বিশ্বের কোনো দেশই সন্ত্রাসবাদের হুমকি থেকে মুক্ত নয় বলে মন্তব্য করেছেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান- র্যাব এর মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ।
শনিবার রাজধানীর তেজগাঁওস্থ এফডিসিতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজনে সহিংস উগ্রবাদ প্রতিরোধে তথ্য প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার নিয়ে বিতর্ক প্রতিযোগিতা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
বেনজীর আহমেদ বলেন, সন্ত্রাসবাদ, উগ্রবাদ একটি বৈশ্বিক সমস্যা, এটি বৈশ্বিক অভিশাপ। বিশ্বের কোন দেশই সন্ত্রাসবাদের ঝুঁকি থেকে মুক্ত নয়। আমাদের সবাই মিলেই এ বিষয়টি মোকাবেলা করতে হবে।
র্যাব ডিজি বলেন, বাংলাদেশের সরকার, জনগণ, সাংবাদিকরা সবাই সন্ত্রাসবাদ উগ্রবাদের বিরুদ্ধে। তাই এসব আমরা দমন করতে পেরেছি। এটাই আমাদের মূল শক্তি। আমরা এখন এমন একটা পর্যায়ে এসেছি যে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী বিষয় নিয়ে অনেকের সঙ্গে শেয়ার করতে পারি।
বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের শেকড় স্থাপিত হতে পারে নি উল্লেখ করে র্যাবের মহাপরিচালক বলেন: তরবারির মাধ্যমে এদেশে ইসলাম প্রচারিত হয় নি বা কোথাও হয় না। এ কারণে এদেশের বিরুদ্ধে অনেক আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের পরও জঙ্গীবাদের শেকড় স্থাপিত হতে পারে নি। এক্ষেত্রে সরকার সফল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় আমরা দেশকে জঙ্গিমুক্ত করতে সফল হয়েছি।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সন্ত্রাসবাদ নিয়ে পরিতৃপ্ত নয় জানিয়ে বেনজীর আহমেদ বলেন, আমরা সব সময় চাই দেশের মানুষ যেন জঙ্গিবাদ উগ্রবাদ থেকে নিরাপদে থাকে সেজন্য আমরা সব সময় কাজ করে যাচ্ছি। নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে গতকালের ঘটনার পর আমরা সর্তক অবস্থায় আছি। আমরা গতকালই রাজধানীর ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে র্যাবের টহলদারি বৃদ্ধি করেছিলাম। ওই ঘটনা থেকে আমরা বার্তা গ্রহন করে সর্বোচ্চ সতর্ক আছি।
এরআগে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বেনজীর আহমেদ বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় বা তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে আপনারা যা যা দেখবেন তার সব বিশ্বাস করবেন না। দেখেশুনে বুঝে বা বিচার বিশ্লেষণপূর্বক সব বিশ্বাস করবেন। অর্থাৎ গুজবে কান দেবেন না। এই গুজব বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে আমরা টিভিসিও তৈরী করেছি। নির্বাচন সহ বিভিন্ন আন্দোলনের সময় এসব গুজব আমরা লক্ষ্য করেছি। আমাদের তথ্য-প্রযুক্তির এমন অপব্যবহার রোধ করতে হবে। ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলে যে ইসলামকে কোনঠাসা করে রাখা হয়েছে তার বিপরীতের যুক্তিও ইন্টারনেটে আছে। সেগুলোর প্রচার বাড়াতে হবে।
মাদ্রাসা টুপি আর দাড়ির কারখানা নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাদ্রাসাও একটি জ্ঞান আহরণের স্থান। এটা সম্পর্কে আমাদের যে ভুল ধারণা সৃষ্টি হয়ে রয়েছে তাও দূর করতে হবে। তাদেরও দায়িত্ব রয়েছে। সেটা হলো- কোরআন শরীফ হচ্ছে একটি বিশুদ্ধ জীবন বিধান। সেখানেও বলা আছে তোমরা তোমাদের যুগোপযোগী জীবনবিধান এই কোরআনের আলোকে বের করে নাও। এ দায়িত্ব ইসলামিক চিন্তাবিদদের। যারা এই মাদ্রাসা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে। তাদেরকে দায়িত্ব নিয়ে বোঝাতে হবে ইসলাম কতটা উদার। এই ইসলামে জঙ্গিবাদের জায়গা নেই তাও পরিস্কার করে তুলে ধরতে হবে।
এসময় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে অনুরোধ করে বেনজীর বলেন, অন্যান্য দেশের ক্রিকেট দল বাংলাদেশে খেলতে আসলে নিরাপত্তাজনিত বিষয়ে আমাদেরকে অনেক চাহিদা দেয়। তারা বলে সেসব চাহিদা পূরণ না করলে তারা খেলতে আসবে না। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে এমনটা হয় না। তাই বিসিবিকে অনুরোধ জানাবো অন্যান্য দেশে আমাদের ক্রিকেট দল খেলতে যাওয়ার আগে নিরাপত্তার বিষয়টা নিশ্চিত না করলে আমাদের যাওয়া উচিত নয়। এক্ষেত্রে আমাদের আরো কঠোর অবস্থানে আসতে হবে।
এফডিসির অডিটোরিয়ামে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ‘তথ্য-প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহার উগ্রবাদ বৃদ্ধির প্রধান কারণ’ বিষয়ে বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। বিতর্কের পক্ষে লালমাটিয়া মহিলা কলেজ ও বিপক্ষে দারুননাজাত সিদ্দিকিয়া কামিল মাদ্রাসা অংশ নেয়।
বিতর্ক প্রতিযোগিতায় লালমাটিয়া মহিলা কলেজ বিচারকদের বিচার অনুসারে বিজয়ী হয়। পরে বিতার্কিকদের মাঝে ক্রেস্ট বিতরণ করা হয়।