চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

বেশি কিছু আশা করা ভুল

জীবনের বোধ থেকে মাঝে মাঝে মনে হয়, জগৎ সিংয়ের ‘বেশি কিছু আশা করা ভুল’ গানটি অদেখা এক সত্যকে উন্মোচন করে দিয়েছে। মানুষের বহমান জীবনে স্বপ্ন, আশা থাকে বলেই মানুষ বেঁচে থাকে পৃথিবীতে। আবেগ আর বাস্তবতাতে রোমান্টিক প্রেম, বিরহ, বেদনা, সুখ আনন্দ কেবল ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয় তা কিন্তু নয়। এর সব কিছুই থাকে পরিবার, সমাজ, দেশকে ঘিরে। কারণ একে অপরের সাথে সর্ম্পকযুক্ত। প্রতিটি মানুষ কেবল আলাদা একজন ব্যক্তি নয়। তার চাওয়া কিংবা না পাওয়ার ব্যকুলতা যেমন থাকে নানা প্রেক্ষাপটে, তেমনিভাবে তার কর্মফল অন্যকে প্রভাবিত করে সুফল বা কুফল হিসাবে।
সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের উন্নয়নের পথে মানুষের প্রত্যাশা বহুমাত্রিক। লাল সবুজের এ দেশের অনেক স্বপ্নকে ম্লান করে দিচ্ছে দুর্নীতি। কদিন পরপরই চুক্ষ চড়কগাছ হবার মত দুর্নীতির খবর আলোচিত হয় মানুষের মুখে মুখে। প্রশাসনিক, রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে দুর্নীতি যেভাবে গ্রাস করেছে দেশকে তাতে সাধারণ মানুষ স্বাভাবিক জীবনের স্বপ্ন দেখতে ভয় পায়। আর সুন্দর একটা দেশ পাবে আগামী দিনে এ আশা করা ভুল।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডিজির গাড়ি চালক আবদুল মালেকের চেহারা আর বেশভূষাতে তাকে দুর্নীতিবাজ ভাবতে গিয়ে হোঁচট খেতে হয়। কোন ক্ষমতাবলে একজন গাড়ি চালক এত বিত্তবৈভবের মালিক হয় সে প্রশ্নের উত্তর মানুষ জানতে পারবে কিনা তা বলাবাহুল্য। কেননা এদেশে দুর্নীতিবাজদের শেকড় যাওয়া দুরূহ ব্যাপার। যদিও বা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করেন।
দুর্নীতির ধরন আজকাল হরেক রকম। ত্রান চুরি, বিদেশে প্রশিক্ষণ, বালিশ পর্দা কেনা থেকে শুরু করে ঘুষ বাণিজ্য সবখানেই টাকা উড়ছে। দুর্নীতিবাজদের টাকার পাহাড় দেখে মনে হয় না, এদেশে অভাব আছে।
রাজনৈতিক, প্রশাসনিক কোন সেক্টরে দুর্নীতি কোন অংশে কম নয়। এখন প্রশ্ন হলো এত দুর্নীতি ধরা পড়ার পরেও কেন বোধদয় হচ্ছে না ক্ষমতাধর দুর্নীতিবাজদের। নাকি কাকের মত অন্ধ হয়ে তারা তাদের ব্যক্তিগত সুখ বিলাসে মত্ত। এ আত্নকেন্দ্রিক স্বার্থপর ব্যক্তিদের কারণে সমাজের যে অবক্ষয় হচ্ছে তা বুঝার মত বোধশক্তি এসব দুর্নীতিবাজদের নেই। আইনের জালে এরা বন্দি হলেও আবার আইনই এদের পার করে দিতে পারে সে সম্ভবনাকে উড়িয়ে দেয়া যায় না। তাই এরা সাহস পায় দুর্নীতি করতে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডিজির গাড়ি চালক রাতারাতি সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলেনি। সময়ের সাথে সাথে সে রপ্ত করেছে কোন কর্তাব্যক্তিকে কিভাবে আয়ত্তে রাখতে হয়। আর সে কারণে দুর্নীতি হলো চেইনের মত। সমষ্টিগতভাবে কিছু মানুষ দেশকে প্রশ্ন বিদ্ধ করছে তাদের অনৈতিক কর্মকাণ্ড  মাধ্যমে। প্রকৃতির নিয়মে দেখা যায়, মানুষ বিপদগ্রস্ত হলে বিধাতার কাছে নিজেকে শুধরে নিতে প্রার্থনা করে। ঠিক যেমনটা কোভিড ১৯ কালে করেছে মানুষ। কিন্তু অদৃশ্য এ ভাইরাস প্রমাণ করেছে, মানুষ তার স্বভাব পালটে পারে না। তাই থামেনি কোন অপকর্ম। বরং বাড়ছে দিন দিন।
কারণ মানুষের ভেতরে সেই মূল্যবোধটা হারিয়ে গেছে, যে মূল্যবোধ দিয়ে মানবিকতা, দেশপ্রেম, সচেতনতার শিক্ষা তৈরি হয়। বর্তমান সময়ে দেশের মানুষ দূর্নীতিবাজের খবরে বিচলিত হয় না। কারন তারা জানে সরকারের উন্নয়ন বাজেটের শতভাগ জনগনের সেবায় ব্যয়িত হয় না। তাই যদি হত দেশের দ্বিতীয় বাণিজ্যিক শহর চট্রগ্রাম এখনো জোয়ারের পানিতে ডুবে থাকত না। কিংবা রাস্তা তৈরির পর বছর না ঘুরতেই তা ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে। কোনভাবে কাজ করে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করছে দুর্নীতিবাজরা।
দেশের দুর্নীতিবাজদের নেই খবরের অন্ত নেই। কিন্তু দুর্নীতি কমছে না কোন সেক্টর। সরকারী অফিস আদালতে প্রায়শই একটা পোষ্টার দেখা যায়। তাতে লেখা থাকে ‘ আমার অফিস দুর্নীতিমুক্ত।’ কথাও কাজের মিল তখনই মিলে না, যখন টাকা ছাড়া ফাইল নড়ে না।
সুতরাং ‘দুর্নীতি মুক্ত সমাজ চাই’ – এ আশাটা করা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বড় বেশি ভুলই হবে। আর বঙ্গবন্ধু দুর্নীতিবাজদের নিয়ে যে দুঃখ করেছিলেন তা থেকে মুক্তি পাবার পথ বড় বন্ধুর। কারণ নৈতিক চিন্তা আর মূল্যবোধের শিক্ষা এ দেশ আজও অর্জন করতে পারেনি।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)