বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আমরা এমন এক অন্ধকারাচ্ছন্ন দুঃসময়ের মধ্যে বাস করছি যে, যখন স্বাভাবিক রাজনৈতিক সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড করতে গিয়েও বিএনপি নেতৃবৃন্দরা সরকারি নিষ্পেষণের শিকার হচ্ছেন। বিপদ, শঙ্কা, আতঙ্ক ও ভয়ের মধ্যে আমাদেরকে যাপন করতে হচ্ছে দিনরাত্রি।
শুক্রবার দুপুরে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, আগামীকাল শনিবার যে নির্বাহী কমিটির সভা হবে তার জন্য নির্বাহী কমিটির কর্মকর্তা ও সদস্যরা দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পরিচয়পত্র সংগ্রহ করতে এসে অনেকেই গ্রেপ্তার হচ্ছেন। বাসা থেকেও নেতৃবৃন্দরা গ্রেপ্তার হচ্ছেন।
তিনি বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা যেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পুতুল খেলা। যখন ইচ্ছা হচ্ছে বাসা থেকে, রাস্তা থেকে, হাট-বাজার থেকে, দলীয় কার্যালয় থেকে তাদের তুলে নিয়ে গিয়ে প্রথমে অস্বীকার করার পর দরকষাকষি শুরু হয়, বলা হয় বেশী টাকা দিলে হালকা মামলা দেয়া হবে, আর কম টাকা দিলে কঠিন মামলা দেয়া হবে, আর যদি অর্থ দিতে অক্ষম হয় তাহলে শুরু হয় অমানবিক শারীরিক নির্যাতন। এটিই হচ্ছে আওয়ামী লীগের গণতন্ত্র ও শাসনের নমুনা।
রিজভী বলেন, এই অরাজক সময়েই ৩ ফেব্রুয়ারী শনিবার রাজধানীর খিলক্ষেতে হোটেল লা মেরিডিয়ান-এ সকাল ১০টা থেকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। ইতোমধ্যে নির্বাহী কমিটির সভার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাহী কমিটির সদস্যদের মাঝে গতকাল থেকে পরিচয়পত্র বিতরণ শুরু হয়েছে। আজকেও সারাদিন নির্বাহী কমিটির কর্মকর্তা ও সদস্যদের মাঝে পরিচয়পত্র বিতরণ করা হবে। সভাস্থলে নির্বাহী কমিটির কর্মকর্তা ও সদস্যদের রেজিস্ট্রেশন শুরু হবে সকাল ৮-৩০টা থেকে।
এই নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশন সরকারের পার্টনার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। আর তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে জাল নথির ওপর ভিত্তি করে ভুয়া ও মিথ্যা মামলায় হয়রানীর মাধ্যমে জুলুম করা হচ্ছে প্রায় প্রতিদিন। বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর চলছে জেল, জুলুম, নির্যাতন, গ্রেপ্তার ও গণগ্রেফতার।
এই রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জনগণের কাছে প্রমান হয়ে গেছে সরকার পরিকল্পিতভাবে ভিন্ন কৌশলে আরেকটি বিতর্কিত নির্বাচনের দিকে এগুচ্ছে। কারণ ভোটারবিহীন সরকার ক্ষমতার মগডালে বসে থাকার মজাটা পাচ্ছে, তাই তারা নাছোড়বান্দার মতো ক্ষমতা ধরে রাখতে আগ্রহী। একতরফা ভোটের ফলাফল ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর অভিপ্রায় বলেই নির্বাচনী ঘর অগোছালো রেখেই আবারো ৫ জানুয়ারীর মতো নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন বলে জানান রিজভী।
তিনি আরো বলেন, জাতির সামনে সরকারের উদ্দেশ্য পরিষ্কার। বিএনপিসহ বিরোধী দল নিধনে যে দমন নিপীড়ন চলছে এ নিয়ে দেশ-বিদেশে সরকারের বিরুদ্ধে ধিক্কার উঠেছে। অন্তহীন ক্ষমতালিপ্সার কারণেই জনগণের বদলে বন্দুকের ওপরেই আস্থা বেশী সরকারের। সেজন্য জনগণের ব্যাপক অংশের প্রতিনিধি বিএনপিকে নিপীড়ন-নির্যাতনে ক্ষতবিক্ষত করে হয়রানির জালে আটকে রেখে নিজেদের পছন্দের নির্বাচন করতে চায়।
বেগম খালেদা জিয়ার ওপর বিচারের নামে অবিচারের যে কালো ছায়া বিস্তার লাভ করানো হয়েছে তাতে দেশবাসী ক্ষুদ্ধ মন্তব্য করে রিজভী বলেন, প্রহসনের বিচার নিয়ে মানুষের ক্ষোভ ভষ্মাচ্ছাদিত বহ্নির মতো ধিকিধিকি জ্বলছে। দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মিথ্যা মামলার বিচার নিয়ে কোন নেতিবাচক সিদ্ধান্ত হলে জনরোষ চরম প্রতিবাদের শক্তিতে রাজপথে আছড়িয়ে পড়বে।