দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে একটি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রণয়ন করে তা কার্যকরের সুপারিশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি মনে করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও এমন একটি নীতিমালা উচ্চ শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করবে। সংস্থাটির দাবি অনুযায়ী, গত প্রায় ১৫ বছর ধরে ১৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগের তথ্য নিয়ে গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। গত রোববার ‘সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক নিয়োগ: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরে টিআইবি। সেখানে প্রভাষক নিয়োগের ক্ষেত্রে নানা সীমাবদ্ধতার পাশাপাশি নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিভিন্ন ধাপে অনিয়ম ও দুর্নীতির কিছু চিত্র তুলে ধরা হয়।তবে শিক্ষক নিয়োগে আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি প্রথমবারের মতো টিআইবি প্রকাশ্যে আনে। আর তা নিয়েই পক্ষে-বিপক্ষে শুরু হয় বিতর্ক। কেউ কেউ প্রতিবেদনটিকে উদ্দেশ্যমূলক দাবি করেন। আবার কেউ কেউ তা অনেকটাই সঠিক বলে মন্তব্য করেন। প্রতিবেদন প্রকাশের ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম টিআইবির প্রতিবেদনকে তার অভিজ্ঞতার আলোকে ‘বাস্তব’ বলে আখ্যায়িত করেন। এ নিয়ে চ্যানেল আই অনলাইনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। আমরা এ বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের তথ্যের ওপর নির্ভর না করে আমাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকেই বলতে পারি, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক মতাদর্শকে প্রাধান্য দেয়া হয়ে থাকে। আর সব সরকারের আমলেই এটা করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, কোনো কোনো নিয়োগে আঞ্চলিকতা, স্বজনপ্রীতির পাশাপাশি ধর্মীয় পরিচয়কেও বিশেষভাবে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে বা এখনো হচ্ছে। এ নিয়ে দীর্ঘ বছর আলোচনা-সমালোচনা, সভা-সেমিনারও হয়েছে। কিন্তু এবার শিক্ষক নিয়োগে আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি ব্যাপক বিতর্ক তৈরি করেছে। এরই মধ্যে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি প্রতিবাদ করেছে। কেউ কেউ ব্যক্তিগতভাবেও তাদের মতামত প্রকাশ করেছেন। তবে এমন অভিযোগ নিয়ে আমরা বলতে চাই, আর্থিক লেনদেনের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ যদি টিআইবির কাছে থাকে, তাহলে তা প্রকাশ করা উচিত। আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে দৃষ্টান্ত তৈরি করুক। যদিও এসবক্ষেত্রে শেষ পর্যন্ত কোনো উপাচার্যকেই দায়িত্ব নিতে দেখা যায়নি। যেমন দেখা যায়নি একটি শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে পছন্দের প্রার্থীর নিয়োগ নিশ্চিত করতে শতাধিক শিক্ষার্থীকে প্রথম বিভাগে পাস করানোর বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিতে। তারপরও আমরা বলতে চাই শিক্ষক নিয়োগে রাজনৈতিক মতাদর্শ কিংবা নিজস্ব পছন্দ-অপছন আর নয়। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ হিসেবে পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মেধাবীদের নিয়োগ নিশ্চিত করা হোক; এতে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের সঠিক জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি মানসম্মত শিক্ষাও সুনিশ্চিত হবে।