর্যন্ত কোন উপায় না দেখে দালাল ধরে লক্ষ টাকা খরচ করে ইউরোপে পারি জমিয়েছে বেঁচে থাকার আশায়। প্রথমে অস্ট্রিয়া, এর পর ইংল্যান্ডে। কিন্তু বেঈমান ব্রিটিশরা এই ছেলের দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করেছে। তারা এই ছেলেকে বলেছে তুমি অস্ট্রিয়ায় ফেরত যাও।

আমি শরণার্থীদের নিয়ে গবেষণা করি। আমি জানি ডাবলিন চুক্তি অনুযায়ী, যে কোন শরণার্থী ইউরোপীয় ইউনিয়নের যে দেশে প্রথম ঢুকবে, সে দেশেরই ওই শরণার্থীর দায় ভার নিতে হবে। ব্রিটিশরা হয়তো সেই নিয়মের দোহাই দিয়ে এই ছেলেকে অস্ট্রিয়া পাঠাতে চাইছে।

কিন্ত এই ডাবলিন চুক্তি তো এখন আর সেভাবে মানা হচ্ছে না। লক্ষ লক্ষ শরণার্থী গতবছর ইউরোপের অনেক দেশে প্রথম ঢুকেছে; এর পর তারা জার্মানি পৌঁছেছে। জার্মানি তাদের অনেককে আশ্রয়ও দিয়েছে।

যেই ছেলে নিজের জীবনের হুমকির কথা মাথায় রেখে কেবল ব্রিটিশ বাহিনীর প্রলোভনে পা দিয়ে তাদের দোভাষী হিসেবে কাজ করলো, সেই ছেলের দায়িত্ব পর্যন্ত ইংল্যান্ড নিতে চাইছে না।

সেই ইংল্যান্ডের নাগরিকরা আজ ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকবে নাকি বের হয়ে যাবে এই জন্য ভোট দিচ্ছে। এই ব্রিটিশরা যখন ইউরোপীয় ইউনিয়নে ঢুকে, তখন ইংল্যান্ডকে বলা হতো ইউরোপের তলা বিহীন ঝুড়ি। ব্রিটিশদের আর্থিক অবস্থা তখন খুবই খারাপ ছিল। ইউরোপীয় ইউনিয়নে যুক্ত হবার পর ইউনিয়নের সব রকম সুযোগ সুবিধা তারা কাজে লাগিয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান গুলো ইউনিয়নের ফান্ড ব্যাবহার করেছে। অবকাঠামো উন্নয়নের ফান্ডও তারা পেয়েছিলো ইউনিয়নের কাছে। এভাবে আস্তে আস্তে তাদের অর্থনীতি আবার ভালো হতে শুরু করে। এই মুহূর্তে পৃথিবীর সব চাইতে শক্তিশালী অর্থনৈতিক শক্তি গুলোর একটি হচ্ছে ব্রিটেন।

এখন যখন এতো বছর পরে ব্রিটিশদের আর্থিক অবস্থা আবার ভালো হয়ে গেছে; তখন তাদের মনে হয়েছে এইবার বের হয়ে যাওয়া যাক-তাই ভোটেরও আয়োজন করা হয়েছে। এমনি এমনি বের হয়ে গেলে আবার আন্তর্জাতিক মহল কি বলে!

ব্রিটেন শেষ পর্যন্ত বের হয়ে যাবে কি যাবে না; সেটা হয়তো আজ রাতেই জানা যাবে। তবে বের হয়ে যাওয়া না যাওয়ার এই “ভোট” আয়োজন করে তারা আরেকবার বুঝিয়ে দিলো কতোটা বেঈমান জাতি এই ব্রিটিশরা!

ইউনিয়নে থেকেও তারা ইউরো গ্রহণ করেনি, সেনজেন যুক্তিতে সই করেনি; এতো কিছুর পরও ইউরোপের দেশ গুলো মেনে নিয়েছিলো।আজ যদি ভোটে তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নে থেকে যাওয়ার জন্যও রায় দেয়, বাদ বাকী ইউরোপের দেশ গুলোর কাছে ঠিক’ই এই বার্তা পৌঁছে গেছে যে-ব্রিটেন যে কোন সময় বিশ্বাস ঘাতকতা করতে পারে।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)