চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) পণ্য বাণিজ্যে ঘাটতি বেড়েছে। এই সময় ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৯৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৬ হাজার ৭২৮ কোটি ২৫ লাখ টাকা। তবে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ঘাটতি কিছুটা কমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।
ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেলসহ বড় প্রকল্পগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আমদানি করায় ব্যয় বাড়ছে। কিন্তু তুলনামূলক কম রপ্তানি হওয়ায় ঘাটতি বাড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, কয়েক বছর ধরে দেশে বড় কয়েকটি প্রকল্পের কাজ চলছে। এগুলোর নির্মাণ কাজে বিভিন্ন দেশ থেকে অনেক সরঞ্জামাদি আমদানি করা হয়েছে। এতে ব্যয় বাড়ছে। কিন্তু সেই হারে পণ্য রপ্তানি আয় বাড়েনি। তাই বাণিজ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
এছাড়া উৎপাদন বাড়লে এবং রেমিট্যান্স প্রবাহের ইতবাচক ধারা অব্যাহত থাকলে এই ঘাটতি কমে আসবে বলে মনে করেন তিনি।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে ইপিজেডসহ রপ্তানি খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে ৬৬৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার। অন্যদিকে আমদানিবাবদ ব্যয় করেছে ৮৬২ কোটি ২০ লাখ ডলার। এই হিসাবে আগস্ট শেষে দেশে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়ায় ১৯৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১৬ হাজার ৭২৮ কোটি ২৫ লাখ টাকা।
তবে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ঘাটতি কিছুটা কমেছে। ওই সময় ঘাটতি ছিল ২১০ কোটি ডলার। অর্থাৎ ওই সময়ের তুলনায় ঘাটতি কমেছে ১২ লাখ ৫০ লাখ ডলার
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, বাণিজ্য ঘাটতি থাকলেও বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের চলতি হিসাব উদ্বৃত্ত রয়েছে, যা গত বছর ঋণাত্মক ছিল। আগস্ট শেষে চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত দাঁড়িয়েছে ৩১ কোটি ৩০ লাখ ডলার। যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ৭০ লাখ ডলার ঋণাত্মক ছিল।
চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো- নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। সেই হিসেবে উন্নয়নশীল দেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা ভালো।
আলোচিত সময়ে সেবাখাতে বেতনভাতা-বাবদ বিদেশিদের পরিশোধ করা হয়েছে ১৫৬ কোটি ২০ লাখ ডলার। আর বাংলাদেশ এ খাতে আয় করেছে ১০৪ কোটি ২০ লাখ ডলার। এ হিসাবে সেবায় বাণিজ্যে দেশে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৫১ কোটি ডলার, যা গত অর্থবছরের (২০১৮-১৯) একই সময়ে ছিল (ঘাটতি) ৩৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার। দুই মাসে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স এসেছে ৩০৪ কোটি ২০ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ২৭২ কোটি ৯০ লাখ ডলার। রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
এই সময়ে দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে ৭৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার। এর মধ্যে নিট বিদেশি বিনিয়োগ ৪২ কোটি ৮০ লাখ ডলার। অর্থাৎ গত অর্থবছরের চেয়ে এফডিআই বেড়েছে ৭ দশমিক ১২ শতাংশ ও নিট বেড়েছে ৭ শতাংশ।
আর পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ২ কোটি ডলার। গত অর্থবছরে একই সময়ে এই বিনিয়োগ ছিল ৫০ লাখ ডলার।
জুলাই-আগস্ট সময়ে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ বাবদ বাংলাদেশে এসেছে ৭৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার। যা গত বছরের একই সময়ে এসেছিল ৬৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার।