চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

‘ঢাকা অ্যাটাক’ দেখে যা বললেন মনিরুল ইসলাম

গেল সপ্তাহে মুক্তি পাওয়া তুমুল আলোচিত ও দর্শক নন্দিত ছবি ‘ঢাকা অ্যাটাক’ এবার দ্বিতীয় সপ্তাহেও দাপট অব্যাহত রেখেছে। দিনে ঢাকার বাইরে যুক্ত হয়েছে নতুন আরো পনেরোটি সিনেমা হল। সব মিলিয়ে ১৩০টি সিনেমা হলে দ্বিতীয় সপ্তাহে চলছে ‘ঢাকা অ্যাটাক’। সিনেমাটি দেখে নিজেদের মতামত জানাচ্ছেন সব শ্রেণির মানুষ। সম্প্রতি স্বপরিবারে ‘ঢাকা অ্যাটাক’ ছবিটি নিয়ে কথা বললেন কাউন্টার টেরোরিজমের ইউনিট চীফ মনিরুল ইসলাম। ‘ঢাকা অ্যাটাক’ নিয়ে হুবুহু তার বক্তব্য এখানে তুলে ধরা হল-

আমি সিনেপোকা মর্মে কিছুদিন আগেই একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম। এইতো কয়েকদিন আগে আমেরিকায় যাতায়াত কালে এয়ারক্রাফটে বসে গুনে গুনে ১১ টা সিনেমা দেখেছি। সারাদিন ব্যস্ততার ফাঁকেও রাতে এবং ছুটির দিনে সিনেমা দেখি। বাংলা, হিন্দি, উর্দু, ইংরেজী, সাব টাইটেলসহ ইরানী, স্প্যানিশ, ফরাসী ভাষার ছবিও দেখি। বাংলাদেশের অধিকাংশ ছবিই আমার দেখা হয়েছে। তবে হলে গিয়ে ছবি দেখা হয় না। কয়েকবছর আগে একটা হলে ঢুকলে ও সিনেমা দেখা হয়নি। দীর্ঘ বিরতির পর সর্বশেষ হলে গিয়ে দেখা সিনেমার নাম ‘চন্দ্রকথা’। সম্ভবতঃ মুক্তির পরেই তৎকালীন কর্মস্থল ঝিনাইদহের স্টেডিয়ামের পাশের সিনেমাহলে (নাম মনে নাই) সপরিবারে ছবিটা উপভোগ করেছিলাম। সেও তো ১৪/১৫ বছর আগের কথা। প্রিমিয়ার শো’র সময় দেশের বাইরে থাকায় ‘ঢাকা এ্যাটাক’ দেখা হয়নি।

দেশের ফেরার পরের দিন অফিসে বসেই হলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম। ট্রাফিক জ্যামের কারনে ছবি শুরু হওয়ার মিনিট পনেরো পরে কয়েকজন সহকর্মীসহ সস্ত্রীক সিনেপ্লেক্সে ঢুকলাম। অন্ধকারের মধ্যে যতটুকু বোঝা গেল হলভর্তি দর্শক। একটুপরেই বুঝলাম কাহিনীর সাথে দর্শক একাত্ম হয়ে গেছে। হলিউড বলিউড নয়, বাংলাদেশে নির্মিত ছবি হিসাবে দেখার মানসিক প্রস্তুতি নিয়েই ছবিটা দেখলাম। ‘ঢাকা এ্যাটাক’র প্রজেক্ট প্রধান হিসাবে কাহিনী আমার জানা ছিল। শুটিং-এর সময়েও একাধিক দিন উপস্থিত থেকেছি। শুটিং শেষে প্রথম এডিটিং-এর পরে আমরা বসে সিনেমাটা দেখেছি। ফলে আমার অনেক কিছুই জানা। আমি বারবার আমার সামনে-পিছনে, আশেপাশের দর্শকদের প্রতিক্রিয়া বোঝার চেষ্টা করছিলাম। মনে হলো দর্শক ছবিটা বেশ পছন্দ করেছে। টেনশনে ছিলাম স্ত্রীকে নিয়ে। তার প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করে মনে হলো পছন্দ করেছে। বিরতির সময় দেখলাম বাংলা ট্রিবিউন-এর সাংবাদিক ছোটভাই নুরুজ্জামান লাবুসহ বেশকিছু পরিচিত মুখ। বিরতির পরের অংশে দর্শক আরও বেশী একাত্ম, ভীষণ উচ্ছ্বসিত, উল্লসিত! শেষ দৃশ্যে অনেকেই শুভ’র জন্য প্রার্থনা করছে! শুভ’র সফলতায় হাততালি পড়ছে। সিনেমা শেষ হলো, দর্শক বেরোল। সবার পিছনে আমরা বেরিয়ে এলাম। যেহেতু বাংলা সিনেমা সম্পর্কে আমার মোটামুটি ধারনা আছে সেহেতু যেকোন বিবেচনায় ছবিটা চমৎকার হয়েছে। স্বীকার করছি, সীমাবদ্ধতা, ত্রুটি-বিচ্যূতি অনেক আছে কিন্তু এটিতো বলিউড কিংবা হলিউডের ছবি নয়। ইউটিউবে সেরা ছবিগুলোর ও অনেক সমালোচনা পাওয়া যাবে।

হলের বাইরে দেখা হলো পরিচালক দীপঙ্কর দীপন এর সাথে। হাসিমুখে অভিনন্দন জানালাম। ছবি নির্মাণ পরিকল্পনার শুরু থেকে সম্পৃক্ত থাকার সুবাদে আমি দেখেছি দীপন এবং তার পুরো টিম কতোটা পরিশ্রম করেছে। কাহিনীকার এডিসি সানোয়ার এবং তার কতিপয় সহকর্মীর পরিশ্রমটাও আমার চোখে দেখা। প্রযোজক প্রতিশ্রুত অর্থ না দেওয়ায় বারবার শুটিং পিছিয়েছে, নায়ক-নায়িকার পুনরায় শিডিউল পেতে বিলম্ব হয়েছে। টাকার জন্য সানোয়ার নানাজনের কাছে বারেবারে ধর্ণা দিয়েছে। কোথাও সফল হয়েছে আবার কখনো শুকনো মুখে এসে ব্যর্থতার কথা বলেছে। কখনো সান্ত্বনা দিয়েছি, আবার কখনো কখনো ব্যস্ততার কারনে তাও দিতে পারিনি। সানোয়ার লেগেছিলো, দীপনের ডেডিকেশন এবং প্রতিভা ছিল, আমাদের অন্যান্য সহকর্মী, সিনেমার কলাকুশলী সবাই তাদের বেষ্টটুকু দিতে পেরেছে, তাইতো ‘ঢাকা এ্যাটাক’ সফল হয়েছে!

বিকল্প ধারার নয়, মূল ধারার ছবি হিসাবেই ‘ঢাকা এ্যাটাক’ সফলতা পেয়েছে। ভালো সিনেমা পেলে দর্শক হলে যায় তা আবার ও প্রমান হলো। অভিনন্দন সানোয়ার দীপন, শুভ, মাহি, সুমন, নওশাবা, ভিলেন জীসান, শতাব্দী ওয়াদুদসহ সবাইকে। কৃতজ্ঞতা আলমগীর ভাই, আফজাল ভাই, জনাব হাসান ইমাম।

ছেলেবেলা থেকে দেখা শক্তিমান অভিনেতা জনাব তারিক আনাম, মেধাবী নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী, পছন্দের ছবি ‘গহীনে শব্দ’র ইমন, প্রতিশ্রুতিশীল নাট্যাভিনেতা মিশু সাব্বির, নাট্যাভিনেত্রী দীপা, ফারিহাসহ একদল প্রিয় মানুষের সাথে দেখা হওয়াটা বাড়তি পাওনা।