বাংলাদেশের জন্য ফাইনালের উপলক্ষ মানেই হৃদয় ভাঙার একেকটি নতুন গল্প। গেল সাত বছরে ছয়টি ট্রফি জেতার সুযোগ হাতছাড়া হওয়ায় চোখের জলে লেখা হয়েছে কষ্টের উপাখ্যান। শুরুটা ২০১২ সালে, মিরপুরে এশিয়া কাপ ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে ২ রানের হার দিয়ে। তীরে এসে তরী ডোবানোর আক্ষেপ আর সাকিব, তামিম, মুশফিকদের শিশুসুলভ কান্নার দৃশ্য স্মৃতির আয়নায় ভেসে ওঠে বাংলাদেশ দল নতুন করে কোনো আসরের ফাইনালে নাম লেখাতেই।
শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাহমুদ সুজন রোমন্থন করলেন দুঃখের সেসব স্মৃতি। পরে শোনালেন আশার কথাও। তার মতে, ব্যাট-বলের স্কিল দিয়ে দুর্ভাগ্যের শিকে এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই ছিঁড়বে বাংলাদেশ। প্রথমবার জিতবে কোনো টুর্নামেন্টের শিরোপা।
‘ফাইনাল হারাটা সবসময়ই কষ্টের, কাছাকাছি গিয়ে হারাটা আরও কষ্টের। প্রথম যখন ২ রানে আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে হারলাম, তখনও বড় দুঃখের একটা ব্যাপার ছিল। ওখান থেকে আমরা অনেক শিখেছি। আগে যেসব ফাইনাল হেরেছি, সেখানে আন্ডারডগ ছিলাম। এবার মনে হচ্ছে আমরা ফেভারিট আয়ারল্যান্ড সিরিজে। বাংলাদেশ দল খেলছেও ফেভারিটের মতো। ভাগ্যটা গুরুত্বপূর্ণ, তবে স্কিলের মাধ্যমে আমরা হয়তো ভাগ্যকে জয় করতে পারব।’
ত্রিদেশীয় সিরিজে দারুণ খেলেছে বাংলাদেশ। দাপুটে জয় এসেছে তিন ম্যাচেই। ডাবলিনে শুক্রবার ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারাতে পারলে পেছনের সব শিরোপা হাতছাড়ার দুঃখ হয়ত ঘুচে যাবে না, তবে বাংলাদেশ নাম লেখাবে নতুন অধ্যায়েই।
‘লাকি সেভেন’ অর্থাৎ, সপ্তম সুযোগ আর হাতছাড়া করবে না বলেই বিশ্বাস সকলের। দুই এশিয়া কাপ, নিধাস ট্রফি আর তিনটি ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল হেরেছে বাংলাদেশ। তবে এবারের ত্রিদেশীয় সিরিজে বাংলাদেশ যেভাবে উড়িয়ে দিয়েছে আয়ারল্যান্ড (১বার) ও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে (২বার) তাতে স্পষ্ট হয়ে গেছে শক্তির ব্যবধানে অনেক এগিয়ে টাইগাররা।
বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে আয়ারল্যান্ডে বাংলাদেশ দল আছে দারুণ ছন্দে। যাকেই একাদশে সুযোগ দেয়া হচ্ছে, মেলে ধরছেন নিজেকে। প্রথম দুই ম্যাচে ওপেনিংয়ে তামিম ইকবালের সঙ্গী সৌম্য সরকার ব্যাট হাতে প্রমাণ করে তিন নম্বর ম্যাচে থাকেন বিশ্রামে। সেই সুযোগে লিটন দাস এসেই আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে খেলে দেন ৭৬ রানের ঝকঝকে এক ইনিংস।
একই ম্যাচে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলতে নামা আবু জায়েদ রাহি তুলে নেন ৫ উইকেট। পুরো দল ছন্দে থাকায় ফাইনালের একাদশ নিয়ে টাইগারভক্তদের মনে কৌতূহলের শেষ নেই। ফাইনালে তামিমের সঙ্গী সৌম্য না লিটন? মোস্তাফিজ একাদশে ফিরলে আবু জায়েদ থাকবেন তো? কৌতূহলের শেষ নেই!
বাংলাদেশ দলের বেশিরভাগ ক্রিকেটারই ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ খেলেছেন আবাহনীর হয়ে। যে দলটির কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন। ফাইনালের একাদশ কেমন হতে পারে সে ব্যাপারে মতামত জানতে চাওয়া হল তার কাছেই। যেসব পজিশন নিয়ে মূল আলোচনা, সেখানে ওপেনিংয়ে লিটনকে সরিয়ে তিনি রাখলেন সৌম্যকে, আবু জায়েদের জায়গায় ফেরালেন মোস্তাফিজকে, আর স্লগ ওভারের বোলিংয়ের বিশেষত্বে এগিয়ে রাখলেন সাইফউদ্দিনকেই।
‘সত্যি কথা বলতে এটা (একাদশ নির্বাচন) তো কন্ডিশন মাথায় রেখে করতে হবে। আগামীকাল কেমন উইকেট হবে, গতকালের উইকেট যথেষ্ট ফ্ল্যাট ছিল। যদি উইকেট মন্থর হয় তখন কাকে খেলাবেন? কালকে আমরা মিরাজকে খেলাতে পারি, মিরাজকে প্রয়োজন স্বাভাবিকভাবেই। গতকাল আমরা চার পেসার নিয়ে অনেকদিন পর খেললাম। চার পেসার নিয়েই খেলবে কিনা এসব নিয়ে তো টিম ম্যানেজমেন্টে আলোচনা করবেই।’
‘সৌম্য ব্যাক টু ব্যাক ম্যাচে রান করেছে, সেটাও একটা বড় ব্যাপার। লিটনও রান করেছে। মিঠুনও রান করেছে। যদিও গত ম্যাচে তাকে বিশ্রাম দেয়া হয়েছে। ফাইনালে কারা খেলবে, আসলে কন্ডিশন গুরুত্বপূর্ণ। সেরা বোলিং আক্রমণ সাজিয়েই নামবে। মোস্তাফিজকে মনে হয় ফেরানো হবে, অবশ্যই মাশরাফী খেলবে, সাইফউদ্দিনকে মনে করি বর্তমান সময়ের সেরা ডেথ বোলার। মিরাজ সাকিব তো থাকবেই। পাঁচটা বোলারই হয়তবা খেলবে। ব্যাটিংয়ে লিটন ভালো খেললেও আমার মনে হয় সৌম্যকে খেলাবে।’
একাদশ নিয়ে মধুর সমস্যায় বাংলাদেশ। কাকে রেখে কাকে খেলাবেন সেটি নিয়ে আলোচনার সুযোগ রয়েছেই। খেলোয়াড়দের চেয়ে টিম ম্যানেজমেন্টের চিন্তা তাই কম নয় ফাইনাল ঘিরে। সব খেলোয়াড় ছন্দে থাকলে দলের মাঝে তার ইতিবাচক প্রভাব কীভাবে পড়ে সেটি নিয়েও কথা বললেন খালেদ মাহমুদ।
‘যেহেতু ১১ জনের খেলা, ম্যানেজমেন্ট বসে সিদ্ধান্ত নেবে। নির্বাচন করতে হবে কাকে নিলে বেশি অবদান রাখতে পারবে। সবার মধ্যে সুস্থ একটা প্রতিযোগিতা চলছে, সেটা ভালো। সবাই পারফর্ম করছে, এসব পুরো দলকেই জাগিয়ে তুলবে বলে মনে করি। সব বোলার যখন ভালো করে, তখন নিজের সেরাটা করতে চাইবে টিকে থাকার প্রয়াসে। খেলোয়াড়দের দায়িত্ব তো সবসময়ই থাকে। তবু এটা একটা ভালো প্রতিযোগিতা তৈরি হবে, যেহেতু সবাই ফর্মে আছে।’