জামিন পেয়েছেন সাংবাদিক প্রবীর সিকদার। ৩ দিনের রিমান্ডের সময় পার হওয়ার আগেই সকালে তাকে এক নম্বর আমলি আদালতে হাজির করে পুলিশ। বিচারক হামিদুল ইসলাম তার জামিন মঞ্জুর করেন।
মামলার বাদী আইনজীবী স্বপন পাল বলেছেন, এক দিনেই পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হয়ে যাওয়ায় প্রবীর সিকদারকে আদালতে হাজির করা হয়।
প্রবীর সিকদারের পক্ষে তাঁর আইনজীবী আলী আশরাফ আদালতে জামিনের আবেদন জানালে বাদীপক্ষের আইনজীবীরা তার বিরোধিতা করেননি। পরে আদালত পাঁচ হাজার টাকা মুচলেকায় মামলার পরবর্তী তারিখ পর্যন্ত প্রবীর সিকদারের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করেন। মামলার পরবর্তী তারিখ আগামী ২২ সেপ্টেম্বর।
অ্যাডভোকেট আলী আশরাফ নান্নু বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতে এই মামলায় প্রবীর সিকদার সাহেবের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছিলেন। দুইপক্ষের শুনানি শেষে আদালত ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তদন্তকারী কর্মকর্তারা তাকে একদিন জিজ্ঞাসাবাদ করার পর বাকি দুদিন জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন মনে করেননি বিধায় আজ তাকে কোর্টে প্রেরণ করেন।
তিনি আরো বলেন, প্রবীর সিকদারকে আদালতে আনার খবর শুনে আমরা তার জামিনের দরখাস্ত করি। আবেদনে আমরা বলেছি, তিনি একজন শহীদ পরিবারের সন্তান। এছাড়া তিনি একজন সাংবাদিক, সাংবাদিকতা করতে গিয়ে একটি পা হারিয়েছেন, ওনার মতো একজন প্রসিদ্ধ লোক জামিন পেলে হারানো সম্ভাবনা নেই। আমাদের কথায় সন্তুষ্ট হয়ে এবং বিশ্বাস করে আদালত জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেছেন।’
বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট অনিমেষ রায় বলেন, আমাদের মাননীয় মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন যার বিষয়ে স্ট্যাটাস দেয়া নিয়ে এই মামলার উদ্ভব হয়। প্রবীর সিকদারের স্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে ফোনে তার (খন্দকার মোশাররফ) সাথে কথা বলেন এবং অনুরোধ করেন। মন্ত্রী আমাদের বলেছেন, উনি সাংবাদিক এবং শহীদ পরিবারের সন্তান। এছাড়া উনি যেহেতু ভুল স্বীকার করেছেন তাই আইনগতভাবে যেটুকু দরকার তাকে সেটুকু সাহায্য করতে পারেন কিনা। শহীদ পরিবারের সন্তান হিসাবে মামলার বাদী সহ আমরা কেউ আজ জামিনের বিরোধীতা করি নাই।’
তবে মন্ত্রীকে ফোন দেওয়ার কথা নাকচ করে প্রবীর সিকদারের স্ত্রী অনিকা সিকদার বলেন, স্বামীর জামিন মঞ্জুর হয়েছে এতে আমি খুশি। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। এর বেশি আমি কিছু বলতে পারবো না। আমি নিজেও খুব অসুস্থ।’
তথ্য প্রযুক্তি আইনের মামলায় সাংবাদিক প্রবীর সিকদারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মঙ্গলবার ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। মঙ্গলবার সকালে তাকে ফরিদপুর আদালতে হাজির করে পুলিশ ১০ দিনের রিমান্ড চায়।
নিজের প্রাণহানির আশংকার কথা উল্লেখ করে স্থানীয় সরকারমন্ত্রীসহ তিনজনের নাম দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিলে রোববার সন্ধ্যায় তাকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। রাতেই তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ফরিদপুরে। ওই রাতেই ফরিদপুরের এপিপি স্বপন পাল তথ্য প্রযুক্তি আইনে প্রবীর সিকদারের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, প্রবীর সিকদারের দেওয়া পোস্টে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সুনাম ক্ষুণ্ণ হওয়ায় তিনি মামলা করেছেন।
ম্যাজিস্ট্রেট তখন শুনানি না করে তাকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিলে সাংবাদিক প্রবীরকে ফরিদপুর কারাগারে পাঠানো হয়।
রোববার সন্ধ্যা ৭টার দিকে শেরে বাংলা নগর থানার এসআই জলিলের নেতৃত্বে একদল সাদা পোশাকের পুলিশ তাকে তুলে নিয়ে যায়। তখন তিনি তার নিজ দৈনিক বাংলা ৭১ ও অনলাইন পত্রিকা উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ এর অফিসে কাজ করছিলেন। এরপর তাকে মিন্টু রোডের ডিবি কার্যালয়ে রাখা হয়। পরে গভীর রাতে তাকে নিয়ে ফরিদপুর রওয়ানা হয় পুলিশ।
২০০১ সালে দৈনিক জনকণ্ঠের ফরিদপুর প্রতিনিধি থাকাকালে সন্ত্রাসীদের হামলায় মারাত্মক আহত হন তিনি। সেসময় একটি পা হারান প্রবীর সিকদার। এরপর দেশে বিদেশে চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে দৈনিক সমকালে যোগ দেন প্রবীর সিকদার। এরপর তিনি কালের কন্ঠে যোগ দেন।
বর্তমানে তিনি একটি দৈনিক ও একটি অনলাইন পত্রিকা চালান।জনকণ্ঠে থাকাকালীন তিনি ‘তুই রাজাকার’ শিরোনামে একটি ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। সেই প্রতিবেদেন তিনি বিশেষ কিছু ব্যক্তির মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার বিষয়ে লেখার কারণে তার উপর হামলা হয়।