বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে ২০ জনেরও বেশি ব্লগার, লেখক, প্রকাশক, শিক্ষাবিদ
এবং রাজনৈতিক কর্মী খুনের ঘটনা নিয়ে ৮ মে একটি সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছে
নিউইয়র্ক টাইমস। ‘বাংলাদেশ’স ডিসেন্ট ইনটু ল’লেসনেস’ শীর্ষক সম্পাদকীয়তে
শেখ হাসিনা সরকারকে ইসলামি চরমপন্থি দমনে কঠোর হওয়ারও আহ্বান জানানো হয়েছে।
সোমবার নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত সম্পাদকীয়তে উঠে আসে বাংলাদেশে ইসলামি চরমপন্থিদের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ড, রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও ট্রাইব্যুনালের বিষয়গুলো।
বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী গণমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমসের সম্পাদকীয়তে বলা হয়, ‘২০১৩ সাল থেকে ২০ জনের বেশি বাংলাদেশী খুন হয়েছে ইসলামি চরমপন্থিদের হাতে। তাদের কয়েকজনকে জবাই করে হত্যা করা হয়। এরমধ্যে সর্বপ্রথম খুন হন একজন ব্লগার, যিনি ইসলামি মৌলবাদীদের সমালোচনা করেছিলেন। এরপর দুই বিদেশীকে হত্যা করা হয়। এদের একজন ছিলেন ইটালিয়ান এবং অন্যজন জাপানের নাগরিক। আর গত মাসে ৯ দিনের ব্যবধানে ৫ জনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এসব হত্যাকাণ্ডের জন্যে প্রধান বিরোধীদল বিএনপি ও জামায়াত ইসলামিকে আংশিকভাবে দায়ী করছেন ।’
বিগত সংসদ নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে ওই সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়, ‘২০১৪ সালে সংঘাত এবং বিরোধী দলের বর্জন করা নির্বাচনে শেখ হাসিনা এবং তার দল জয়ী হয়।’
যুদ্ধাপরাধীর বিচারের বিষয়টিও উঠে আসে এ সম্পাদকীয়তে। বলা হয়, ‘একাত্তরের দেশটির স্বাধীনতাযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া ঘাতকদের বিচারের জন্যে ২০১০ সালে গঠিত হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, এটি এখন ক্ষমতাসীন সরকারের রাজনৈতিক হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে, টার্গেট করা হচ্ছে জামায়াত ইসলামীর নেতাদের। এর পাশাপাশি বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন, গুম হওয়ার ঘটনাবলি আইনের শাসনের প্রতি মানুষের আস্থা ধ্বংস হয়ে পড়েছে।’
‘এদিকে শেখ হাসিনা সরকার গণমাধ্যম এবং কথা বলার স্বাধীনতাকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছেন। গতমাসে শেখ হাসিনা ব্লগারদের নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, কেউ যদি আমাদের প্রিয়নবী কিংবা অন্য কোন ধর্মের বিরুদ্ধে লেখে তবে তা কোনভাবেই সহ্য করা হবে না।’
সম্পাদকীয়তে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘এসবই উগ্রপন্থাকে উস্কে দিচ্ছে। দাঙ্গা, সংঘাত প্রতিরোধে কর্মরত নিরপেক্ষ সংস্থা ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসি গ্রুপ’ ইতিমধ্যেই সতর্ক করেছে যে, এ সকল হত্যাযজ্ঞ প্রতিরোধ এবং সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও আইনে সোপর্দ করতে সরকারের আচরণ প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে এবং এরফলে দুর্বৃত্তরা আরো সাহস পাচ্ছে। আল কায়েদার সহযোগী আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশ দায় স্বীকার করেছে আইনের ছাত্র নাজিমুদ্দিন সামাদকে হত্যার। ৬ এপ্রিল তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। হিন্দু দর্জি নিখিল চন্দ্র জোয়ার্দারকে হত্যার দায়ও স্বীকার করে আইএস। ৩০ এপ্রিল তাকে হত্যা করা হয়েছে। যদিও বাংলাদেশ সরকার সবসময়ই অস্বীকার করছে, বাংলাদেশে আইসিসের অস্তিত্ব নেই।’
কলাবাগানে জোড়া খুনের প্রসঙ্গ টেনে সম্পাদকীয়তে বলা হয়, ‘মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিও বলেছেন, জুলহাজ মান্নান, একজন সমকামি কর্মী, যিনি কাজ করতেন ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসে এবং তাকে হত্যা করা হয়েছে ২৫ এপ্রিল। সঙ্গে তার এক বন্ধুকেও কুপিয়ে হত্যা করা হয়, এমন নৃশংসতায় বাংলাদেশের মানুষকে হতবাক করেছে, বাংলাদেশের মানুষের ঐতিহ্য রয়েছে সংযম, শান্তি এবং বিভিন্ন ধর্মের মানুষে মিলেমিশে বসবাসের। এসব খুনের তদন্তে যুক্তরাষ্ট্র পূর্ণ সহায়তা করতে চায় বলে কেরি বাংলাদেশকে প্রস্তাব দিয়েছেন।’
‘এই সমর্থনকে শেখ হাসিনার সরকারের স্বাগত জানানো উচিত। মাত্র কয়েকজন সন্ত্রাসী বিচারের সম্মুখীন হয়েছে। এভাবে বিচারহীনতার পরিবেশ তৈরী করা হয়েছে। যারা এসব হত্যাকাণ্ডের শিকার হবার আশংকায় রয়েছে, তাদের নিরাপত্তায় সরকারকে অবশ্যই পদক্ষেপ নিতে হবে। গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা পুনপ্রতিষ্ঠা এবং আইনের শাসনের প্রতি অবশ্যই আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে সরকারকে।’
সরকারকে সতর্ক করে সম্পাদকীয়তে বলা হয়, ‘যদি এসব বন্ধ করতে সরকার ব্যর্থ হয়, তাহলে দেশকে অরাজক পরিস্থিতির মুখেই ঠেলে দেয়া হবে।