অনেক আগে থেকেই মানুষ ঘরের বারান্দা বা পাকা ভবনের ছাদে বাগান করে আসছে। একসময় এই বাগান করার বিষয়টি ছিল এক ধরণের সৌখিন ও সৃজনশীলতার অংশ। সময়ের বিবর্তনে আজ সবুজের সঙ্গে থাকার বিষয়টি যেন অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। কারণ, মানুষ বাড়ছে, বাড়ছে নগরায়ন। তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সবুজ গাছ-গাছালির বিস্তার ঘটাতে না পারলে প্রকৃতিকে বাসযোগ্য রাখা অসম্ভব হয়ে পড়বে।
রংপুরের ধাপ সাগরপাড়ায় পুরনো ছাদকৃষির উদ্যোক্তা ডা. প্রফেসর আব্দুল ওয়াদুদ মোস্তফা। সংস্কৃতি প্রাণ প্রকৃতিপ্রেমী এক মানুষ। তার বাসভবনের জৌলুস নেই। আসবাবপত্রের বৈভব নেই। কিন্তু আছে গাছপালার অদ্ভুত প্রাচুর্য। তার ছোট্ট ছাদটিতে গাছের সংখ্যা যা-ই থাক, এগুলোর সঙ্গে তার সম্পর্ক অতি নিবিড়।
পঁচিশ বছর আগে এই সংসারের গৃহিনী চলে যান পরপারে। তারপর ডা.ওয়াদুদ মোস্তফার সংসার এই গাছ-গাছালির সঙ্গে। কৃষির প্রতি তার উৎসাহের কেন্দ্রবিন্দু ছিল বাংলাদেশ টেলিভিশন। সেসময় মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠানে নানান কৃষি উদ্যোগ দেখে অনুপ্রাণিত হন তিনি।
প্রফেসর ওয়াদুদের হিসাবটি অন্যরকম। তিনি এই বাগান থেকে তেমন কিছু ফেরত চান না। তিনি মনে করেন, গাছ যা দেয় তা আমাদের বেঁচে থাকার সবচেয়ে দামী উপকরণ। কৃষি শুধু গ্রামের মানুষের কাজ নয়। কৃষির মধ্যেই রয়েছে প্রতিটি মানুষের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার রসদ।
প্রফেসর ওয়াদুদ এই বাসায় একাই থাকেন। গাছ-গাছালির সঙ্গে দুয়েকটি শিশুও লালন পালন করেন তিনি। ইতি নামের এই মেয়েটি তাদেরই একজন। ছাদর সঙ্গে সঙ্গে তার বাড়ির উঠোনে রয়েছে নানারকম গাছ। রয়েছে একটি কবুতরের খামারও। অবশ্য কৃষির সঙ্গে কবুতর পালনেও তিনি উদ্বুদ্ধ হন ১৯৯২ সালে। সেই প্রেরণাও এসেছিল বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাটি ও মানুষ থেকে।
আজকের দিনে বাড়ি সাজানোর জন্য অট্টালিকার নকশা, দামী আসবাব, নির্মাণ সামগ্রি আর রংকে প্রাধান্য দেয়, কিন্তু এর বাইরেও যে অদ্ভুত প্রাণবৈচিত্র সৃষ্টি করা যেতে পারে গাছ-গাছালির প্রাকৃতিক সমাবেশ গড়ে। প্রফেসর ওয়াদুদ মোস্তফা আজ থেকে বিশ একুশ বছর আগেই এই উপলব্ধি করেছিলেন।
তাই তিনি জীবনে নিঃসঙ্গ হননি বরং তার সময়টি তিনি রাঙিয়েছেন ফুল, ফল, সবুজ পাতা আর প্রাণবন্ত পরিবেশে বেড়ে ওঠা গাছ-পালাকে সঙ্গে নিয়ে।