বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর খামখেয়ালী সভা নামের সাহিত্য-সংস্কৃতি জগতের প্রথিতযশাদের নিয়ে যে আড্ডার সূচনা করেছিলেন সেই ১৮৯৭ সালে, ১১৫ বছর পর তার আবারও পুনর্জাগরণ হয় এই বাংলাদেশের মাটিতে; ২০১৪ সালে ১৭ জানুয়ারি। রবীন্দ্রনাথের সমৃদ্ধ সাহিত্যকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যেই ঢাকায় খামখেয়ালি সভা’র পথচলা।
আগামীকাল শুক্রবার ১৯ ফেব্রুয়ারি গানে-কবিতায়-আড্ডায় ‘খামখেয়ালী সভা’র দুই বছর পূর্তি উদযাপনে ধারাবাহিক অনুষ্ঠানমালার দ্বিতীয় পর্বে সুধী সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
বুদ্ধিবৃত্তিক ও মানবিক বোধের দৈন্যের এই সময়ে অতীতের যেকোন সময়ের মতো এখনো রবীন্দ্রনাথ অনিঃশেষ প্রেরণার উৎস। রবীন্দ্রমনীষার সবগুলো দিক আজও পরিপূর্ণরূপে আবিষ্কৃত হয়নি বলে মনে করে খামখেয়ালী সভা।
এর সভ্যরা ব্রত রয়েছে বিশ্লেষণমুখী পঠনপাঠনের মধ্য দিয়ে রবীন্দ্রনাথকে নতুন করে আবিষ্কারে। নিজেদের ঋদ্ধ করার পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথের বুদ্ধিবৃত্তিক ও মানবিক চেতনা এবং তার অনিন্দ্য শিল্প ও সৌন্দর্য্য বোধের প্রসারে কাজ করাই এই সভার লক্ষ্য।
গবেষণাধর্মী, অলাভজনক ও কল্যাণমূলক ট্রাস্ট হিসেবে পরিচালিত খামখেয়ালি সভার স্বল্পমেয়াদী লক্ষ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে নিয়মিত আড্ডা, সেমিনার ও কর্মশালার আয়োজন, নতুন লেখক তৈরিতে সহায়তা, নবীনদের আত্মপ্রকাশের ক্ষেত্র তৈরি ইত্যাদি। এছাড়াও রবীন্দ্র লাইব্রেরি ও আর্কাইভকে সমৃদ্ধ করাসহ আরও বেশ কয়েকটি দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য রয়েছে এই সভার।
‘ডাকাতের দল’ নামক সংস্কৃতি জগতের নক্ষত্রদের সংগঠন চিঠির মাধ্যমে কোনো সভ্যের বাড়িতে ডাকাত আগমনের খবর দিয়ে সেই সভ্যের বাসায় আড্ডার হাট বসাতেন। পরবর্তীতে রবীন্দ্রনাথের উদ্যোগে কলকাতায় শুরু হয় সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ক আড্ডা খামখেয়ালী সভা, যেখানে আসর মাতাতেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রমথ চৌধুরী, জগদীশ চন্দ্র বসু, চিত্তরঞ্জন দাস, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, অতুল প্রসাদ, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মতো কিংবদন্তীরা।
এক এক দিন সভা বসতো একেক সভ্যের বাড়িতে। বছর দুয়েক চলে সভাটি। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘ভারতীয় সঙ্গীত সমাজ’ প্রতিষ্ঠা করলে আর রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহে জমিদারি দেখাশুনা করতে চলে এলে বিলুপ্তি ঘটে খামখেয়ালী সভার। রবীন্দ্রনাথের ঠাকুরের স্মৃতি ও ইতিহাস বিজড়িত সেই সভা আবারও স্বনামে গত দুই বছর ধরে আয়োজিত হচ্ছে ঢাকায়।
দুই বছর পূর্তি অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বের শুক্রবারের আয়োজন
খামখেয়ালী সভার দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধারাবাহিক অনুষ্ঠানমালার দ্বিতীয় পর্বে আগামীকাল শুক্রবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) ছায়ানটে সুধী সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। আনন্দঘন এই উৎযাপনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও আবৃত্তিশিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়।
অনুষ্ঠানে সংগীত ও কবিতায় আরও থাকবেন শিল্পী লিলি ইসলাম, বুলবুল ইসলাম, রোকাইয়া হাসিনা নিলী, গোলাম হায়দার, মজুমদার বিপ্লব, জাকির হোসেন তপন, সালমা শবনম ও অভয়া দত্ত।
খামখেয়ালী সভার আহ্বায়ক এবং একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের নিউজ এডিটর মাহমুদ হাশিম অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন। সভাপতিত্ব করবেন সভার পৃষ্ঠপোষক আবিদ.এ.আজাদ। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করবেন সভার সদস্যসচিব ফয়সাল ইবনে জামান।
অনুষ্ঠানে খামখেয়ালী সভার ২০১৫ সালের ১২টি আড্ডা ও আন্তর্জাতিক সেমিনারের প্রাবন্ধিকদের সম্মাননা দেওয়া হবে। সংগঠনের গত দুই বছরের কার্যক্রমের ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হবে অনুষ্ঠানে।
খামখেয়ালী সভার পাঁচ কর্মসূচি
বর্তমানে খামখেয়ালী সভার পাঁচটি কর্মসূচি চলছে। যার মধ্যে রয়েছে মাসিক আড্ডা রবীন্দ্র অধ্যয়নসভা, এক বছর মেয়াদি প্রাক-রবীন্দ্র অধ্যয়নসভা, রবীন্দ্র লাইব্রেরি ও আর্কাইভ, খামখেয়ালী আড্ডায় নামে সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ক উন্মুক্ত আড্ডা। এছাড়াও ভাষা সংগ্রামী ও রবীন্দ্রগবেষক আহমদ রফিকের নামে গবেষণাবৃত্তি ঘোষণা করেছে খামখেয়ালী সভা। আগামীতে খাপছাড়া নামে ছোটদের আড্ডা প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা রয়েছে খামখেয়ালী সভা।
এর আগে অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে গত ২২ জানুয়ারি শিল্পকলা একাডেমিতে রবীন্দ্র শিক্ষাভাবনা বিষয়ে আন্তর্জাতিক সেমিনার হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ভারতের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. অভ্র বসু।
অনুষ্ঠানমালার তৃতীয় ও শেষ পর্বে ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিককে ‘রবীন্দ্রগুণী’ সম্মাননা জ্ঞাপন করা হবে। শেষ পর্ব অনুষ্ঠানের সময় এখনও নিধারণ করা হয় নি।