মাদকের বিরুদ্ধে সংবাদ পরিবেশন করায় ধরে নিয়ে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে রিমান্ডের নামে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাত ওসি প্রদীপ বলে আদালতকে সাক্ষ্য দিয়েছেন সিনহা হত্যা মামলার ১৮ তম সাক্ষী সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খান।
বুধবার সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার বিচারকী কার্যক্রমের চতুর্থ দফার দ্বিতীয় দিনে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে ওই সাক্ষ্য দেন তিনি। এছাড়া বুধবার টেকনাফ হোয়াইক্যংয়ের সালেহ আহমদ ও বেবী বেগমের সাক্ষ্য গ্রহন করেছে আদালত।
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার চতুর্থ দফায় দ্বিতীয় দিনে তিন জন সাক্ষির সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। এ নিয়ে এই মামলায় মোট ২০ স্বাক্ষীর স্বাক্ষগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম জানান, বুধবার সকাল সোয়া ১০ টায় জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে এ সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।
তিনি জানান, আজ প্রথমে স্বাক্ষী হামজালালকে ওসি প্রদীপের আইনজীবী সহ তিন আসামির আইনজীবী জেরা করেন। এছাড়া সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তাফা খান, টেকনাফ উপজেলার হোয়াইকং ইউনিয়নের লম্বাবিল গ্রামের গৃহবধূ বেবি বেগম এবং ছালেহ আহমেদ আদালতে জবানবন্দি দেন। তিনি জানান আগামী ধার্য তারিখে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা বেবি বেগমকে জেরা করবেন। আদালত বুধবার সন্ধ্যা সাতটায় মুলতবি ঘোষণা করে আগামী ১০ ১১ ও ১২ অক্টোবর এই মামলার স্বাক্ষগ্রহনের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন।
পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম জানিয়েছেন, আদালতে জবানবন্দি দানকালে সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তাফা খান জানিয়েছেন ওসি প্রদীপের বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতি ক্রসফায়ারের নিউজ করায় তাকে নানা ভাবে হুমকি দেয় একপর্যায়ে সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তাফা স্বপরিবারে ঢাকায় চলে যান। ওসি প্রদীপ ঢাকার মিরপুর থেকে তাকে আটক করে কক্সবাজারে নিয়ে আসে এবং ক্রসফায়ারের ভয় দেখায়। এক পর্যায়ে ওসি প্রদীপ তাকে টেকনাফ থানায় নিয়ে গিয়ে অমানুষিক নির্যাতন চালায় তার চোখে মরিচের গুঁড়ো দিয়ে থেঁতলে দেয়। ঐ অবস্থায় তাকে কক্সবাজার সমিতি পাড়ায় তার বাসায় নিয়ে এসে চার হাজার পিস ইয়াবা অস্ত্র এবং বিদেশি মদের বোতল ঢুকিয়ে দিয়ে তাকে একে একে ছয়টি মামলা দিয়ে জেলে পাঠায়। এ সময় ওসি প্রদীপ ও তার বাহিনীর নির্যাতনে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলেও ওসি প্রদীপ বাধা দেয়।
২০১৯ সালের ২৪ জুন থেকে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন অনলাইনে মাদকের বিরুদ্ধে সংবাদ পরিবেশন করে সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খান। সেসব সংবাদে ওসি প্রদীপের অনেক কুকীর্তির কথা উঠে আসে। এতে ওসি প্রদীপ ক্ষিপ্ত হয়ে সাংবাদিক ফরিদকে মিথ্যা মামলায় জড়ানোসহ প্রাণনাশের হুমকি দেয়। ওসি প্রদীপের হুমকিতে সাংবাদিক ফরিদ ভয় পেয়ে ঢাকা শহরে আত্নগোপন করে। কিন্তু সেখান থেকে ওসি প্রদীপের সাথে ককিছু সিআইডি তাকে আটক করে টেকনাফ পাঠায়। পরে ওসি প্রদীপ তাকে শারীরিকভাবে মারধর করে। চোখে মরিচের গুড়ো দেয়। এরপর তাকে নিয়ে কক্সবাজার শহরের কুতুবদিয়া পাড়ায় ফরিদের বাসায় অভিযান চালায় প্রদীপ বাহিনী।