চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

গ্রুপ ই: ব্রাজিল, সুইজারল্যান্ড, নাকি চমক?

বিশ্বকাপে গ্রুপ ই’র চার দলের মধ্যে হট-ফেভারিট ব্রাজিল। সবার আগে রাশিয়ার টিকিট পেয়েছে কোচ টিটের দল। চোটে থাকা নেইমার ফিরে শিরোপা প্রত্যাশী সেলেসাওদের শক্তি বাড়িয়েছেন। তবে এই গ্রুপ থেকে সুইজারল্যান্ড ও কোস্টারিকাও প্রতিপক্ষের শক্ত পরীক্ষা নিতে প্রস্তুত। অঘটন ঘটিয়ে ফেলতে পরে সার্বিয়াও।

রোববার সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নামবে ব্রাজিল। দিনের প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি কোস্টারিকা-সার্বিয়া। ই’গ্রুপের লড়াই ময়দানে গড়ানোর আগে দেখে নেয়া যাক শক্তি-দুর্বলতায় কোন দল কেমন অবস্থায় আছে।

ফিট থাকতে সবার আগে চিনি বাদ দিন, প্রাকৃতিক ও নিরাপদ জিরোক্যাল-এর মিষ্টি স্বাদ নিন।

ব্রাজিল
পূর্বে বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ: ২০বার
সর্বোচ্চ সাফল্য: ১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৭০, ১৯৯৪ ও ২০০২ বিশ্বকাপ জয়
ফিফা র‍্যাঙ্কিং: ২

২০০২ সালের পর থেকে বিশ্বকাপ আর হাতে ওঠেনি ব্রাজিলের। এমন খরা অন্য ফুটবল খেলুড়ে দেশগুলো খানিকটা মেনে নিলেও ব্রাজিলের মতো দলের জন্য ভাবনারই। গত বিশ্বকাপ ঘরের মাঠে সেলেসাওদের ঘিরে স্বপ্ন ছিল আকাশচুম্বি। নেইমার ছিলেন সব স্বপ্নের কেন্দ্রে। কিন্তু বেলো হরিজন্তেতে জার্মানির কাছে ৭-১ গোলে বিধ্বস্ত হয়ে স্বপ্নভঙ্গ।

সেই ধাক্কা দ্রুতই কাটিয়ে ওঠে ব্রাজিল। কোচ টিটের হাত ধরে এবারের বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা দল সাউথ আমেরিকান জায়ান্টরা। আশা আবারও আবর্তিত নেইমারকে ঘিরেই। পিএসজি ফরোয়ার্ড চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে চোটে পড়েছিলেন। খেলায় ফিরেছেন ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ দিয়ে। সেই ম্যাচে গোল করে দেখিয়েছেন পায়ে মরচে পড়েনি। দর্শনীয় এক গোল পেয়েছেন অস্ট্রিয়ার বিপক্ষেও।

কেবল নেইমারই নন, এবারের ব্রাজিল দলটাতে আলো ছড়াতে প্রস্তুত ফিলিপে কৌতিনহো, গ্যাব্রিয়েল জেসাস, ফিরমিনো, পাউলিনহো, কাসেমিরোর মতো একঝাঁক তরুণ তারকা। টিটের দলে যারা সুযোগ পেয়েছেন প্রত্যেকেই আছেন দুর্দান্ত ফর্মে। শক্তিশালী তাদের সাইডবেঞ্চও। এবারের ব্রাজিল অবলীলায় শিরোপার দাবিদার।

কোথায় শক্তি?
ব্রাজিলের সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা, নেইমারের ওপর একক নির্ভরতা কমিয়ে এনেছেন কোচ টিটে। তারুণ্যে-অভিজ্ঞতার দারুণ মিশেল ব্রাজিলের দিকে ম্যাচ টেনে আনার সক্ষতা রাখেন জেসাস-কৌতিনহোরা। এবারের দলটির উপর আগের তুলনায় প্রত্যাশার চাপ কম। গত বিশ্বকাপে প্রত্যাশার ভারে ভেঙে পড়ায় জার্মানির কাছে বিধ্বস্ত হওয়ার দুর্ঘটনা থেকেই শিক্ষা নিয়েছে দেশটি। সমর্থকদের প্রত্যাশাও একই রকম। ব্যাপারটি অনেকটাই এরকম, ‘ভালো করতে পারলে খুবই ভালো। খারাপ করলেও শুনতে হবে না কথা!’ নির্ভারতা পারফরম্যান্স বের করে আনে।

কোথায় দুর্বলতা?
বেশ গোছানো দল। দুর্বলতা কমই চোখে পড়ে। আছে এক মধুর সমস্যাও। ব্রাজিল দলের প্রত্যেকেই নিজ আলোয় আলোকিত। কাকে বসিয়ে কাকে রাখবেন মূল একাদশে সেটাই টিটের মূল সমস্যা। উঁহু, মধুর সমস্যা।

সুইজারল্যান্ড
পূর্বে বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ: ১০বার
সর্বোচ্চ সাফল্য: ১৯৩৪, ১৯৩৮ ও ১৯৫৪ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল
ফিফা র‍্যাঙ্কিং: ৬

সাফল্য দেখে নয়, সুইজ্যাল্যান্ডের সাফল্য পাল্লায় মাপতে হবে র‍্যাঙ্কিং দেখে। ইউরোপের বাঘা-বাঘা দলকে টপকে সেরা ছয়ে অবস্থান সুইসদের। রাশিয়া বিশ্বকাপের ডার্কহর্স হয়ে উঠতে পারে দলটি। বাছাইয়ে ১০ ম্যাচের ৯টিতেই জয়। পর্তুগালের সমান পয়েন্ট থাকলেও গোল ব্যবধানে প্লে-অফে খেলেছে সুইসরা। নর্দান আয়ারল্যান্ডকে হারিয়ে পেয়েছে মূলপর্বের টিকিট।

সুইজারল্যান্ডের দল মাতাতে পারেন দুই ‘জ’। ‘জেরদান’ শাকিরি ও গ্রানিত ‘জাকা’। দলটির রয়েছে দারুণ রক্ষণ। সঙ্গে আক্রমণ ঠিকমত সাড়া দিলে জ্বলে উঠতে পারে সুইসরা।

কোথায় শক্তি?
সুইজারল্যান্ড তাদের সমস্ত শক্তি জমিয়ে রেখেছে রক্ষণে। ‘নিজেদের রক্ষণ সামলে তড়িৎ আক্রমণে প্রতিপক্ষকে বেশামাল করে দাও!’ -এই হল বিশ্বকাপে সুইসদের মূলনীতি।

কোথায় দুর্বলতা?
দলে নেই বড় কোনো নাম। একজন যোগ্য নেতারও অভাব বোধ করবে সুইসরা।

কোস্টারিকা
পূর্বে বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ: ৫বার
সর্বোচ্চ সাফল্য: ২০১৪ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল
ফিফা র‍্যাঙ্কিং: ২৩

গত বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা যেন বোঝাতে পারছে না কোস্টারিকার উচ্চতা। ব্রাজিল বিশ্বকাপে ইতালি ও ইংল্যান্ডের মতো দলের গ্রুপে থেকেও অপরাজিত থেকেই নকআউটে পৌঁছে যায় মধ্য আমেরিকার দেশটি। কোয়ার্টারে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে মেলে টাইব্রেকে হার।

রাশিয়া বিশ্বকাপে কোস্টারিকার ভার থাকবে রিয়াল মাদ্রিদে খেলা গোলরক্ষক কেইলর নাভাস ও স্পোর্টিং সিপির ফরোয়ার্ড ব্রায়ান রুইযের কাঁধে। রিয়ালের হয়ে টানা তিন চ্যাম্পিয়ন্স লিগজয়ী নাভাস যেমন ফর্মে আছেন, বিশ্বকাপে তা ধরে রাখতে পারলেই দারুণকিছু আশা করতে পারে কোস্টারিকা।

কোথায় শক্তি?
একটি দল হয়ে খেলতে পারাটাই কোস্টারিকানদের মূল শক্তি। সেই শক্তি টের পেয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দল। এই কোস্টারিকার কারণেই রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলা হয়নি তাদের।

কোথায় দুর্বলতা?
ভালো খেলাই কাল হয়েছে মধ্য আমেরিকার দেশটির। ছোট বলে যে সুবিধাগুলো পায় দলগুলি, সে সুবিধাগুলি পাবে না কোস্টারিকা। অর্থাৎ, থাকতে হবে বড় দলগুলির কঠিন নজরে!

সার্বিয়া
পূর্বে বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ: ১২বার(যুগোস্লাভিয়ার হয়ে ৯বার ও স্বাধীন হবার পর ৩বার)
সর্বোচ্চ সাফল্য: যুগোস্লাভিয়ার হয়ে ১৯৩০ ও ১৯৬২ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল। স্বাধীন হবার পর ১৯৯৮ বিশ্বকাপে দ্বিতীয় রাউন্ড
ফিফা র‍্যাঙ্কিং: ৩৪

আয়ারল্যান্ড, ওয়েলশ ও অস্ট্রিয়ার মতো দলকে কাটিয়ে রাশিয়ার মূলপর্ব নিশ্চিত করেছে সার্বিয়া। স্বাধীন হয়েছে ঠিকই, কিন্তু যুগোস্লাভিয়ার ধ্রুপদি ফুটবল আজও দেখা মিলে সার্বদের পায়ে। সেটাই চিন্তার কারণ হবে প্রতিপক্ষ দলগুলোর।

২০০৬ ও ২০১০ সালে গ্রুপপর্ব থেকে বিদায় ও ২০১৪ বিশ্বকাপে জায়গা করে নিতে না পারা সার্বিয়া রাশিয়ায় ভালো করতে বদ্ধপরিকর। দলে প্রতিভার অভাব নেই। দলকে মাঝমাঠ থেকে নেতৃত্ব দেবেন অধিনায়ক অ্যালেক্সান্ডার কোলারোভ। পাশে পাচ্ছেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড তারকা নেমানিয়া মাতিচ ও ফিলিপ কোস্টিচকে।

কোথায় শক্তি?
সার্বদের সবচেয়ে বড় শক্তি তাদের রক্ষণ। বেশ স্থিতিশীল এক দল নিয়ে রাশিয়ায় খেলতে এসেছে দলটি।

কোথায় দুর্বলতা?
রক্ষণ যদি হয় শক্তির জায়গা, তাহলে কোথায় দুর্বলতা সেটা সহজেই অনুমেয়। আক্রমণে একজন ভালো স্ট্রাইকারের অভাব বেশ ভোগাবে সার্বিয়াকে।

গ্রুপে যাদের দিকে থাকবে নজর-
নেইমার (ব্রাজিল)
ফিলিপে কৌতিনহো (ব্রাজিল)
গ্যাব্রিয়েল জেসাস (ব্রাজিল)
কাসেমিরো (ব্রাজিল)
কেইলর নাভাস (কোস্টারিকা)
জেরদান শাকিরি (সুইজারল্যান্ড)
নেমানিয়া মাতিচ (সার্বিয়া)

দ্বিতীয় রাউন্ডে সম্ভাব্য-
এই গ্রুপে পরিষ্কারভাবে ফেভারিটের নাম ব্রাজিল। তবে ইউরোপের দুই দল সুইজারল্যান্ড, সার্বিয়ার পাশে কোস্টারিকাকে ফেলে দেয়া যাবে না মোটেও। ফুটবলে অঘটন ঘটতে পারে যেকোনো ম্যাচেই। সেই শঙ্কার বাইরে নয় ব্রাজিলও। তবে দুই প্রস্তুতি ম্যাচে দুই ইউরোপিয়ান দল- ক্রোয়েশিয়া ও অস্ট্রিয়াকে হারিয়ে সেলেসাওরা দেখিয়েছে ইউরোপের আর কোনো দল নিয়েই ভীতি নেই তাদের। তাই গ্রুপের দ্বিতীয় স্থান নিয়েই মূলত লড়াই হবে কোস্টারিকা, সুইজারল্যান্ড ও সার্বিয়ার।

গ্রুপ সূচি
জুন ১৭: কোস্টারিকা-সার্বিয়া (সন্ধ্যা ৬টা)
জুন ১৭: ব্রাজিল-সুইজারল্যান্ড (রাত ১২টা)

জুন ২২: ব্রাজিল-কোস্টারিকা (সন্ধ্যা ৬টা)
জুন ২২: সার্বিয়া-সুইজারল্যান্ড (রাত ১২টা)

জুন ২৭: ব্রাজিল-সার্বিয়া (রাত ১২টা)
জুন ২৭: সুইজাল্যান্ড-কোস্টারিকা (রাত ১২টা)