চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

‘প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ নৌকা ভাড়া করে আসতো শুটিং দেখতে’

অভিনেতা, লেখক এবং স্বণামধন্য নির্মাতা তৌকীর আহমেদ। আশির দশকে টেলিভিশন নাটকে অভিনয় দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও পরবর্তীতে নাটক, টেলিফিল্ম এবং চলচ্চিত্র নির্মাণ দিয়ে খ্যাতি অর্জন করেন। পুরস্কারের ঝুলিও তার কম ভারী নয়। তার প্রথম চলচ্চিত্র ‘জয়যাত্রা’ (২০০৪) নির্মাণ করে তিনি ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার’ লাভ করেন। এরপর একে একে নির্মাণ করেন দারুচিনি দ্বীপ, রূপকথার গল্প, অজ্ঞাতনামা এবং সবশেষে নির্মাণ করেন ‘হালদা’ ছবি। ‘হালদা’ মূলত নদী ও নারীর গল্প। অর্থাৎ নদীকে যেমন নানা বাধাবিঘ্ন পেরিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হয়, নারীকেও তেমনি নানা প্রতিকূলতা পাড় হয়ে সামনে যেতে হয়। আর ছবিটি মুক্তি পেতে যাচ্ছে আগামী ১লা ডিসেম্বর। বছরের বহুল প্রতীক্ষিত ছবি মুক্তিকে সামনে রেখে কথা হলো তৌকীর আহমেদের সঙ্গে। চ্যানেল আই ভবনে বসেই তিনি কথা বললেন চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে

সামনে মুক্তি পেতে যাচ্ছে আপনার পরিচালিত ছবি ‘হালদা’ কেমন আশাবাদী ছবিটি নিয়ে?
আমি ‘হালদা’ নিয়ে ভীষণ আশাবাদী। দর্শক ছবিটিকে বেশ ভালোভাবে গ্রহণ করবে বলে আশা করছি। আর ছবিতে দর্শকদের জন্য সুন্দর একটা বার্তাও থাকছে। ‘হালদা’ তো আসলে নদীর নাম। যেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা নদী। প্রাকৃতিক মৎস প্রজনন ক্ষেত্র ‘হালদা’। যেটাকে না বুঝে আমরা নষ্ট করে ফেলছি। ছবিতে আসলে সচেতনতার একটা বার্তা থাকবে।

হালদা ছবির পেস্টার
হালদা ছবির পেস্টার

‘হালদা’র প্রচারণা কেমন চলছে?
আমরা সাধ্যমতো ‘হালদা’র প্রচারণা করছি। যদিও প্রচারণা পরিচালকের কাজ নয়। এটা মূলত প্রযোজক এবং পরিবেশক দায়িত্ব পালন করেন। আমরা ‘হালদা’ গুরত্বপূর্ণ একটি পরিবেশকের মাধ্যমে ডিস্ট্রিবিউট করার চেষ্টা করেছি। যার নাম ‘অভি কথাচিত্র’।  তারা ইতিমধ্যে ‘ঢাকা অ্যাটাক’ এবং আরও অনেক বাণিজ্যিক ছবি ভালোভাবে ডিস্ট্রিবিউট করেছেন। ‘হালদা’র দায়িত্ব তারা নিয়েছেন।

ডিস্ট্রিবিউশনের ফলাফল কেমন পাচ্ছেন?
হ্যাঁ বেশ ভালো। আমরা ইতিমধ্যে ‘হালদা’র দুটো গান ছেড়েছি। ‘নোনা জল’ এবং ‘গম গম লার’। দুটি গান-ই বেশ সাড়া পেয়েছে দর্শকদের কাছ থেকে। ইউটিউবেও প্রচুর লোককে রিচ করেছে গান দুটি। ফেসবুকের মাধ্যমেও অনলাইন প্রচারণা চলছে। আমেরিকান সেন্টারে এবং ক্যাডেট কলেজ ক্লাবে দুটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ‘হালদা’র প্রচারণা হয়েছে। শুক্রবার টিএসসি তে ‘বিডি ক্লিন’ এর সাথেও আমরা প্রচারণা করেছি। শুধু ব্যানার ফেস্টুন নয়, একটা ভালো কাজের সাথে থেকেও তো প্রচারণা করা যায়। এটা তেমনি একটা প্রচারণা ছিল। এভাবে চলতে থাকবে যে কয়দিন সময় পাওয়া যায়। এছাড়া হলে হলে ট্রেলার চলছে।

চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে আলাপচারিতায় তৌকির আহমেদ
চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে আলাপচারিতায় তৌকির আহমেদ                                        ছবি: জাকির সবুজ

‘হালদা’ চট্টগ্রামের ভাষায় করা এটা নিয়ে কোনো সমস্যার মুখোমুখি হন নি?
‘হালদা’ তো একটা নির্দিষ্ট জনপদের গল্প। হালদা পাড়ের মানুষের গল্প। আমরা চেষ্টা করেছি এটার প্রেজেনটেশনেও তাদের সংস্কৃতি, কৃষ্টি এটার যেমন ফ্লেভার থাকবে ভাষারও একটা ফ্লেভার থাকবে।

চট্টগ্রামের ভাষা, তাহলে দর্শকদের ভাষা বুঝতে কোনো অসুবিধা হবে না?
আমি প্রথম থেকেই এটার ব্যাপারে সচেতন ছিলাম। ভাষার ফ্লেভার রেখেছি কিন্তু পুরোটা চট্টগ্রামের ভাষা নয়। ছবিতে দুই একটা শব্দ বুঝতে অসুবিধা হলেও সংলাপ বুঝতে কোনো কষ্ট হবে না দর্শকদের। তাছাড়া এর ইংরেজি সাব-টাইটেল তো রয়েছে-ই।

আপনার ‘অজ্ঞাতনামা’ ছবির টিমটি শক্তিশালী ছিল, ‘হালদা’ টিম নিয়ে কাজ করে কেমন বোধ করেছেন?
‘অজ্ঞাতনামা’ টিমের অনেকেই ‘হালদা’য় আছে। মোশাররফ করিম, ফজলুর রহমান বাবু, মোমেনা চৌধুরী, শাহেদ আলী সুজন। আবার একই সঙ্গে যোগ হয়েছেন দিলারা জামান, ‍রুনা খান, তিশা, জাহিদ হাসান তো নামগুলিতে-ই বোঝা যাচ্ছে ইনারা সবাই পরীক্ষিত অভিনয়শিল্পী। আমার মনে হয় একটা শক্তিশালী দল নিয়ে কাজ করার অনেক সুবিধা রয়েছে তারা অনেক কিছু যোগ করতে পারেন, সংযুক্তি নিয়ে আসতে পারেন। আর এটা ছবির জন্য ভালো-ই হয়েছে। পরিচালকের পরিশ্রম কমিয়েছেন এবং একই সঙ্গে তারা যেহেতু প্রফেশনাল মেন্টালিটির শিল্পী তাই পরিশ্রম করতে পিছুপা হননি। রোদে, বৃষ্টিতে, কাঁদায় নেমে তারা আমার সঙ্গে কাজ করেছেন, আমার প্রতি আস্থা রেখেছেন। তাতে আমার বরং সুবিধাই হয়েছে।

হালদা ছবির পোস্টার
হালদা ছবির পোস্টার

চট্টগ্রাম ছাড়া ‘হালদা’র শুটিং অন্যকোথাও কি হয়েছে?
মূলত হালদা পাড়েই ছবির আউটডোর শুটিং হয়েছে। সেটা চট্টগ্রামের রাউজান এবং হাটহাজারীর বিভিন্ন লোকেশনে। আমি জানি যে ‘হালদা’ চট্টগ্রামের একটা নদী। ওখানে গিয়েই আমাদের কাজ করতে হয়েছে।

শুটিংয়ের কোনো মজার অভিজ্ঞতা?
মজার অভিজ্ঞতা বলতে গেলে বলতে হবে এই এলাকাগুলোতে কখনও শুটিং হয়নি। তাই সেখানকার লোকজন কখনও অভিনয়শিল্পীদের দেখেননি বা  শুটিংও দেখেননি। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ নৌকা ভাড়া করে, মাইক্রোবাস ভাড়া করে চলে আসতো শুটিং দেখতে। এটা আমাদের জন্য একটা বিড়ম্বনা তৈরি হয়ে গেল। এমনও হল লোকের চাপে আমরা ফ্রেম ধরতে পারি না। যেদিকে ফ্রেম ধরি সেদিকেই হাজার হাজার লোক। তখন আমরা পুলিশের সাহায্য নিলাম। পুলিশও একপর্যায়ে ব্যর্থ হয়ে লাঠিচার্জ করে বসলো। তখন আবার আমাকে শালিশে বসতে হলো স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে। তাদের কথা-কেন পুলিশ লাঠিচার্জ করলো? হালদার প্রতিকূলতা ছিল মূলত জনগণের ভালোবাসা। শেষের দিকে আমরা ভোর ৫ টায় উঠে সকাল ১০ টার মধ্যে একদফা শুটিং শেষ করে ফেলতাম।

‘রাজবাড়ী’তেও তো কিছু শুটিং হয়েছে?
লোকজনের ভিড়ে যখন কাজ পিছিয়ে যাচ্ছিল, তখন আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম যেসব কাজ সরাসরি হালদার সাথে রিলেটেড নয়, সেগুলো অন্যজায়গায় করবো। যেমন, বাড়ির উঠোন কিংবা এই রিলেটেড বিষয়গুলো। তাই শুটিং স্পট তখন রাজবাড়ীর দিকে সরিয়ে নিয়ে আসি।

অনেক ধন্যবাদ চ্যানেল আই অনলাইনকে সময় দেবার জন্য…
আপনাকেও ধন্যবাদ।

হালদা ছবির পোস্টার