যত স্পষ্ট আর কঠোরভাবেই নিষেধ করে দিন না কেন, গুগল আপনার চলাফেরা আর লোকেশন (অবস্থান) রেকর্ড করবেই।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বার্তা সংস্থা এসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক অনুসন্ধানে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
এপি’র অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস এবং আইফোন, দু’টোতেই টেক জায়ান্ট গুগলের এমন বেশ কিছু সার্ভিসেস অ্যাপ আছে, যেগুলো ব্যবহারকারীর লোকেশন ডেটা সংরক্ষণ করে রাখে। অথচ ডিভাইসের প্রাইভেসি সেটিংসে ডেটা সংরক্ষণের অপশন বন্ধ করা আছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স বিষয়ক গবেষকরাও এপি’র অনুরোধে বিষয়টি যাচাই করে নিশ্চিত করেছেন।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গুগল ব্যবহারকারীর অবস্থান বিষয়ক তথ্য সংরক্ষণ ও ব্যবহারের আগে অনুমতি নিয়ে নেয়। যেমন গুগল ম্যাপস, যার কাজটাই লোকেশন নির্ভর, সেটাও কিন্তু ব্যবহারকারী রাস্তাঘাটের তথ্য চাইলে তার জন্য নোটিফিকেশনের মাধ্যমে জানাবে এই সেবার জন্য তার লোকেশন অ্যাকসেস দরকার।
এর জবাবে লোকেশন রেকর্ড করার অনুমতি দিলে তখন থেকে বিভিন্ন সময় ব্যবহারকারীর লোকেশন ‘হিস্ট্রি’ হিসেবে রেকর্ড করে করে রাখে গুগল ম্যাপস। তারপর সেগুলো ‘টাইমলাইন’ হিসেবে দেখায়।
তবে এভাবে প্রতি মিনিটের নড়াচড়ার খবর সংরক্ষিত থাকাটা গোপনীয়তার জন্য বড় রকমের একটা ঝুঁকি। শুধু তাই নয়, এর সাহায্যে পুলিশ যে কোনো সময় কোনো সন্দেহভাজন ব্যক্তির অবস্থান বের করে ফেলতে পারে। তাই কোম্পানিটি লোকেশন হিস্ট্রি রেকর্ড ‘পজ’ বা সাময়িকভাবে বন্ধ করে রাখার অপশন রেখেছে।
গুগলের ভাষ্যমতে, লোকেশন হিস্ট্রি পজ করে রাখার অর্থ গুগল আর আপনার লোকেশন সংক্রান্ত কোনো তথ্য সংরক্ষণ করে রাখবে না। গুগলের সাপোর্ট পেজেও এর নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে।
কিন্তু এপি’র তদন্তে বেরিয়ে এসেছে ভিন্ন বাস্তবতা। দেখা গেছে, লোকেশন হিস্ট্রি পজ করা থাকলেও গুগল অ্যাপগুলো ব্যবহারকারীর অনুমতি ছাড়াই স্বয়ংক্রিয়ভাবে একে টাইম স্ট্যাম্পসহ লোকেশন ডেটা সংরক্ষণ করতে থাকে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ম্যাপস অ্যাপটি ব্যবহার নয়, শুধু চালু করার সাথে সাথেই গুগল ব্যবহারকারীর অবস্থানের একটি স্ন্যাপশট নেবে। অ্যান্ড্রয়েড ফোনের আবহাওয়ার নিয়মিত আপডেট দেয়া অ্যাপগুলো আপনার অবস্থান এলাকা হিসেবে মোটামুটি সনাক্ত করতে পারে।
আরও ভয়ানক বিষয় হলো, লোকেশনের কোনো প্রয়োজনই নেই, এমন কিছুও যদি আপনার স্মার্ট ডিভাইসটি থেকে আপনি সার্চ দেন, হোক তা চকলেট চিপস কুকি বা পুতুলের মতো দেখতে মগ, সেই সার্চ প্রক্রিয়াও দ্রাঘিমাংশ-অক্ষাংশ মিলিয়ে এক এক বর্গফুট পর্যন্ত আপনার অবস্থান নিখুঁতভাবে সনাক্ত করে ডিভাইসে লগইন করা গুগল অ্যাকাউন্টটিতে সেভ করে রাখছে।
অনুমতি ছাড়া ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণের এই ইস্যুর কারণে গোপনীয়তা লঙ্ঘন হচ্ছে ২ শ’ কোটিরও বেশি অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারকারী। আছেন আরও কোটি কোটি আইফোন ব্যবহারকারী যারা তাদের ফোনে গুগল ম্যাপস বা গুগল সার্চ ব্যবহার করেন।
বিশেষজ্ঞরা একে বিশ্বাসভঙ্গ এবং গোপনীয়তার নীতি লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করলেও গুগল বলছে তারা তাদের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে একেবারে পরিষ্কার। গুগলের এক মুখপাত্র এপি’কে বলেন, গুগল ব্যবহারকারীদের সুবিধার্থেই বিভিন্নভাবে লোকেশন সম্পর্কে তথ্য সংরক্ষণ করে। ব্যবহারকারী চাইলেই সেই অপশনগুলো যখন তখন চালু বা বন্ধ করতে পারেন, আবার হিস্ট্রি ডিলিটও করতে পারেন।
তবে যদি কেউ একেবারেই তথ্য রাখতে না চান তবে লোকেশন হিস্ট্রি ছাড়াও গুগলের ‘ওয়েব অ্যান্ড অ্যাপ অ্যাক্টিভিটি’ নামের আরেকটি অপশন বন্ধ করে দিতে হবে। তার সঙ্গে বন্ধ করতে হবে ডিভাইসেরও সব ধরনের লোকেশন সার্ভিস।