আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনায় কোন পদ্ধতির সরকার চান সে ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু না বললেও ড. কামাল হোসেনের দাবি দলীয় সরকারের প্রভাবমুক্ত প্রশাসন এবং সেনাবাহিনীসহ সকল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
নির্বাচনকালীন প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বিষয়ে তিনি বলেন, দলীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে পুলিশ-প্রশাসন থাকবে না। নিরপেক্ষভাবে আইন অনুযায়ী তারা নিয়ন্ত্রিত হবে। সেনাবাহিনীসহ সকল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। কমিশন যেভাবে তাদের ব্যবহার করবেন সেভাবেই হবে, প্রয়োজনে মাঠে নামাবে।
বুধবার বিকেলে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে গণফোরামের নির্ধারিত সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন ড. কামালের হোসেন।
‘সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে’ ২২ দফা প্রস্তাব দেয় গণফোরাম।
বিকেল তিনটায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রায় সোয়া দুই ঘণ্টার এ সংলাপে অংশ নেন গণফোরামের নয় জন প্রতিনিধি।
দলীয় সরকার না সহায়ক সরকার নির্বাচনকালে ক্ষমতায় থাকবে সে ব্যাপারটি স্পষ্ট না করে ড. কামাল হোসেন বলেন, যে সরকার থাকবে তাদেরকে নিরপেক্ষ হতে হবে, প্রশাসনকেও আইনের অধীনে পরিচালিত হয়ে নিরপেক্ষ থাকতে হবে।
‘নির্বাচনকে যদি সুষ্ঠু হতে হয় তবে আইন প্রয়োগের ব্যাপারে, প্রচারমাধ্যমের ব্যাপারে প্রশাসনকে নিরপেক্ষ থাকতে হবে। নির্বাচন পরিচালনাকারী কর্মকর্তাদের প্রভাবমুক্ত রাখতে, এসব দলীয় সরকারের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ।এ ব্যাপারে আমরা নির্বাচন কমিশনকে বলেছি যে আপনাদের চিন্তা করতে হবে।’
প্রশাসন যদি নিরপেক্ষ থাকে তাহলে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যেতে গণফোরামের আপত্তি আছে কিনা? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের সরাসরি জবাব না দিয়ে ড. কামাল বলেন: এখানে খুব বড় একটা ‘যদি’ থাকে। ‘যদিকে’ বড় করে আন্ডারলাইন করেন তিন বার, তো হয়ে যায়।
‘৯৬ পর্যন্ত আমরা দেখেছি যে এটা হয় না। তারপর থেকে যেটা হচ্ছে, এটা নিয়ে যে বিতর্ক সৃষ্টি হচ্ছে, যেহেতু তারা (সরকার) দলীয় প্রভাব থেকে আইনের প্রয়োগ, প্রশাসনকে মুক্ত রাখতে পারছে না, পারলে তো হয়েই যেত।’
মানি পাওয়ার এবং মাসেল পাওয়ার তথা দুই এমপি’র কারণে সংসদীয় গণতন্ত্র ধ্বংস হচ্ছে মন্তব্য করে গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন আগামী নির্বাচন যেন এই দুই এমপি’র কবল থেকে মুক্ত থাকে সে ব্যাপারে আমরা নির্বাচন কমিশনকে প্রস্তাব দিয়েছি।
‘এই দুই এমপি যে গত ৪৬ বছরে আমাদের গণতন্ত্রকে কীভাবে আঘাত দিয়েছে তা আমরা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। তাই আমাদের অনেকগুলোর প্রস্তাবের মধ্যে অন্যতম ছিল এই মানি পাওয়ার ও মাসল পাওয়ার থেকে জনগণ তাদের ভোটাধিকারকে বাঁচাতে পারে। এ ব্যাপারে আইনের সঠিক ও নিরপেক্ষ প্রয়োগ, সরকারের যে ক্ষমতা সেটাকে কীভাবে আইনের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে যাতে সরকার এসব পাওয়ারকে প্রশ্রয় না দিতে পারে।’ বলেন সিনিয়র এ আইনজীবী।
সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে জনগণের মাঝে বৃহৎ ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে অন্যতম এ সংবিধান প্রণেতা বলেন: দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র থাকবে, আইনের শাসন থাকবে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা থাকবে এবং এইসব ব্যাপার নিয়ে কোন বিভাজন হতে পারে না।
‘আমার দলের লোকেরা আইনের ঊর্ধ্বে থাকবে আর প্রতিপক্ষের লোকেরা আইনের দ্বারা হয়রানির শিকার হবে, এটা আইনের শাসন নয়। সকল মানুষের কাছে এ ব্যাপারে একই ব্যাখ্যা আসবে।’
তিনি বলেন, সকল মানুষই আইনের প্রশ্রয় পাবে, কোন রকমের বৈষম্যের শিকার হবে না। সরকারি দলের জন্য এক রকম এবং বিরোধীদলের জন্য অন্য রকম আইনের প্রয়োগ হবে, সেটা হয় না।
আমরা কমিশনকে বলেছি গণফোরাম একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চায়, একটি বহুদলীয় গণতন্ত্র যায় যেখানে জনগণ নির্ভয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে, যাকে ভোট দিতে চায় তাকে দিতে পারে। যারা সংখ্যাগরিষ্ট হবে তারা পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতার অধিকার পাবে।
‘এক কথায় বলা চলে আমাদের যে সংবিধান আছে, এই সাংবিধানিক শাসন এটা আমাদের সকলেরই কাম্য।’
এর আগে সকাল ১১টা থেকে গণফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপে বসে কমিশন। সভায় দলটির চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেনের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
একটি নির্বাচনকালীন সরকারের পাশাপাশি প্রয়োজনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করার প্রস্তাব দেয় গণফ্রন্ট।
দলটির লিখিত বক্তব্যে বলা হয়েছে, বর্তমান সরকারকে সংবিধান সংশোধন করে হলেও (তত্ত্বাবধায়ক নয়, অরাজনৈতিক সরকার নয়) একটি নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করতে হবে। স্বাধীনতার পরে যে সকল নিবন্ধিত দলের সংসদে প্রতিনিধিত্ব ছিল (বিতর্কিত নির্বাচন যেমন ৮৮, ৯৬ এবঙ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ব্যতীত) তাদের সমন্বয়ে একটি সরকার গঠন করা যেতে পারে। প্রয়োজনে সমঝোতার মাধ্যমে সে সরকারের প্রধান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন। তবে নির্বাচনকালীন সরকারের কেউ জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না।
আওয়ামী লীগ, বিএনপির সঙ্গে সংলাপ সূচি নির্ধারণ
আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সঙ্গে সংলাপসূচি নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন। মঙ্গলবার সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।
তিনি বলেন: জাতীয় পার্টির সঙ্গে ৯ অক্টোবর, বিএনপির সঙ্গে ১৫ অক্টোবর ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে ১৮ অক্টোবর সংলাপে বসবে নির্বাচন কমিশন।
নিবন্ধিত ৪০টি দলের সঙ্গে ১৯ অক্টোবরের মধ্যে এবং নারী নেত্রী, পর্যবেক্ষক ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে অক্টোবরের মধ্যে সংলাপ শেষ করা হবে বলে জানান ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব ।
গত ৩১ জুলাই সুশীল সমাজ, ১৬ ও ১৭ অগাস্ট গণমাধ্যম প্রতিনিধির সঙ্গে মতবিনিময়ের পর ২৪ অগাস্ট থেকে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসে ইসি।
বুধবার পর্যন্ত ১৫টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ শেষ করে ইসি।