ইংল্যান্ডের মাটিতে আর দিনকয়েক পরই শুরু হয়ে যাবে ক্রিকেট বিশ্বকাপের ব্যাট-বলের মহারণ। বিশ্বযজ্ঞে ২২ গজে দলগত লড়াই যেমন থাকবে, থাকবে লড়াইয়ের ভেতরের লড়াইও, বলা যায় প্রতিপক্ষের সঙ্গে ‘ব্যক্তিগত’ লড়াই!
আইসিসি যার নাম দিয়েছে ব্যাটল অব বিশ্বকাপ। দেখে নেয়া যাক তেমন পাঁচ ব্যাটলের সম্ভাব্যতা, যা নজর কাড়তে পারে বিশ্বকাপে-
তামিম ইকবাল বনাম মুজিব-উর রহমান
বাংলাদেশের ওপেনিংয়ে পরীক্ষিত ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দীর্ঘ সময়ের পরিচিত নাম। সদ্য শেষ হওয়া ত্রিদেশীয় সিরিজে আয়ারল্যান্ডের মাটিতে ধারাবাহিকতা জারি রেখেই বিশ্বকাপের ময়দানে গেছেন। নামের পাশে ১৯৩ ওয়ানডের অভিজ্ঞতা, ১১ সেঞ্চুরি আর ৪৬ ফিফটিতে সাড়ে ৬ হাজারের উপর রান।
অন্যদিকে আসন্ন বিশ্বকাপে আফগানিস্তান দলে রশিদ খানের সঙ্গে অন্যতম ভরসার সঙ্গী স্পিনার মুজিব-উর রহমান। ৩০ আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে ইতিমধ্যেই নিজের ছাপ রেখেছেন এ অফস্পিনার, নামের পাশে ৫১ উইকেট, বয়স বসে ১৮!
দুর্দান্ত তামিমকে বিশ্বকাপে ‘বিভ্রান্তিকর’ মুজিবের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। দুজনের এই লড়াইয়ের ফল ম্যাচের ফলাফলেও প্রভাব ফেলতে পারে। ত্রিদেশীয় সিরিজে দুটি হাফসেঞ্চুরি করেছেন তামিম। একজন বড় ম্যাচের খেলোয়াড় তিনি এবং বাংলাদেশ দল বড় সংগ্রহের ভিত্তি গড়ে তুলতে এ বাঁহাতির উপর নির্ভর করে।
বিশ্বকাপেও দারুণকিছু করতে মুজিবের ঘূর্ণির বিপক্ষে বাধ দিতে হবে তামিমকে। কারণ, আধুনিক ক্রিকেটে অন্য অনেক স্পিনারের চেয়ে অনেকবেশি বৈচিত্র্যপূর্ণ বোলিংয়ে নজর কেড়েছেন আফগান তারকা। বিশেষ করে পাওয়ার প্লে’র সময় রান ফোয়ারা আটকাতে দারুণ কার্যকরী এ তরুণ আফগান।
আবার ইনিংসের শুরুতে দ্রুতগতিতে রান তোলার সক্ষমতার জন্য সুপরিচিত তামিম। এটা এমন এক লড়াই হবে, যেখানে উভয় তারকাই কার্যকরভাবে একে-অন্যর আশা নষ্ট করার চেষ্টা করবেন। সেটা কোন পথে চালু হবে? দেখার অপেক্ষা ফুরোবে ২৪ জুন। যেদিন সাউদাম্পটনে আফগানিস্তানের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।
বিরাট কোহলি বনাম অ্যাডাম জাম্পা
৫০ ওভারের ম্যাচে তিনবার কোহলিকে আউট করেছেন অস্ট্রেলিয়ার স্পিনার জাম্পা। অস্ট্রেলিয়ার স্পিন ভবিষ্যৎ বলা হচ্ছে তাকে। নামের পাশে ৪৪ ম্যাচে ৬০ উইকেট।
অন্যদিকে কোহলি এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা ক্রিকেটার। জাম্পার বিরুদ্ধে কোহলির রেকর্ডও ভালো। ২২৭ ওয়ানডেতে প্রায় ১১ হাজার রান, সঙ্গে ৪১ সেঞ্চুরি ও ৪৯ ফিফটি কোহলির নামের পাশে। বিশ্বকাপে ভারতীয় মহারথীর মুখোমুখি জাম্পা, লড়াইটা দেখতে মরিয়া ক্রিকেটপ্রেমীরা।
সবশেষ সাত দেখায় তিনবার জাম্পার বলে আউট হয়েছেন কোহলি। প্রতিবারই আলাদা আলাদা কায়দায় ভারতীয় অধিনায়ককে বোকা বানিয়েছেন অজি স্পিনার। তবে কোহলির যে ফর্ম-দক্ষতা, তাতে বিশ্বকাপে জাম্পা তাকে কিভাবে বিভ্রান্ত করতে পারেন ক্রিকেট বিশ্বের সেটাই এখন দেখার।
জাসপ্রীত বুমরাহ বনাম জস বাটলার
ওয়ানডেতে এমুহূর্তে বিশ্বের একনম্বর বোলার বুমরাহ! তাকে খেলতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন ব্যাটসম্যানরা। বিশ্বকাপে ভারতীয় দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য তিনি। ৪৯ ওয়ানডেতে ৮৫ উইকেট বুমরাহর নামের পাশে।
অন্যদিকে বাটলার এমুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম মারকুটে ব্যাটসম্যান। ইংল্যান্ডের বড় ভরসা তিনি। মাঠের যেকোনো দিকে বল পাঠাতে সিদ্ধহস্ত। সাউথ আফ্রিকার সাবেক তারকা এবি ডি’ভিলিয়ার্সের পর নতুন ৩৬০-ডিগ্রি হিসেবে উপাধিও পেয়েছেন। ১৩১ ওয়ানডেতে ৮ শতকে সাড়ে তিন হাজার রান নামের পাশে এ ডানহাতি উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যানের।
বুমরাহ নতুন বলের মতো ডেথ ওভারে দারুণ কার্যকর। বৈচিত্র্যময় বোলিংয়ে তার সবচেয়ে বড় অস্ত্র ভয়ঙ্কর সব স্লোয়ার ও ইয়র্কার। যাতে যেকোনো ব্যাটসম্যানকে কাবু করতে পারেন তিনি। আর বাটলার, পেস-স্পিন-মিডিয়াম পেস, সব বলের বিপক্ষেই একইরকম আগ্রাসী।
সদ্যসমাপ্ত আইপিএলের পর পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে ৫০ বলে সেঞ্চুরি করে সক্ষমতার বার্তা দিয়ে রেখেছেন ইংলিশ ব্যাটসম্যান। বুমরাহর বিপক্ষে তার জ্বলে ওঠা, বা বুমরাহর বাটলারের বিপক্ষে চমক দেখানো বোলিং, ক্রিকেটপ্রেমীদের রোমাঞ্চেই ভাসাবে!
কাগিসো রাবাদা বনাম কেন উইলিয়ামসন
বিশ্বের বর্তমান পেস সেরাদের অন্যতম একজন ২৩ বছর বয়সী রাবাদা। আইপিএলে ভালোই দাগ কেটেছেন। সাউথ আফ্রিকার পেস বোলিংয়ের দায়িত্ব তার কাঁধে। ৬৬ ওয়ানডেতে ১০৬ উইকেটের রেকর্ড নিয়ে ডেল স্টেইনের সঙ্গী তিনি।
অন্যদিকে উইলিয়ামসনের নেতৃত্বে যেভাবে, ব্যাটিংয়েও তাকিয়ে নিউজিল্যান্ড। গত বিশ্বকাপে প্রথমবার ফাইনালে উঠলেও হেরে যায় আসরের যৌথ আয়োজক কিউইরা। পেস বনাম জাজমেন্ট লড়াই দেখতে ভালোবাসবেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। ১৩৯ ওয়ানডেতে সাড়ে পাঁচ হাজারের উপরে রান কেনের।
রাবাদা-উইলিয়ামসনের লড়াইকে আইসিসি নানা নাম দিয়েছে। ‘আগুন ও বরফের’ লড়াই। গতি বনাম জাজমেন্টের লড়াই। বাউন্স বনাম রিফ্লেক্স’র লড়াই। কঠোর উদ্দীপনার বিরুদ্ধে মাপা প্রতিক্রিয়া। লড়াইটা এখন মাঠে জমলেই উপভোগ্য।
ক্রিস গেইল বনাম ট্রেন্ট বোল্ট
গেইলকে নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। নতুন বিশ্লেষণ-বিশেষণেরও সুযোগ নেই! সক্ষমতা দেখিয়ে মারকুটে ক্রিকেটের সর্বজনবিদিত নন্দিত ফেরিওয়ালা এ বাঁহাতি ওপেনার। নিজের পঞ্চম এবং শেষ বিশ্বকাপে মাঠে নামবেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওপেনিংয়ের প্রধান ভরসা। ২৮৯ ওয়ানডেতে ১০ হাজারের উপর রান, ২৫ শতক আর ৫১ ফিফটিতে। গত বিশ্বকাপে করেছেন ডাবল সেঞ্চুরি।
বিপক্ষে থাকা নিউজিল্যান্ডের ট্রেন্ট বোল্ট, এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম স্কিলফুল পেসার। কিউইদের পেস দায়িত্ব তার কাঁধে। বাঁহাতি বোল্ট স্কিলফুল বোলিংয়ের অন্যতম উদাহরণ। ৭৯ ওয়ানডেতে নামের পাশে ১৪৭ উইকেট।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠের সবশেষ ওয়ানডে সিরিজ থেকে রান-ফোয়ারার মধ্যেই আছেন গেইল। আইপিএলেও কয়েকটি মারকাটারি ইনিংস খেলেছেন। তবে বল হাতে সুইংয়ের মাস্টার বোল্ট। যেকোনো কন্ডিশনেই তিনি সেরাটা দিতে জানেন। ইংল্যান্ডের কন্ডিশন তো তার সুইং-শিল্পের জন্য এক নিখুঁত পরিপূরকই। গেইল-বোল্টের দেখায় লড়াইটা তাই জমারই আভাস।