দেশের অর্থনীতির আকার, জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও সক্ষমতা বাড়ার কারণে বাজেটের আকার বেড়েছে। এটা অবশ্যই ইতিবাচক দিক। তবে এই বড় বাজেট বাস্তবায়ন করাই হচ্ছে মূল চ্যালেঞ্জ।
মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) বেসরকারি গণমাধ্যম সংস্থা ‘সমষ্টি’ আয়োজিত ‘বাজেট ২০১৭-১৮: আর্থিক ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা।
সেমিনারে বক্তব্য রাখেন, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান, বেসরকারি টেলিভিশন একাত্তরের বার্তা পরিচালক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন, ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের অধ্যাপক এ জে মো. শফিউল আলম ভূঁইয়া, বাংলাদেশ পোস্টের ডিপুটি নিউজ এডিটর গোলাম শাহানী।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দি ইন্ডিপেন্ডেনেটর বার্তা সম্পাদক মীর মোস্তাফিজুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সমষ্টির পরিচালক মীর মাসরুর জামান।
প্যানেল আলোচনায় তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, প্রবৃদ্ধিতে ধারাবাহিকতা দেখা যাচ্ছে। আগের চেয়ে বড় হয়েছে অর্থনীতির আকার। প্রবৃদ্ধি ও সক্ষমতা বেড়েছে। ফলে বাজেটও দিন দিন বড় হচ্ছে। এটা অবশ্যই ভাল দিক। তবে এই বড় বাজেট বাস্তবায়ন করাই হচ্ছে সরকারের মূল চ্যালেঞ্জ।
বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্ধ বাড়ানোকে ইতিবাচক উল্লেখ করে তিনি বলেন, নিরাপত্তা আরো নিশ্চিত করা দরকার। দেশে কর্মসংস্থান বাড়ছে না। গত কয়েক বছরে বেকারত্বের সংখ্যা ৯ লাখে পৌঁছেছে। এর কারণ হচ্ছে শিক্ষার সাথে বাস্তবতার মিল নাই। এছাড়া কারিগরি শিক্ষাকে উপেক্ষা করা হচ্ছে। সেজন্য তৈরি পোশাকসহ কয়েকটি খাতে বিদেশিদের ওপর নির্ভর করতে হয়। তবে গত বছর বাজেটে দক্ষতা উন্নয়নে নজর দেয়া হলেও এবার তা উপেক্ষিত হয়েছে বলে জানান তিনি।
ব্যাংকিং খাতে দূর্নীতি বেড়ে গেছে মন্তব্য করে সিপিডির এই গবেষক বলেন, ব্যাংকিংখাত ভয়াবহ সমস্যার সম্মুখিন। এ খাতে দুর্নীতি কমাতে হলে স্বচ্ছভাবে ব্যাংকিং কমিশন গঠন ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করতে হবে।
আবগারি শুল্ক আরোপ করা হলে ব্যাংকে আমানতের পরিমাণ কমে যাবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ব্যাংকে আমানতের সুদ হার কমে যাচ্ছে। ফলে মানুষ সঞ্চয়পত্রের দিকে ঝুঁকছে। এটা অবশ্যই খুব বেশি ভাল লক্ষণ নয়।
ভ্যাটের আওতামুক্ত পণ্যের তালিকা লম্বা হলেও এতে অপ্রযোজনীয় পণ্যই বেশি রাখা হয়েছে জানিয়ে তৌফিকুল ইসলাম তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখছে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের মানুষ। কিন্তু এবার বাজেটে যেসব পণ্যে ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে তাতে এই দুই শেনিরে মানুষ খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ যেসব খাত থেকে সহজে ভ্যাট আদায় করা যায় সেসব খাতেই ভ্যাট আরোপ করা হচ্ছে।
ভ্যাট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভ্যাট আইন আরো আধুনিক করা দরকার। একবারে না করে ধাপে ধাপে এই আইন বাস্তবায়ন করলে সফলতা পাওয়া যাবে।
বাজেট আলোচনায় জনগণের অংশগ্রহণ বাড়ানো দরকার উল্লেখ করে সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, বাজেট নিয়ে মানুষ আলোচনা-সমালোচনা করছে। এটা দোষের নয়। বরং ভাল দিক। কারণ এই সমালোচনা সংশ্লিষ্টদের ভাবনার বিষয়বস্তু তৈরি করে দেয়।
ভ্যাট নিয়ে তিনি বলেন, ৩২ হাজার প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন রয়েছে। কিন্তু মাত্র ৮ হাজার প্রতিষ্ঠান ভ্যাট দেয়। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ভ্যাট আদায় নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া বিশাল রাজস্ব লক্ষমাত্রা নিশ্চিত করতে হলে করদাতার সংখ্যাও বাড়ানো জরুরী।
মেগা প্রকল্প প্রসঙ্গে ঈশতিয়াক বলেন, এসব প্রকল্প গ্রহণ করা অবশ্যই উন্নয়নের লক্ষণ।কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি হচ্ছে। ফলে প্রকল্প ব্যয় বাড়লেও যথা সময়ে সঠিক মানের কাজ হয় না।