চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

বাঙালির ভাতে টান!

বাঙালি আর কিছু এমন করে মনে রাখেনি শায়েস্তা খাঁর শাসনামলের! ‘টাকায় আট মণ চাল পাওয়া যেতো’- এটাই ওই আমলের সবচেয়ে বড় কীর্তি। সেসময়ে সরকারি বড় থেকে ছোট কর্তার বেতন, সাধারণ মানুষের আয়-রোজগার কত ছিলো, সে কথা সাধারণের বিবেচ্য নয়, বড় কথা টাকায় আট মণ চাল।

প্রশ্ন, সেসময়ও কি এ ভূ-খণ্ডের সাধারণ মানুষ ভালো ছিলো ?‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে’- প্রায় ৩০০ বছর আগে বাংলার কবি তার সন্তান, আগামীর বাঙালির জন্য এমন প্রার্থনা করেছিলেন। কথা স্পষ্ট যে, তখনো বাঙালি সন্তান দুধে-ভাতে ছিলো না। থাকলে কি আর ওই কথা কবি বলতেন না! একদা বাঙালির গোলাভরা ধান আর গোয়ালভরা গরু ছিলো- এ কথাটাও কি সব বাঙালির বেলায় প্রযোজ্য ? আর ওই যে বলে, ‘মাছে ভাতে বাঙালি’- সে কথাও টিকছে কই ? পরিস্থিতি যা তাতে মনে হচ্ছে বাঙালির ভাতেই টান পড়েছে; এবং দায়িত্ববানরা উদ্যোগী না হলে এটা আরো খারাপ পরিণতি ডেকে আনতে পারে!

ঢাকায় কতটা ফ্লাইওভার হলো, জিডিপি কতটা ভালো, রিজার্ভ কতটা নিরাপদ, মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্টে দেশ কতটা গোল করলো, শেয়ার বাজার কতটা চাঙ্গা- এসবে দেশের সাধারণ মানুষের কিছু আসে যায় বলে অন্তত আমার মনে হয় না। তাদের কাছে এখনো ভালো সরকারের উদাহরণ হলো চালের দাম কতটা কম-তাই ।আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন এই সরকার বরাবরই ‘জনবান্ধব সরকার’ ।আর এটা বার বার মনে করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ।এবং এটা এখনো সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করতে চায় ।সেই জনবান্ধব সরকারের সময়ে সাধারণের ভাতে যদি টান পড়ে, চালের দাম বাড়তে থাকে নিয়ন্ত্রণহীন, তাহলে প্রশ্নতো উঠবেই ।

আমরা এটা বেশ বুঝতে পারছি, হাওরাঞ্চলে আগাম বন্যা তারপর উত্তরাঞ্চলে বন্যার ছোবল ফসলের সর্বনাশ করে দিয়েছে। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে যোগ হয়েছে মানুষসৃষ্ট দুর্যোগ ।প্রতিবেশি রাষ্ট্র মিয়ানমার লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে নির্যাতন করে দেশান্তরী করছে ।তারা এসে আশ্রয় নিচ্ছে বাংলাদেশে। জাতিসংঘ আশঙ্কা করছে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের সংখ্যা দশ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে ।আমরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে ‘মানবিক বিবেচনায়’ বিশ্ববাসীর প্রশংসা কুড়াচ্ছি সত্য কিন্তু এটাতো একটা দুর্যোগও ।এদিক ওদিক থেকে হয়তো ছিটেফোটা ত্রাণ আসছে ওই অসহায় মানুষগুলোর জন্য; তাতে কী ? মানুষগুলোকে তো দু-বেলা খাইয়ে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব নিয়েছে বাংলাদেশ ।তাদের মুখের ভাতের জোগান দিতে আমাদের চালে টান পড়ছে; এটা অস্বীকার করা যায় না ।আর জীবন নিয়ে পালিয়ে আসা এই রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক রাজনীতিওতো জড়িয়ে আছে ।স্বাভাবিকভাবেই এসবের প্রভাব পড়বে বাঙালির চাল-ভাতে!

ইতিহাস সাক্ষি দেয়, নৃ-তাত্ত্বিকভাবেই বাঙালি খুব নিরীহ আর নরম মনের ।এ জাতি কখনো কোনোকালে পরদেশ দখলে ব্রতী হয়নি; হরণ করেনি পরের ধন ।তাই আর যাই হোক ‘ভাতের খোটা’ সে সহ্য করতে পারে না ।তাই অতীতে যারা বলেছে, ‘বেশি করে আলু খান; ভাতের ওপর চাপ কমান’- তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে জনগণ ।সাধারণ মানুষকে ভাত দিতে না পারলে, তাদের মাথা গরম হয়, প্রতিবাদী হয় এটাও সত্য ।যুগ যুগ ধরে প্রচল আছে সেই কথা-‘ভাত দেয়ার মুরোদ নাই কিল দেয়ার গুসাই’। ভাত না দিতে পারা কিল মারার গুসাইকে বাঙালি কোনোদিনই ঠিকঠাক মতো গ্রহণ করতে পারে না।

অতএব বাঙালির ভাতের থালায় টান পড়ার আগেই বিষয়টিকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে ।‘চালের পর্যাপ্ত মজুদ আছে’- বাণিজ্যমন্ত্রীর এমন বয়ানের পরও বাজারে চালের দাম বাড়বে লাফিয়ে লাফিয়ে এটা কোনো যুক্তির কথা হতে পারে না ।মিল মালিক, অসাধু সিন্ডিকেট আর একটি পত্রিকা দায়ী চালের বাজার অস্থির করার জন্য-বাণিজ্যমন্ত্রীর এমন কথা ‘ভেতো বাঙালি’কে শঙ্কায় ফেলে দেয় । এক্ষেত্রে খাদ্যমন্ত্রী আরো অ্যাগ্রেসিভ! তাহলে সরকারের কাজ কী- সাধারণ মানুষ জানতে চায়, প্রশ্ন করে- এসবের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নেয় না কেনো?

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)