ঘটনার নাটকীয়তায় স্বামী রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী থেকে সাত নম্বর আসামি বনে যাওয়া আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির দেখা মিলল সুপ্রিম কোর্টে।
তবে জামিন আদেশে মিডিয়ার সাথে কথা না বলার শর্ত থাকায় গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে ‘চুপ’ ছিলেন মিন্নি।
হাইকোর্টে মিন্নির জামিনের পক্ষে লড়া আইনজীবী মাক্কিয়া ফাতেমা ইসলাম চ্যানেল আই অনলাইন-কে বলেন: রোববার সকালে বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরের সঙ্গে মিন্নি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী ভবনে তার আইনজীবী জেড আই খান পান্নার চেম্বারে আসেন। এরপর হাইকোর্টে তার জন্য লড়া আইনজীবীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মিন্নি। এছাড়া এই মামলায় পরবর্তী আইনী পদক্ষেপ নিয়ে আইনজীবীদের সাথে পরামর্শ করেন মিন্নি।
গত ২৯ আগস্ট বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ মিন্নিকে জামিন দেন। জামিনের ওই রায়ে হাইকোর্ট বলেন: জামিন পেয়ে তিনি (মিন্নি) তার বাবার জিম্মায় থাকবেন এবং মিডিয়ার সামনে কথা বলতে পারবেন না। এরপর গত ৩ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পান মিন্নি।
এর আগে গত ৩০ জুলাই বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান মিন্নির জামিন নামঞ্জুর করে আদেশ দেন। তার আগে গত ২১ জুলাই বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. সিরাজুল ইসলাম গাজীর আদালত মিন্নির জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেন।
গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে রিফাত শরীফকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। যার ভিডিও অনলাইনে ভাইরাল হলে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়।
এ ঘটনায় রিফাতের বাবা আবদুল হালিম শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। তাতে প্রধান সাক্ষী করা হয় রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়েশাকে। কিন্তু আয়েশার শ্বশুর মামলার ১৮ দিন পর গত ১৩ জুলাই এই হত্যাকাণ্ডে আয়েশা জড়িত এমন দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করার পর মামলাটির তদন্ত নাটকীয় মোড় নেয়।
পরবর্তীতে এ মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় মিন্নিকে। আর এই মামলায় এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হওয়া সবাই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে বলে জানায় পুলিশ।
অন্যদিকে গত ২ জুলাই এই মামলার প্রধান আসামি সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়।
এরপর গত ১ সেপ্টেম্বর মিন্নিসহ ২৪ জনকে এই মামলায় আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেয় পুলিশ। পুলিশের দেওয়া ওই অভিযোগপত্রে ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে রিফাত ফরাজীকে, যিনি বরগুনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেনের ভায়রার ছেলে। আর নিহত রিফাত শরীফের স্ত্রী মিন্নিকে করা হয়েছে মামলার ৭ নম্বর আসামি, যে মিন্নি এই মামলার এজাহারে ছিলেন এক নম্বর সাক্ষী।
সর্বশেষ গত ১৮ সেপ্টেম্বর বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী রিফাত শরীফ হত্যা মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) গ্রহণ করেন। এবং এই মামলায় পলাতক ৯ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। সেই সাথে এই মামলার চার্জ গঠনের জন্য আগামি ৩ অক্টোবর দিন ধার্য করেন আদালত। এই মামলায় জামিনে থাকা আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি ও আরিয়ান হোসেন শ্রাবণ এইদিন অভিভাবকদের সঙ্গে আদালতে উপস্থিত হন।