চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

বিকেএসপির রথে সাকিব-মুশফিকের পথে

সাকিব-মুশফিকদের গল্প বলেন বিকেএসপির কোচেরা

বিকেএসপির ছাত্র হিসেবে সবসময়ই গর্ববোধ করেন সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিমরা। প্রতিষ্ঠানটির বিশেষ বিশেষ দিনে ছুটে যান প্রিয় ভূমিতে। যেখানকার আলো-বাতাসে কেটেছে কৈশোর, পেয়েছেন বড় ক্রিকেটার হওয়ার পথ, সেই সবুজ চত্বরে গেলে এখনো শিহরিত হন তারা। হয়ে পড়েন নস্টালজিক।

একদশক আগে বিকেএসপির গণ্ডি পেরিয়ে আসা সাকিব-মুশফিক ধাপে ধাপে নিজেদের অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। কিন্তু তাদের সম্পর্ক ছিন্ন তো দূরের কথা তাতে ভাটার টানও পড়েনি। দূরে থেকেও ছায়া হয়ে থাকেন। ‘আইডল’ হয়ে অনুজদের মনে জাগান বড় স্বপ্নের ঢেউ। এখন আর বিদেশের নয়, নিজ দেশের বড় তারকা সাকিব-মুশফিকদের মতো ক্রিকেটার হতে চান অনেকেই। এমনকি কোচদের ক্রিকেট পাঠেও উঠে আসে বিকেএসপির সাবেক ছাত্রদের সাধনা ও সফলতার গল্প।

বাংলাদেশের ম্যাচের দিন বিকেএসপির ক্রিকেট বিভাগের শিক্ষার্থীদের রুটিন বদলে যায়। টিভিতে খেলা দেখে শেখাই হয়ে ওঠে মুখ্য কাজ। ভবিষ্যৎ ক্রিকেটারদের আলোচ্যসূচির বড় অংশজুড়েই থাকে টাইগারদের খেলা। বড় মঞ্চে কীভাবে খেলতে হবে সেটি নিয়ে যা উপলব্ধি করেন সেটি নিয়ে পরে প্রশিক্ষণের সময় কথা বলেন কোচরা।

বিকেএসপির ক্রিকেট বিভাগের হেড কোচ মাসুদ হাসান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলছিলেন কীভাবে তাদের পাঠদানে উঠে আসে সাবেক ছাত্রদের প্রসঙ্গ, ‘ওরা (সাকিব-মুশফিক) যখন বিকেএসপির ছাত্র তখন ম্যাচসেরা হলে পুরষ্কার হিসেবে একশ টাকা দিতাম। এখন ওরা আন্তর্জাতিক খেলায় ম্যাচসেরা হলে শতশত ডলার পায়। সেটিই তরুণদের বলি, তোমরাও মনপ্রাণ দিয়ে অনুশীলন করো। একদিন তোমরাও বড় খেলোয়াড় হবে। তখন সব পাবে।’

সাকিব-মুশফিকরা যখন বিকেএসপির ছাত্র তখনো প্রতিষ্ঠানটির ক্রিকেট কোচ ছিলেন মাসুদ হাসান। তার অধীনেই ক্রিকেটের নানা ব্যাকরণ শিখেছেন তারা। কোচ হিসেবে তার তৃপ্তির বড় জায়গা সাবেক ছাত্রদের উদাহরণ টেনে বর্তমান ছাত্রদের মাঝে শেখার তাড়না জাগান।

‘এখন আর বিদেশি ক্রিকেটারদের উদাহরণ টানতে হয় না। ঘরের ছেলেরাই তো দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। নিজের ছাত্রদের গল্পই যখন তরুণদের মোটিভেট করার সাবজেক্ট হয়ে যায়, তখন তো খুব ভালো লাগে। কোচিং করানোর বড় প্রাপ্তি এখানেই।’

কয়েকদিন আগেই বিয়ের কার্ড দিতে বিকেএসপিতে গিয়েছিলেন বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যান এনামুল হক বিজয়। কোচ মাসুদ হাসান তখন ছাত্রদের নিয়ে মাঠে কাজ করছিলেন। দাওয়াত করে চলে যাওয়ার পর উদাহরণ হিসেবে কোচ বলেছেন বিজয়ের কথাও।

শুধু কি এই তিন ক্রিকেটার? বিকেএসপি থেকে উঠে এসে দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন এমন ক্রিকেটার অগণিত। প্রথম টেস্ট অধিনায়ক থেকে শুরু করে আব্দুর রাজ্জাক, নাঈম ইসলাম, রকিবুল হাসান, সোহরাওয়ার্দী শুভ, নাসির হোসেন। সাকিব-মুশফিক ছাড়াও বর্তমান দলের সৌম্য সরকার, মুমিনুল হক, মোহাম্মদ মিঠুন তো বিকেএসপিরই আবিষ্কার।

একটা সময় জোড়ায় জোড়ায় তারকা ক্রিকেটার বিকেএসপি থেকে বের হলেও এখন সেই হার অনেকটাই কমেছে। নিকট অতীতে বিকেএসপিতে থেকে জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছেন কেবল আরিফুল হক, আফিফ হোসেন ধ্রুব ও জাকির হাসান। টিকে থাকতে পারেননি তাদের কেউই।

কোচ মাসুদ হাসান অবশ্য আশা হারাচ্ছেন না। তিনি মনে করেন কয়েকবছর পর বিকেএসপির বেশ কয়েকজন তরুণ জায়গা করে নেবে জাতীয় দলে।

‘ইংল্যান্ড সফরে থাকা বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সাত ক্রিকেটারই কিন্তু বিকেএসপির। এদের মধ্যে বেশ প্রতিভাবান কয়েকজন আছে, যারা ভবিষ্যতে ভালো করবে। বিকেএসপিতে থাকাকালীন সময়ে একজন ক্রিকেটার অনুশীলনের জন্য যে উন্নতমানের ইনডোর, আউটডোর সুবিধা পায়, সেটি পরবর্তী পর্যায়ে পায় কিনা সেটিও দেখতে হবে। প্রতিভা তো লালন করার বিষয়। এমনও দেখেছি বিকেএসপি থেকে অনেক সম্ভাবনা নিয়ে বের হয়েও পরবর্তীতে ভালো জায়গায় যেতে পারেনি বা ঝরে গেছে।’