গ্রেপ্তার হওয়া আসামীকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক মিডিয়ার সামনে হাজির করার দৃষ্টান্ত দুনিয়ার আর কোনো দেশে আছে কিনা সে প্রশ্ন রেখে হাইকোর্ট বলেছেন, ‘এর একটা সুরাহা হওয়া উচিৎ।’
বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির জামিন শুনানিতে মঙ্গলবার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিুজর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ একথা বলেন।
এসময় আদালত বলেন, শুধুই এই মামলা (রিফাত শরিফ হত্যা) নয়, আরও অনেক মামলায় আমরা দেখি যে, মামলার তদন্ত পর্যায়ে আইন শৃংখলাবাহিনী সংবাদ সম্মেলন করে বলে যে, আসামী দোষ স্বীকার করেছে। কোন মামলার তদন্ত পর্যায়ে এধরণের বক্তব্য দেয়া কতটুকু যুক্তিসংগত? এতে জনগণের মধ্যে কি ধারণার সৃষ্টি হয়? একজন পুলিশ কর্মকর্তা যদি বলেন যে আসামী দোষ স্বীকার করেছেন, তবে সংশ্লিষ্ট অধস্তন পুলিশের দায়িত্ব হয়ে যায় ১৬৪ ধারায় আসামীর জবানবন্দি রেকর্ড করার।
এক পর্যায়ে আদালত বলেন, এই মামলায় এসপি সাহেব সংবাদ সম্মেলন ডেকে কি করে বললেন যে, মিন্নি দোষ স্বীকার করেছে? এসপি এরকম বলার পর তদন্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব হয়ে যায় তা যথাযথভাবে প্রমাণ করার। এটা হলে তো মামলার তদন্ত প্রভাবিত হতে পারে। জনগণের মধ্যে বিরুপ ধারণার সৃষ্টি হতে পারে। তাই বিষয়টি নিয়ে ভেবে দেখার সময় এসেছে। এ জন্য একটি নীতিমালাও থাকা দরকার।’
আজ শুনানিতে হাইকোর্ট আরও বলেন, আমরা টেলিভিশনে দেখি, বিভিন্ন সময় আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের মিডিয়া সেন্টারে মিডিয়ার সামনে আসামী হাজির করেন। এ ধরণের দৃষ্টান্ত দুনিয়ায় আর কোনো দেশে আছে কিনা তা জানা নেই। এর একটা সুরাহা হওয়া উচিৎ। এর আগে আমরা (হাইকোর্ট) এক জঙ্গীর মামলার রায়ে বলেছিলাম, আসামীদের এভাবে মিডিয়ার সামনে হাজির করে বক্তব্য (সংবাদ সম্মেলন) না দিতে। কিন্তু প্রায়ই দেখছি, আসামীদের জ্যাকেট পরিয়ে মিডিয়ার সামনে হাজির করা হচ্ছে।’
এদিকে আজ শুনানির পর হাইকোর্ট রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে কেন জামিন দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন। এছাড়া এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে মামলার নথিসহ ২৮ আগস্ট হাইকোর্টে তলব করা হয়েছে। সেই সাথে মিন্নি দোষ স্বীকার করেছে দাবি করে দেয়া সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে বরগুনার এসপিকে আদালতে লিখিত ব্যাখ্যা দাখিল করতে বলা হয়েছে। এবিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য ২৮ আগস্ট দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট।
আজ আদালতে মিন্নির পক্ষে ছিলেন আইনজীবী জেড আই খান পান্না, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন, আইনজীবী মমতাজ উদ্দিন মেহেদী, আইনুন নাহার সিদ্দিকা, ব্যারিস্টার অনিক আর হক, আইনজীবী এম মঈনুল ইসলাম, মাক্কিয়া ফাতেমা ইসলাম, রোহানি সিদ্দিকা ও জামিউল হক ফয়সাল। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারোয়ার হোসেন।