সম্পর্কটা একতরফা ভাবে শেষ করেছেন। পেশাদারিত্বের ধারও ধারেননি। তবে নাটাই আর সুতোর শেষ বন্ধন ছিন্নের ব্যাপারটা বাকিই ছিল। চণ্ডিকা হাথুরুসিংহে তাই ঢাকায়। এসেছেন বিসিবির সঙ্গে সব সম্পর্কের ইতি টানতে। শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হোটেলে তার বিদায়ী আনুষ্ঠানিকতা সারা হয়েছে।
একদিন আগেই শ্রীলঙ্কার কোচের আসনে বসা মাশরাফী-সাকিবদের সাবেক গুরু এদিন সকাল সাড়ে ১১টায় ঢাকায় পৌঁছান। ওঠেন রেডিসনে। সংবাদমাধ্যমের আগ্রহ ছিল তাকে ঘিরে। হঠাৎ কেন বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ, সাউথ আফ্রিকা সিরিজে অপ্রীতিকর কিছু ঘটেছিল কিনা, প্রশ্ন গোছানো ছিল আরও অনেককিছু নিয়েই।
সন্ধ্যা পর্যন্ত সেসব প্রশ্নের কিছুই খোলাসা হয়নি। হাথুরু হোটেল লবিতেই নামেননি। নিজেকে এমনভাবে আড়াল করে রাখলেন, সকাল থেকে গণমাধ্যমকর্মীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা হোটেল লবিতে অপেক্ষা করেও তার ছায়ার দেখা পর্যন্ত পাননি!
বিসিবি পরিচালক আকরাম খান, খালেদ মাহমুদ সুজন, জালাল ইউনুস, ইসমাইল হায়দার মল্লিক, প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী সকাল থেকেই ছিলেন হোটেলটিতে। বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের সঙ্গে মাশরাফী-সাকিব-মুশফিকও বাদ যাননি। পরে নাজমুল হাসান জানালেন তাদের আগমন কেবল হাথুরুর জন্য নয়, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হোম সিরিজের পরিকল্পনা নিয়ে তিন ফরম্যাটের অধিনায়কদের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। জরুরী তলবে ডেকে আনা হয়েছে সহকারী ও ফিল্ডিং কোচ রিচার্ড হ্যালসল, স্পিন কোচ হিসেবে চুক্তিভিত্তিক কাজ করা সুনীল যোশিকে।
বৈঠকের এজেন্ডা ছিল আসন্ন সিরিজের পরিকল্পনা ও নতুন কোচ নিয়োগ প্রসঙ্গ। সবার সঙ্গে কথা বলে বিসিবি সভাপতি বুঝেছেন কোচ নিয়োগে বিলম্ব হলেও সমস্যা নেই কারও।
হাথুরুর সঙ্গে বিসিবির চুক্তি ছিল ২০১৯ বিশ্বকাপ পর্যন্ত। কিন্তু সাউথ আফ্রিকা সিরিজ চলাকালীন আচমকাই পদত্যাগ করেন তিনি। এখন কোচ হয়েছেন শ্রীলঙ্কার। হাথুরুর এমন হঠাৎ সিদ্ধান্ত যে ভালোচোখে দেখেনি, সেটির কিছুটা আঁচও মিলল বোর্ড সভাপতির কথায়। বোঝা গেল বাকি নেই খুব বেশি আন্তরিকতাও। নয়ত যে হাথুরুর বেশিরভাগ কর্মকাণ্ডে অগাধ সমর্থন যুগিয়ে এসেছেন সবসময়, নাজমুল হাসান একই হোটেলে তিন ঘণ্টা কাটানোর পরও নাকি সেই হাথুরুর সঙ্গে দেখাই করেননি!
‘হাথুরুসিংহের সঙ্গে আমার এখনও কথা হয়নি। আমার জানা মতে সে এসেছে। আমাদের সিইও সুজন ও বোর্ড পরিচালক আছে ওনার সঙ্গে বসবে। আনুষ্ঠানিকতা যা আছে, সেগুলো করবে। আমার সাথে দেখা হয়নি। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলে হয়ত আমার সাথে একবার দেখা হবে। নাও হতে পারে। আবার হতেও পারে।’
বাংলাদেশকে সাফল্য এনে দেয়ায় হাথুরুর গুণমুগ্ধ ছিলেন বোর্ড সভাপতি। বিদায়বেলায়ও কিছু প্রশংসাবাক্য খরচ করলেন, ‘ওদের সাথে কথা বলার পর যদি আমার সাথে দেখা হয়, তাহলে কথা হবে। আগ্রহর কোন ইস্যু নেই। আমাদের এখানে কোচ হিসেবে ছিলেন। বাংলাদেশের সফল একজন কোচ। বাংলাদেশ আজকের এ পর্যায়ে এসেছে, সেখানে তারও অবদান রয়েছে। এটা অস্বীকার করার কোন কারণ নেই। স্বেচ্ছায় না গেলে আমরা তাকে অবশ্যই রেখে দিতাম। কিন্তু কেউ যদি থাকতে না চায় তাকে জোর করে রাখার প্রয়োজন নেই। আমি এখন পর্যন্ত একবারও বলিনি যেও না। যাওয়ার মনস্থির করেছে, শ্রীলঙ্কা তাকে কোচ নিয়োগ করেছে, তাতে এ ব্যাপারে কথা বলার কোন প্রয়োজন নেই আর। এখন যেটা হবে, কেবল সৌজন্য সাক্ষাৎ।’
হাথুরু বিসিবির কাছে পদত্যাগপত্র পাঠানোর পর থেকেই শোনা যাচ্ছিল অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে কোচ হতে পারেন খালেদ মাহমুদ সুজন। সাবেক অধিনায়কের সঙ্গে এবার শোনা গেল হ্যালসলের নামও। বোর্ড সভাপতিই জানালেন, ‘রোববার বোর্ড মিটিং আছে। সেখানে আমরা সিদ্ধান্ত নিবো অন্তর্বর্তীকালীন অবস্থায় এখান থেকে কাউকে হেড কোচ করবো কিনা। আপাতত যে দলটা আছে, সেখানে রিচার্ড হ্যালসল, পরিচালক খালেদ মাহমুদ সুজন আছে।’