বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের সব থেকে বড় সমালোচক ছিলেন আহমদ ছফা। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সালের বিভিন্ন সময়ে ছফা যেভাবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবর রহমান ও তার প্রশাসনের কাজকে সমালোচনা করেছেন, সেই সমালোচনার শতভাগের একভাগ যদি এখন করা হতো, ছফার কপালে তাহলে ভালো কিছু ঘটতো না।
বঙ্গবন্ধু সমালোচনাকে পজেটিভলি নিয়েছেন এবং সেই জায়গাগুলিতে কাজ করেছেন। সংবাদপত্র আদ্যোপান্ত খুঁটিয়ে পড়তেন উনি। দেশের কোথাও কি হচ্ছে খোঁজ রাখতেন। সেই সঙ্গে ব্যবস্থা নিতেন। বঙ্গবন্ধু সবদিকের খবর নিজে রাখার চেষ্টা করতেন।
ইদানীং তৃণমূলে কি হচ্ছে তা কেন্দ্রে পৌঁছে না। কারণ কেন্দ্রের কানে ততটুকুই যায় যতটুকু কেন্দ্রকে ঘিরে থাকা সুবিধাবাদীরা দেয়। কোটা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কেন বিভিন্ন কথা বলছেন? কারণ তাকে সেভাবে সার্বিক বিষয় ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কাজকে ও কথাকে যেন কেউ কেউ খুব সূক্ষ্মভাবে বিতর্কিত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত। যুবশ্রেণির কাছে প্রধানমন্ত্রীকে অপ্রিয়, কঠোর, নির্মম, কঠিন হৃদয় করে তোলার পাঁয়তারা চলছে।
প্রধানমন্ত্রীর চারপাশে থাকা সুবিধাবাদী চাটুকাররা কি খেয়াল করছেন না, এই সরকার না থাকলে তাদেরও আর সুবিধা থাকবেনা। চাটুকারদের কি আর প্রধানমন্ত্রীকে দরকার নাই? তার ক্ষমতায় থাকা না থাকাই কি কিছু এসে যায় না? যুব সমাজের কাছে কেন এই সরকারকে ফ্যাসিস্ট সরকার হিসেবে পরিচিত করে তোলা হচ্ছে? দেশের গার্ডিয়ানকে কেন বিতর্কের মাঝে ফেলছেন?
মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান কেউ অস্বীকার করছে না, মুক্তিযোদ্ধাদের কেউ অসম্মান করছে না। করছে দাবি তাদের জন্য রাখা কোটার সংস্কারের। কারণ প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের বদলে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধারা আজ সব সুবিধা নিচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি থেকে শুরু করে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সরকারি চাকরি। তাই এই ভুয়াদের দখলদারী বন্ধ করতে, কোটের আদেশ রেখে তা কি সংস্কার করা যায় না। দেশের সংবিধান সংস্কার করা গেলে কোটা কেন সংস্কার করা যাবে না।
মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান হবে কোটা সংস্কার হলে। তাহলে মনে হয় দেশের সর্বত্র মুক্তিযোদ্ধাদের ভিআইপি মর্যাদা দেয়া হয়। এদেশে কোন মুক্তিযোদ্ধা না খেয়ে মরে না। কোন মুক্তিযোদ্ধা বিনা চিকিৎসায় মরে না। দেশে প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধা সম্মানের সাথে নিরাপত্তায়, আরামে, পোলাও মাংস খেয়ে, সুচিকিৎসা নিয়ে বসবাস করছে। সামান্য সাহায্যের আশায় দিনের পর দিন দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়না।
মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আলাদা একটা মন্ত্রণালয় আছে, সেই মন্ত্রণালয় কাজ করে মুক্তিযোদ্ধাদের সার্বিক সুবিধা অসুবিধার জন্য। মজার কথা সেই মন্ত্রণালয়ের সচিব গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন মুক্তিযোদ্ধাদের, অপমানে মুক্তিযোদ্ধা আত্মহত্যা করেন, তখন কি অসম্মান হয় না! মুক্তিযোদ্ধার বরাদ্দ নামমাত্র, সেই বরাদ্দ লুটেপুটে খেয়ে নেয় একদল সুবিধাবাদী। তখন মুক্তিযোদ্ধাদের অধিকারক্ষুন্ন হয় না বা অসম্মান হয় না? চিকিৎসা নিতে গেলে গলা ধাক্কা জোটে, পরিবহনের সুবিধা নেই তখন কি অসম্মান ও অধিকার কেড়ে নেয়া হচ্ছে না! রাজাকাররা এই দেশে ভিআইপি থেকে ভিভিআইপি মর্যাদা পেয়ে থাকে তখন মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান হয় না?
এদেশে রাজাকাররা দুধেভাতে আছে, শানশওকতে আছে, ক্ষমতায় আছে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা কয়জন এমন ভালো আছেন? কিছুদিন পরপর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা হালনাগাদ হয় এবং প্রতিবার নতুন নতুন মুক্তিযোদ্ধা বের হয়, তখন কি মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান হয় না? আমরা চোখে ঠুলি দিয়ে বসে আছি, দেখেও দেখি না। শুনেও শুনি না। নিজের সুবিধার জন্য, চাকরির সুবিধার জন্য মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট নিচ্ছেন সুবিধাবাদী ক্ষমতাধররা তা ওপেনসিক্রেট।
মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নেয়া সব পদক্ষেপের ক্রিম খাচ্ছে সুবিধাবাদীরা, নাম হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধাদের। মুক্তিযোদ্ধাদের ভাগ্যের পরিবর্তন কতটা হয়েছে তা বলা বাহুল্য। এগুলি নিয়ে বেশি কিছু বললেই তো চলে হুমকি, লেখা না ছাপার প্রেসার। না হলে কুৎসা রটাও। মামলা মোকদ্দমায় ফাঁসিয়ে জেল হাজতে আটকে রাখো, রিমান্ডে আড়ং ধোলাই কর। চেপে ধর গলা। বলতে দিয়েও না কথা। সমাজে আজ অন্যায়কারীর দাপট বেশি। প্রতিবাদকারী পালিয়ে বেড়ায়। অন্যায়কারী বুক ফুলিয়ে ঘোরে, প্রতিবাদী জানমাল নিয়ে লুকিয়ে থাকে। মুখ খুললে জামাত-শিবির-রাজাকার বলে ডাকছে আপনাকে সরকার পক্ষ।
এদিকে দলে দলে জামাত শিবির যোগ দিচ্ছে সরকারি দলে আনন্দযজ্ঞ করে। সরকারপক্ষ ছাড়া দেশের সবাই খারাপ, লোভী, হিংসুক, পরচর্চাকারী।
সরকার প্রধান ও তার আশেপাশের সুবিধাবাদীরা ভাবুন মুক্তিযোদ্ধারা আসলেই কতটুকু কি পাচ্ছে। সহজ করে ভাবুন এই লাখ লাখ ছেলে মেয়েই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। আপনাদের ভোটার। এই বিশাল অংশের দাবিটি কতটুকু সংস্কার করা যায়।
১০ পারসেন্ট মুক্তিযোদ্ধার জন্য রাখা কি খুব কঠিন কাজ। একটা ছোট পদক্ষেপ নিয়ে কি সরকার প্রধান এই লাখো ছাত্রছাত্রীর হৃদয়ে জায়গা করে নিতে পারেন না। যদি নাই পারেন তবে বেঁচে থাকা সব মুক্তিযোদ্ধাকে ভিআইপির মর্যাদা দেন। তাদের খুঁজে খুঁজে প্রাপ্য সম্মান বুঝিয়ে দিয়ে প্রমাণ করুন মুক্তিযোদ্ধারা দেশের সূর্য সন্তান।
ভালো কাজ করলে নিশ্চিত হয় সম্মানের সাথে ফিরে আসা। প্রশ্নবিদ্ধ কাজ করলে, ইলেকশন টেম্পারিং করে যেতে হবে বারে বারে। তবে এও ঠিক হাতুড়ে বাহিনীকে না সামলালে ইলেকশন টেম্পারিংও কাজ করবে না।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)