গাইবান্ধার ‘কুন্দেরপাড়া গণ উন্নয়ন একাডেমি’র শিক্ষার্থীদের কান্নার দৃশ্যে চোখ রাখা কষ্টকর। এ যেন স্বজন হারানোর চেয়েও বড় কোন দুর্য়োগ! কান্নারত শিক্ষার্থীদের অনেকেই এ বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থী। কিন্তু তারা পরীক্ষায় বসতে পারবে কিনা সে বিষয়ে কোন নিশ্চয়তা নেই। এদের কেউ কেউ নৌপথে প্রতিদিন দীর্ঘ ২০-২৫ কিলোমিটার দূর থেকে ক্লাস করতে আসতো। প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, ব্রহ্মপুত্র চরের কামারজানী ইউনিয়নের কুন্দেরপাড়ার চরে গণ উন্নয়ন কেন্দ্র (এটক) ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠা করে ‘কুন্দেরপাড়া গণ উন্নয়ন একাডেমি’। চরাঞ্চলে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর দরিদ্র সন্তানদের শিক্ষা পৌঁছে দিতে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। আশেপাশে আর কোন মাধ্যমিক বিদ্যালয় না থাকায় এই বিদ্যালয়টি দীর্ঘদিন ধরে চরাঞ্চলের শিক্ষা প্রসারে ভূমিকা রেখে আসছিলো। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ৫৯৭ জন শিক্ষার্থী পড়ছে। তাদের মধ্যে ৩৪১ জন মেয়ে শিক্ষার্থী। এ বছর ৭৭ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছে। গত শুক্রবার গভীর রাতে এই বিদ্যালয়টিতে আগুন ধরিয়ে দেয় দুষ্কৃতিকারীরা। অল্প সময়ের মধ্যেই বিদ্যালয় অফিস, শ্রেণী কক্ষ ও আসবাবপত্র পুড়ে যায়। এতে প্রায় কোটি টাকার মালামাল ও শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেটসহ মূল্যবান কাগজ পুড়ে ছাই হয়। পরদিন বিদ্যালয়ের সবকিছু পুড়ে ছাই হওয়া দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে শিক্ষার্থীরা। স্কুল পুড়িয়ে দেয়ার প্রতিবাদে তারা রাস্তায় নামে। ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার এবং তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে তারা। চরের একমাত্র স্কুলটি পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ায় খোলা আকাশের নীচে ক্লাস হয়েছে শনিবার। স্কুলে আগুন দেওয়ার ঘটনাকে নাশকতা বলছে পুলিশ। গাইবান্ধার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল ফারুক বলেন, ‘আপাতত এটা তদন্ত সাপেক্ষ বিষয়। তবে মনে হচ্ছে এটা নাশকতা। কোন ব্যক্তি-গোষ্ঠীর স্বার্থে আঘাত করাতেই এই ধরনের নাশকতা হয়ে থাকতে পারে। স্বল্পতম সময়ের মধ্যে স্কুলে আগুন দেয়ার পেছনে ইন্ধনদাতাদের খুঁজে বের করা হবে।’ পরীক্ষার্থীদের পুড়ে যাওয়া কাগজপত্রের বিকল্প ব্যবস্থা করা হবে বলে উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থীদের অভয় দিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শামসুল আজম। তিনি বলেছেন, ‘যেসব কাগজপত্র পুড়ে গেছে সেগুলোর বিকল্প ব্যবস্থা করা হবে যাতে একজন পরীক্ষার্থীরও পরীক্ষায় অংশগ্রহণে ব্যাঘাত না ঘটে। দ্রুততম সময়ে এসব কাগজপত্র যোগাড় করতে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। একই সঙ্গে স্কুলটি যেন আগের দ্রুত কার্যক্রম শুরু করা যায় তার ব্যবস্থা হবে।’ আগের চেয়েও স্কুলটির ভালো অবকাঠামো তৈরি করা হবে বলে জেলা প্রশাসক ঘোষণা দিয়েছেন। স্কুলে আগুন দেওয়ার ঘটনায় দেশব্যাপী সব মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অনেকে। পুলিশও আশঙ্কা করছে কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থে স্কুলে আগুন দেয়া হতে পারে। কোন কারণে কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী অন্য কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর প্রতি রুষ্ট হতেই পারে। কিন্তু তাই বলে প্রতিপক্ষকে দমনে বিদ্যাপীঠে আগুন দেয়া হবে? এ কেমন অসভ্যতা? আমরা জানি বিক্ষোভ বা দাবির মুখে পুড়ে যাওয়া স্কুলের নতুন ভবন হয়তো হয়ে যাবে। কিন্তু কোমল শিক্ষার্থীদের মনে যে আঘাত লাগলো তা নিরাময় হবে কীসে?