চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

কোরআন পাঠে আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য

ঐশীগ্রন্থ কোরআন মাজিদকে আল্লাহ পাক হেদায়েত ও আলোকবর্তিকারূপে নাযিল করেছেন। হেদায়েত এ কারণে যে, এতে রয়েছে ভ্রষ্টতা থেকে মুক্তি। আর অন্ধকার পৃথিবীকে আলোর সন্ধান দিতে এ কিতাবের আরেক নাম আলোকবর্তিকা।

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)- এর প্রতি নাযিলকৃত এ কিতাব রহমত হয়ে এসেছে পৃথিবীবাসীর জন্য।  কিতাব নাযিলের এজেন্ডা কী, তা পবিত্র কোরআনের শুরুতেই বলা হয়েছে, ‘এ এমন কিতাব, যা কোনো সন্দেহের ক্ষেত্র নয়; আর এতে রয়েছে খোদাভীরুদের জন্য হেদায়েত’ (সূরা বাকারা, আয়াত: ০২)।  কোরআন হেদায়েত দেবে, এটিই কোরআনের কাজ বা দায়িত্ব। তবে মানুষের কি কোনো দায়-দায়িত্ব নেই? নিশ্চয়ই আছে। সেই দায়িত্ব নিয়ে এই বিষয়ের অবতারণা।

শুরুতেই, পবিত্র কোরআনের প্রতি একজন মানুষের দায়িত্ব হলো এর প্রতি ঈমান আনা। কেননা এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত সর্বশেষ আসমানী গ্রন্থ ও মানব জীবনের সংবিধান, যাতে জীবনচলনের পদ্ধতি শিক্ষার পাশাপাশি যাবতীয় সমস্যার সমাধান নিহিত। তাই কোরআনের প্রতি সর্বপ্রথম ঈমান আনার মাধ্যমে পরিপূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করা জরুরি।

আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘তোমরা ঈমান আনয়ন করো আল্লাহ, তার রাসূল এবং ঐ কিতাবের প্রতি, যা তিনি তাঁর রাসূলের প্রতি নাযিল করেছেন’ (সূরা নিসা, আয়াত: ১৩৬)।  এরপরেই দায়িত্ব এসে যায়, এ কিতাবটি বিশুদ্ধভাবে তেলাওয়াতের। পবিত্র কোরআন বিশুদ্ধভাবে তেলাওয়াত করা অপরিহার্য। কেননা তা তেলাওয়াত ব্যতীত নামায শুদ্ধ হয় না। এমনকি অশুদ্ধ পদ্ধতিতে কোরআন পাঠের দরুন স্বয়ং কোরআন তাঁর পাঠককে কখনো কখনো লানত বর্ষণ করে। হাদিস শরিফে এসেছে, ’এমন কতেক কোরআন পাঠকারী রয়েছে, স্বয়ং কোরআন যাকে লানত দেয়’ (এহইয়া উলুমিদদ্বীন)।

কোরআন পাঠ করতে হলে তাজবিদসহ তা চর্চা করতে হবে। আর এটাই মহান আল্লাহর নির্দেশ। তিনি ইরশাদ করেছেন: ‘কোরআন পাঠ করো তারতীল সহকারে’ (সূরা মুযযাম্মিল, আয়াত: ০৪)। অনেক সময় দেখা যায়, জীবনের দীর্ঘসময় ধরে আমরা কোরআন না শিখে, কোরআনের প্রতি আমাদের দায়িত্ববোধ জাগরণস্বরূপ বৃদ্ধবয়সে এসে কোরআন শিখি।

আজকাল এটি সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বৃদ্ধবয়সে কোরআন শেখার মধ্যে যেমনভাবে সচেতনতাবোধের মাধ্যমে একটি ইতিবাচক দিক আছে, তেমনই আছে দীর্ঘসময় ধরে কোরআনের প্রতি অবহেলা ও অসচেতনতার নেতিবাচক বহিঃপ্রকাশ। আগামী প্রজন্ম যেন এই পরিস্থিতির শিকার না হয়, তাই সন্তানকে অল্পবয়স থেকেই কোরআন শিক্ষা দিতে হবে। এজন্য অভিভাবক তাদের সন্তানকে মাদ্রাসা, মক্তবে দিতে পারেন; এমনকি ঘরোয়া পরিবেশেও কোরআন শেখা সম্ভব।

কোরআনের প্রতি আমাদের অন্যতম কর্তব্য হলো একে অর্থ ও ব্যখ্যাসহ বুঝে পড়া। যেহেতু এতে ভ্রষ্টতা থেকে মুক্তি রয়েছে, তাই সঠিকভাবে একে বুঝতে পারলে হেদায়েত লাভ সহজ হবে। শুধু হেদায়েত অর্জনই নয়; কোরআন বোঝার মাধ্যমে একজন মানুষ ঐশী জ্ঞানেও সমৃদ্ধ হতে পারেন। এটি এমন এক কিতাব, যাকে সকল জ্ঞানের ভাণ্ডাররূপে ঘোষণা করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালার বাণী: ‘এতে রয়েছে সকল বিষয়ের বর্ণনা’ (সূরা নাহল, আয়াত: ৮৯)। তিনি অন্যত্র ইরশাদ করেন, ‘আমি এই কিতাবে কোনো কিছুই বাদ রাখি নি’ (সূরা আনআম, আয়াত: ৩৮)।

কোরআনের প্রতি একজন মুসলমানের আরেকটি বড় দায়িত্ব হলো একে আপাদমস্তক অনুসরণ করা।  কোরআনের অনুসরণেই মানবজীবনের সঠিক পথের দিশা রয়েছে। নবী কারিম (সা.)- এর পুরো জীবনটাই ছিল কোরআনময়। উম্মুল মুমিনিন আয়েশা সিদ্দিকা (রা.)- কে মহানবী (সা.)- এর চরিত্র সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘নিশ্চয় কোরআনই ছিল নবিজির একমাত্র চরিত্র’ (মুসলিম)। পবিত্র কোরআনের অনুসরণ করলে শুধু নবিজিরই অনুসরণ হয় না; বরং আল্লাহ পাকেরও অনুসরণ করা হয়।

সেকারণে আল্লাহ পাক বলেছেন, ‘হে ইমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো’ (সূরা নিসা, আয়াত: ৫৯)।  তাই জীবনচলনের পরতে-পরতে পবিত্র কোরআনের অনুসরণের মাধ্যমে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করতে হবে।

কোরআন মাজিদ হিফজ বা মুখস্থ করার ব্যাপারেও একধরণের দায়বদ্ধতা রয়েছে। অন্যান্য আসমানী গ্রন্থ থেকে কোরআন মাজিদের পৃথক বিশেষত্ব হলো চেষ্টা করলে এ কিতাব সহজেই মুখস্থ করা যায়; অন্যান্য কিতাবাদির ক্ষেত্রে এমনটা হয় না। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘আমি এই কোরআনকে উপদেশগ্রহণের জন্য সহজ করে দিয়েছি’ (সূরা ক্বামার, আয়াত: ১৭)।  পুরো কোরআন মুখস্থ করতে না পারলেও নামায ও বিভিন্ন প্রয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ কিছু অংশ মুখস্থ করে রাখা একজন মুসলমানের কর্তব্য।

কোরআনের প্রতি এমন অসংখ্য দায়িত্ব আমাদের কাঁধে রয়েছে, যা নিয়ে প্রতিনিয়ত আমরা অবহেলা করছি।  অথচ কোরআন মাজিদের সাথে যথাযথ যোগ-সংযোগ রাখতে না পারাটাই আজ মুসলিমবিশ্বের অধঃপতনের মূল কারণ। কবি আল্লামা ইকবাল সেকথাই বলেছেন, ‘সেকালে মুসলমান হয়ে নন্দিত ছিলে, আজ কোরআন ছেড়ে নিন্দিত হলে’ (কুল্লিয়াতে ইকবাল)।

অধঃপতনের গহ্বর থেকে উঠে আসতে আবারো কোরআনের সাথে মজবুত সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।  কেরআন নাযিলের মাস মাহে রমজানে এটিই আমাদের প্রত্যাশা।