চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

নাটকের মানুষ সিনেমা করতে পারে না, এই অপবাদ ঘুচবে তো?

‘নাটকের মানুষ সিনেমা করতে পারে না, বা সিনেমা করলেও শেষ পর্যন্ত সেটা নাটকই হয়।’- দীর্ঘদিন ধরেই এফডিসি কেন্দ্রিক নিয়মিত নির্মাতাদের কেউ কেউ এমন অভিযোগ করে আসছেন। এই অভিযোগ বা অপবাদ শুনেননি- ছোটপর্দা থেকে বড়পর্দায় যাওয়া নির্মাতা বা কলাকুশলী খুঁজে পাওয়া দুস্কর!

মীর সাব্বির, আদ্যোপান্ত নাটকের মানুষ। ছোটপর্দায় দীর্ঘদিন ধরেই অভিনয় করেন। নাটক পরিচালনা করছেন সেই ২০০৮ সাল থেকে। তিনি প্রথমবার সিনেমা নির্মাণ করলেন। সরকারি অনুদানে নির্মিত মুক্তির প্রতীক্ষায় থাকা তার সিনেমার নাম ‘রাত জাগা ফুল’। সব ঠিক থাকলে চলতি বছরেই মুক্তি পাবে।

‘নাটকের মানুষ সিনেমা করতে পারে না’- এই কথাটি কি নাটকের মানুষ মীর সাব্বিরকে তাড়িত করে, ভাবায়? সরাসরি এমন প্রশ্ন ছিলো তার কাছে। সংকোচ বা এড়িয়ে না গিয়ে এই নির্মাতা, অভিনেতা উত্তর দিয়েছেন সাবলীলভাবে।

মীর সাব্বিরের প্রথম সিনেমায় জুটিবদ্ধ ঐশী ও তানভীর

মীর সাব্বির জানালেন, দীর্ঘদিন থেকেই এমন কথা শুনে শুনে আমরা অভ্যস্ত। সিনেমার সবাই নয়, কেউ কেউ হয়তো এরকমটা মনে করেন বা বলেন যে, নাটকের লোকেরা সিনেমা বানাতে পারেনা। তাদের প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই, তাদের জায়গা থেকে তারা বলতেই পারেন। আমার কথা হচ্ছে সিনেমাটা মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে, এবং সিনেমাটা সিনেমা হয়ে উঠলেই মানুষ তা গ্রহণ করবেন। আমার ‘রাত জাগা ফুল’ ছবিটা যদি সিনেমার মতো হয়ে উঠে, তাহলে সিনেমার যে মানুষেরা অভিযোগ করছেন, তারা নিশ্চয়ই কখনো বলবেন না যে মীর সাব্বির নাটকের মানুষ বলে সিনেমা বানাইতে পারে নাই! কিন্তু আমি যদি ফেল করি, সেক্ষেত্রে তারা বলতেই পারেন যে, নাটকের মানুষ সিনেমা বানাতে পারেনা। যদি আমি পাশ করি আমার ধারণা, এই অভিযোগটি করার সুযোগ তারা পাবেন না এবং এমন ধারণাটি তারা উইথড্র করবেন।

একইসঙ্গে তিনি এফডিসি কেন্দ্রিক নির্মাতাদের উদ্দেশে একটি অনুরোধ রাখেন। তিনি বলেন, পুরো পৃথিবীতে সিনেমার প্যাটার্ন চেঞ্জ হয়েছে, সিনেমার ধরন চেঞ্জ হয়েছে। এফডিসিতে যারা নিয়মিত সিনেমা পরিচালনা করেন, সব সময় তারা বলেন যে ‘আমরা সাধারণ দর্শকের জন্য সিনেমা বানাই’। এই যে সাধারণ দর্শক, এই সাধারণ বলতে তারা কিন্তু মনে করেন রিক্সাওয়ালা, গার্মেন্টস কর্মী কিংবা নিম্নবিত্ত মানুষ। আমার প্রশ্ন, তাহলে অসাধারণ দর্শক কারা? এই যে সিনেমা নিয়ে এক ধরনের বিভাজন, সেটা আমার পছন্দ হয় না। এফডিসির যারা গুণীজন আছেন, যারা ‘সাধারণ দর্শকের জন্য সিনেমা বানান’ বলে মনে করেন- তাদের কাছে অনুরোধ, ‘চলুন, আমরা সকলে মিলে সাধারণ হই, তাহলে আমাদের সিনেমা অসাধারণ হয়ে উঠবে।’

সিনেমার নামলিপি

সিনেমার নির্মাতা হিসেবে জার্নিটা কেমন ছিলো? জানতে চাইলে মীর সাব্বির বলেন, ২০০৮  সাল থেকে আমি টেলিভিশন নাটক পরিচালনা করি। সিনেমা এই প্রথম। তো পরিচালনার ক্ষেত্রে যদি বলি, সিনেমা বানানোর জন্য যে আমি আলাদা হয়েছি, কিংবা টিভি নাটক পরিচালনার বিষয়টা একটু আলাদাভাবে করতাম ব্যাপারটা এরকম নয়। আমার কাছে মনে হয়েছে পরিচালনার ক্ষেত্রে, পরিচালকের দৃষ্টিভঙ্গি একই থাকা উচিত। সিনেমা করতে হলে আরেক রকম হবে, টিভি নাটক করলে আরেক রকম হতে হবে, তা না। আমার মনে হয় প্রতিটা ক্রিয়েশন আনন্দ নিয়ে করলে সেটা অনেক সুন্দর মুহূর্ত তৈরি করে নাটক সিনেমার জন্য। আমি সেই আনন্দটা নিয়ে কাজটা করেছি। আমি যা শিখেছি যা দেখেছি যা পড়েছি, সমস্ত অভিজ্ঞতা সিনেমায় কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি- এবং এই অভিজ্ঞতার আলোকে সেটাও বুঝেছি যে সিনেমাটা কেমন হওয়া উচিত, দর্শকের কাছে সেটা কীভাবে উপস্থাপন করলে ভালো হয়! আমি নির্মাণে সেই সব অভিজ্ঞতা দেয়ার চেষ্টা করেছি। এখন সিনেমাটা দর্শকের কাছে পৌঁছাতে পারলে, তাদের প্রতিক্রিয়া দেখে বুঝতে পারবো যে আমি আসলে কতটা চেষ্টা করেছি এবং কতোটা সফল হয়েছি!

তিনি আরো বলেন, সিনেমা পরিচালক হিসেবে আমার জার্নিটা দারুন ছিল বলা যায়, প্রতিবন্ধকতায় পড়তে হয়নি। স্মুথলি কাজটা করতে পেরেছি। আমার সঙ্গে যারা কাজ করেছেন শিল্পী কলাকুশলী সকলেই সহযোগিতা প্রবণ ছিলেন বলেই সব ঠিকঠাক শেষ হয়েছে।

ছবির টাইটেল সং গেয়েছেন ফোক সম্রাজ্ঞী মমতাজ

‘রাত জাগা ফুল’ এর সর্বশেষ খবর জানিয়ে নির্মাতা বলেন, ছবিটির শুটিং শুরু করেছিলাম ২০১৯ সালের ১ ডিসেম্বর। আমাদের টার্গেট ছিল, মার্চের ভিতর আমরা শুটিং শেষ করে ফেলব। সেটা শেষ করার প্রক্রিয়ার মধ্যে ছিলাম, কিন্তু শেষের তিন দিন শুটিং করতে পারিনি লকডাউন এর জন্য। পরবর্তীতে সেই কাজটা আমরা শেষ করেছি ২০২০ সালের অক্টোবরে। এখন আমার ছবির ডাবিং থেকে শুরু করে পোস্ট প্রোডাকশনের সব কাজ শেষ হয়েছে, ছবিটা আমরা সেন্সর বোর্ডে জমা দেয়ার জন্য প্রস্তুত করেছি। খুব তাড়াতাড়ি ছবিটি সেন্সরে যাবে।

নির্মাতা জানান, ‘রাত জাগা ফুল’ সিনেমায় পাঁচটি গান রয়েছে। ছবির টাইটেল সং গেয়েছেন ফোক সম্রাজ্ঞী মমতাজ। অন্য আরেকটি গান গেয়েছেন কলকাতার নচিকেতা। আর বাকি তিনটি গানের মধ্যে একটি গেয়েছেন জলের গানের রাহুল আনন্দ, আরেকটি গান গেয়েছেন এস আই টুটুল ও শফি মন্ডল, এবং অন্য আরেকটি গান গেয়েছেন হৃদয় খান। এই পাঁচটি গানই মৌলিক এবং আমার লেখা।