সজীব ওয়াজেদ জয় নিশ্চিত ভাবেই প্রগতিশীল রাজনৈতিক ঘরানার ভেতর এক ধরনের বিভক্তির বীজ বুনে দিয়েছেন। গণজাগরণ মঞ্চের যারা ভক্ত এবং যারা এই মঞ্চের মূল স্পিরিটের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেন তারা রাজনৈতিক ভোটাভুটিতে কোন মার্কায় ভোট দেবেন সেটি বোধকরি সবাই জানেন।
কিন্তু জয়ের ফেসবুকের পোস্টের কারণে যেটি এখন হবে সেটি হচ্ছে সচেতন যুবক ও তরুণদের একটা বিশাল অংশ দু’টি দলে বিভক্ত হয়ে যাবেন এবং তাদের পছন্দের মানুষকে বেছে নেবেন। অসংখ্য শিক্ষিত, মেধাবী, স্মার্ট ও রাজনৈতিক সচেতন তরুণ ও যুবক ইমরান এইচ সরকারের পক্ষে নিজেদের মতামত দেবেন, এই ব্যাপারে আমি নিশ্চিত।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক নেতা বলতে আমরা সাধারণত যা বুঝি সেটি ইমরান নন। এই ভূখণ্ডের মানুষের দীর্ঘদিনের চাওয়া যুদ্ধাপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে যেই অবিচারটুকু আমাদের সাথে হতে যাচ্ছিলো ২০১৩ সালে, সে সময়ে সেই অবিচারকে কেন্দ্র করে সেই বিখ্যাত আন্দোলনের সময় তিনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং তিনি সকলের শ্রদ্ধার পাত্র হয়ে আছেন আজ পর্যন্ত।
মাঝে তার পাঞ্জাবীর হিসেব চাওয়া হয়েছে, কিভাবে তিনি দিনানুপাত করেন সেটি জানতে চাওয়া হয়েছে, পঞ্চাশোর্ধ্ব এক ভদ্রলোককে দিয়ে আরেকটি গণজাগরণ মঞ্চ বানিয়ে মূল স্পিরিটকে সরিয়ে দেবার প্রচেষ্টা হয়েছে, ইমরানের নামে অর্থ আত্নসাতের অভিযোগ তুলবার চেষ্টা করা হয়েছে নানান সময়ে।
লাভের লাভ কিছুই হয়নি, ইমরান এইচ সরকার কাজ করে চলেছেন সেই শুরু থেকেই। বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক সকল ইস্যুতে উচ্চকণ্ঠ ছিলেন ইমরান। ঘর থেকে ঘরে ছুটে গেছেন সাধারণ মানুষের নানাবিধ সমস্যায়। দিনে দিনে তিনি হয়ে উঠছেন সাধারণ মানুষের নেতা, জনতার নেতা। আমি ব্যক্তিগতভাবে ইমরান এইচ সরকারের উপর আস্থা রাখি।
ইমরানকে উদ্দেশ্য করে সজীব ওয়াজেদ জয় যে লেখা লিখেছেন সেটি আমার দৃষ্টিতে অন্যায়। শুধু ইমরানের প্রতিই যে অন্যায় হয়েছে তা-ই নয় বরং এটি খোদ তার মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিও অন্যায়। সাধারণ মানুষ কিন্তু সব দেখছে। তারা কিন্তু দেখতে পেলো যে একজন মানুষ তার নিজের মতামত দিলে প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সেটিকে সহ্য করতে পারেন না এবং ঘোষণা দিয়ে ফেসবুকে অন্যের বন্ধু লিস্ট থেকে মানুষকে সরে আসতে বলেন।
গতকাল থেকেই আমার পরিচিত অনেকেই সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে অনেক হাসাহাসি করেছে। তার রাজনৈতিক অপরিপক্কতা, চিন্তা করবার গভীরতা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে জয়ের এইসব কর্মকাণ্ডের জন্য সবচাইতে যাকে বেশি কটুক্তি শুনতে হবে তিনি হচ্ছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা কিংবা বঙ্গবন্ধু ছাড়া জয়ের আদৌ কোনো রাজনৈতিক পরিচয় আছে? সোজা উত্তর হচ্ছে নেই। সুতরাং জয়ের এইসব কর্মকাণ্ডের জন্য যে বিরক্তি, ক্ষোভ, হাসাহাসি কিংবা যে গালমন্দ লোকে করছে সেটির জন্য ভুগছেন তার মা। আমি বলবো জয় নিজের মায়ের প্রতি কিংবা আওয়ামী লীগের প্রতিও সুবিচার করেন নি।
শফিক রেহমানকে ধরেছে আইন শৃংখলা বাহিনী। যতদিন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে ফর্মাল অভিযোগ গঠন হয়ে সেটি আদালতে প্রমাণ না হবে ততদিন পর্যন্ত তিনি নির্দোষ হিসেবেই আইনের চোখে থাকবেন। কিন্তু তাকে ধরবার দিন থেকেই সজীব ওয়াজেদ জয় ‘আমার কাছে তথ্য আছে’, ‘আমাদের কাছে খবর আছে’ জাতীয় যে বক্তব্য দিচ্ছেন এতে করে কিন্তু এই বিচারের উপর বা পুলিশি তদন্তের উপর পরোক্ষভাবে একটি প্রভাবও পড়ছে। এর ফলে কিন্তু বিচার প্রশ্নবিদ্ধ হবে এবং প্রত্যক্ষভাবে সুবিচার নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।
সবচাইতে বড় কথা হচ্ছে আইন শৃংখলা বাহিনী শফিক রেহমানের ব্যাপারে যে তদন্ত করেছে বা করছে বা যে ফল পেয়েছে সেটি কেনো সজীব ওয়াজেদ জয় পূর্ণাঙ্গ তদন্ত বা জিজ্ঞাসাবাদ হবার আগেই জানবেন? আইন-শৃংখলা বাহিনী তাকে এইসব গোপনীয় ব্যাপারে কেনো ইনফর্ম করবেন? বিচার প্রক্রিয়া আদালত, আইন-শৃংখলা বাহিনীর জুরিসডিকশানে পড়ে। প্রশ্ন উঠতেই পারে যে, সজীব ওয়াজেদ জয় কি নিজস্ব জুরিসডিকশানের বাইরেও হস্তক্ষেপ করছেন? প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়।
বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষিত হোক। গুম-খুন-হত্যা বন্ধ হোক এবং প্রধানমন্ত্রীর সন্তান ছাড়া অন্যরাও নাগরিক অধিকার পাক, এইটুকুই চাওয়া।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)