ব্যান্ড সংগীতকে দেখা হয় তারুণ্যের প্রতীক হিসেবে। সারা বিশ্বেই এখন তুমুল জনপ্রিয় ব্যান্ড সংগীত। অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে জন্ম হয় এক একটা ব্যান্ড দলের। প্রতিটি ব্যান্ডই স্বতন্ত্র তাদের কথা ও গানে। একটা ব্যান্ড গ্রুপের সদস্যরা শুধু গান করার জন্যই এক হয় না। ব্যান্ড মানে বন্ধুত্ব। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে ব্যান্ড দলেও কখনো কখনো বাজে ভাঙনের সুর। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে বর্তমানে বাংলাদেশেও বাড়ছে এই ভাঙনের হার।
পুরোনো সদস্যরা দল থেকে বেড়িয়ে যায়। আবার নতুন কেউ এসে ঠাই করে নেয়। কখনোবা আবার পুরো দলটাই ভেঙে যায়। কিংবা অনেকেই আবার গড়ে তোলে নতুন আরেক ব্যান্ড।
সাম্প্রতিক সময়ে শিরোনামহীন ব্যান্ড দলের ভাঙন বাংলাদেশের ইতিহাসে নতুন কিছু নয়। এর আগে প্রথম বাংলা ব্যান্ড ‘আইওলাইটস’ও শিকার হয়েছিল ভাঙনের। তারপর জনপ্রিয় ব্যান্ড দল সোলস, মাইলস, ওয়ারফেইজ, নগর বাউল, অর্থহীন, ব্ল্যাক, চিরকুট, দূরবীনের মত দল গুলোতেও ভাঙন দেখা গেছে। তাই ব্যান্ডের ইতিহাসে ভাঙন এখন ভক্তদের কাছে হতাশা স্বরূপ। কিন্তু কেন ভাঙে ব্যান্ড দল? সেসব কারণ নিয়েই আজকের এই আয়োজন-
অর্থের সংকট-
কোন ব্যান্ড দলের ভাঙনের পেছনে অর্থনৈতিক টানাপোড়ন বড় একটি কারণ । ভালো আয় করা না গেলে যে কোন কিছুই টিকে রাখা মুশকিল। বিশেষ করে নতুন এবং মাঝারি মানের ব্যান্ডগুলোর জন্য। ব্যান্ডের সাথে জড়িয়ে থাকলে সাধারণত তারা আর কোন কাজের সাথে যুক্ত থাকতে পারেন না। ওদিকে গান করে যে অল্প ক’টা টাকা আয় আয় রোজগার হয় সেটা দিয়েও চলা মুশকিল।
এছাড়া অন্য কোথাও একা গান গেয়ে তাঁদের বাড়তি আয়ের সুযোগ থাকে না । শুধু তাই নয় শিল্পীদের ব্যক্তিগত জীবন পর্যন্ত একটা ছকে বাঁধা থাকে। তাই অনেকে ব্যান্ড দল থেকে ছুটে যাচ্ছে।
এদিকে ব্যান্ডের কোন গানের কথা ,সুর সব কিছুর কৃতিত্ব দলের সবার । তাই সেখান থেকে করা আয় সব কিছুই দলের সবাই মিলে ভাগ করে নেয়ার কথা। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় একটা গানের গীতিকার পুরো গানটির সফলতা দাবি করছে ,ফলে দলের অন্য সদস্যরা নিজেদের কাজের যোগ্য প্রশংসা পাচ্ছে্ন না। ফলে দল থেকে বেড়িয়ে যাচ্ছেন।
ব্যবসায়িক স্বার্থে খরচ-নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-
ব্যান্ডের সদস্যদের মধ্যে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব অনেক সময় পুরো ব্যান্ডটাকেই ভেঙে দেয়। অনেক কারণেই ব্যান্ডের সদস্যদের মধ্যে মতের অমিল দেখা যায়। কিন্তু সেগুলো না মেটালে পারলে দেখা দেয় ভাঙন। ব্যান্ডের শুরুর দিকে দেখা যায় কোন একজন সদস্য হয়তো দলের সবার উপর প্রভাব বিস্তার করছে। তাদের সবাইকে নেতৃত্ব দিচ্ছে।একজনের এই একক প্রভাব খুব খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। এজন্য দলের একজন ম্যানেজার থাকলে দ্বন্দ্বগুলো মেটানো সহজ হয়।
ব্যবসায়িক জটিলতা-
আধুনিক যুগে মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি বড় একটি ইন্ড্রাস্টি। এখানে এখন লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ হচ্ছে । একটি ব্যান্ডের বিভিন্ন কনসার্টে গান গাওয়ার চুক্তি করা,অর্থের লেনদেন এসব বেশ বড় আকার ধারণ করেছে। তাই ব্যান্ডের সব সদস্যদেরই কাজ ও দায়িত্ব ভাগ করে দেয়ার ব্যাপার থেকে যায়। কিন্তু কেউ হয়তো তার দায়িত্বে অবহেলা করে ফেলে। তখনই নেমে আসে ভাঙনের সুর।
ইগো বা অহংকার-
সঙ্গীতের মতো সৃষ্টিশীল একটি মাধ্যমের সাথে যুক্ত থাকার ফলে অনেক ব্যান্ড সদস্যই ‘ইগো’ জনিত সমস্যার ভুগতে পারেন। অনেকেই মনে করে থাকেন তারা অন্যদের চেয়ে ভালো ও যোগ্য। কিন্তু যখন দর্শকের থেকে আশানুরূপ সাড়া পান না তখন তাদের মাঝে হতাশা কাজ করে। ফলে ব্যান্ড থেকে বেড়িয়ে আসেন তারা।
লক্ষ্য নিয়ে গণ্ডগোল –
একটি ব্যান্ডের ‘স্ট্যাটেজি’ বা নিয়ম নীতি কি হতে পারে এটা নিয়ে দলের সদস্যদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয় অনেক সময়। তারা কি ঘরনার গান করবে? তারা ঠিক কোথায় যেতে চায় । সদস্যরা ‘পারিবারিক জীবনে ‘ অনেক সময় ব্যয় করতে পারবে কি না ? কিংবা তারা কি অ্যালবাম বের করবে কি করবে না? এসব নিয়ে সঙ্কট সৃষ্টি হয় স্বাভাবিকভাবে। তার সঙ্কট থেকে সংঘাত তৈরি হয়ে থাকে।
অবসাদ ও ক্লান্তি-
একদিন সব রঙ নিভে যায়। ক্লান্ত জীবন চেয়ে বসে একটু খানি অবকাশ। অবসাদের বিষাদ তখন ছুঁয়ে ফেলে ব্যান্ডের সদস্যদের জীবন।
তাদের আর বিদেশ ভ্রমণ ভালো লাগে না । কনসার্ট করার আগ্রহও হারিয়ে যায় । এছাড়া নিয়মিত প্র্যাকটিস প্যাডেও ভাঁটা পড়ে। ফলে ভেঙে যায় তুমুল জনপ্রিয় ও অসম্ভব সফল অনেক ব্যান্ড।