কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের পাওনা ৪শ কোটি টাকা আদায় ও চামড়াখাতের ভবিষ্যত সমস্যা দূর করতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাওয়ার চিন্তা-ধারা করছে কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীরা।
কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী ও ট্যানারি মালিকদের সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, কোরবানি চামড়া বিক্রি নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা দূর করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের পর ট্যানারি মালিকরা আড়তদারদের থেকে চামড়া কেনা শুরু করেছে। আগামী ২ মাস এই বেচাকেনা অব্যাহত থাকবে।
এ বছর কোরবানির দিন বিক্রি করতে না পেরে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা এক লাখের বেশি কাঁচা চামড়া নষ্ট করে ফেলেন। কেউ চামড়া নদীতে ফেলে দেন। কেউ মাটিতে পুঁতে ফেলেন আবার কেউ রাস্তায় চামড়া রেখে চলে যান। এমন পরিস্থিতিতে ওই দিনই কাঁচা চামড়ার উপযুক্ত মূল্য নিশ্চিত করতে রপ্তানির সিদ্ধান্তের কথা জানায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
এরপর সরকারের অনুরোধে ট্যানারি মালিকরা ১৭ আগস্ট থেকে কাঁচা চামড়া কেনার কথা বলেন। কিন্তু আড়ৎদাররা ট্যানারি মালিকদের কাছে বকেয়া ‘শত শত কোটি টাকা’ পাওনার অভিযোগ তুলে কাঁচা চামড়া বিক্রি বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন। এতে নতুন করে সঙ্কট তৈরি হয়।
এমন প্রেক্ষাপটে রোববার (১৮ আগস্ট) চামড়া সংকটে সমাধানে বৈঠকে ট্যানারি মালিক ও আড়তদারসহ ব্যবসায়ী নেতাদের নিয়ে বৈঠকের উদ্যোগ নেয় সরকার।
বৈঠকের পর চামড়া কিনতে ও বিক্রি করতে রাজী হয় ট্যানারি মালিক ও কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীরা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯ আগস্ট থেকে চামড়া কেনাবেচা শুরু হয়।
এ বিষয়ে হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, চামড়া বিক্রি শুরু হয়েছে চলতি সপ্তাহে। ঢাকার চামড়াগুলো বিক্রি করার পর মফস্বলের চামড়াগুলো বিক্রয় শুরু হবে।
তিনি বলেন, দেশে কাঁচা চামড়ার বড় যে বাজারগুলো রয়েছে সেগুলোর কিছু কিছু বাজারে এখনও ট্যানারি মালিকরা যায়নি। ফলে চামড়া বিক্রি হয়নি। তবে তারা ধীরে ধীরে বাজারগুলোতে যাবে এবং চামড়া কিনে নিবে। ট্যানারি মালিকরা জানিয়েছে, আগামী শুক্র, শনি, রবি, সোম ও মঙ্গল এই কয়দিন নাটোর, যশোর, খুলনা, গাইবান্ধা ও সিলেটসহ কয়েকটি বাজার থেকে তারা চামড়া কেনা শুরু করবে।
দেলোয়ার হোসেন বলেন, ট্যানারি মালিকদের সংগঠন থেকে জানানো হয়েছে, তারা নিজেরা বসে চামড়া কেনার সিদ্ধান্ত নিবে আগামীকাল ২০ তারিখে। তারা বৈঠকে বসে আগামী শুক্রবার থেকে মফস্বলের চামড়া কেনা শুরু করবে।
এছাড়া ২২ আগস্ট এফবিসিসিআইয়ের সাথে আমাদের যে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে, সেই বৈঠক নিয়েও তারা আগাম কোন একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এ বিষয়ে বৈঠকের পর আমাদের অবগত করবে বলে জানিয়েছে।
তবে কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের পাওনা বকেয়া টাকা উদ্ধার হবে কিনা সে বিষয়ে শঙ্কায় রয়েছেন বলে জানিয়েছেন এই চামড়া ব্যবসায়ী।
“আমাদের পাওনা ৪শ কোটি টাকা নিয়ে আমরা শঙ্কায় আছি। এফবিসিসিআইকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে এই টাকা উদ্ধারের জন্য। কিন্তু প্রয়োজন হলে সার্বিক বিষয় নিয়ে আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পর্যন্ত যাব। কারণ চামড়ার এত বড় একটি খাত এভাবে এলোমেলো চলতে পারে না।”
তিনি বলেন, চামড়া ব্যবসায় অবশ্যই স্বচ্ছলতা থাকতে হবে। চামড়া শিল্প নিয়ে সরকার নীতিমালা করতে যাচ্ছে এই পদক্ষেপে আমরা আনন্দিত।
কারণ সব চামড়া ব্যবসায়ীদেরকে যদি সরকারের নেয়া নীতির মধ্যে আনা যায় তাহলে কেউ এর গণ্ডির বাইরে যেতে পারবে না। ব্যবসায়ও স্বচ্ছলতা থাকবে।
এ বিষয়ে ট্যানারি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, আড়ৎদার, ব্যাপারী ও ট্যানারি মালিকদের মধ্যে একটা ভুল বোঝাবুঝি ছিল। তাই চামড়া নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। কিন্তু বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বৈঠকে ওই ভুল বোঝাবুঝি দূর হয়েছে। সব সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, আজ থেকে (১৯ আগস্ট) রাজধানীর পোস্তা থেকে ট্যানারি মালিকরা চামড়া কেনা শুরু করেছে। আগামী দুই মাস এই কেনাকাটা অব্যাহত থাকবে।
কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের বকেয়া ৪শ কোটি টাকা না পেলে তারা প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্ত হবেন বলে জানিয়েছে-এ বিষয়ে আপনাদের করণীয় কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের সাথে ট্যানারি মালিকদের কিছু দেনা-পাওনা নিয়ে জটিলতা রয়েছে। তবে আশা করি আগামী ২২ আগস্ট এফবিসিসিআইতে অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকে এই বিষয়টিরও সমাধান হবে।