বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে সম্প্রতি যোগদান করেছেন মোহাম্মদ আলী হোসেন প্রধানিয়া। বর্তমান দায়িত্বের আগে তিনি অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬ সালে তিনি অগ্রণী ব্যাংকে প্রবেশনারি অফিসার হিসেবে ব্যাংকিং ক্যারিয়ার শুরু করেন। মোহাম্মদ আলী হোসেন প্রধানিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের বিজনেস স্টাডিজ অনুষদে ডক্টরেট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে ডিবিএ অধ্যয়নরত।
বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে তিনি অগ্রণী ব্যাংকে শাখা ব্যবস্থাপক ও প্রধান কার্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি একই ব্যাংকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, ট্রেজারি, সিএএমএলসিও, বিভিন্ন সার্কেল প্রধান, জনসংযোগ ও প্রধান শাখার দায়িত্ব দক্ষতার সঙ্গে পালন করেন। তিনি ২০০৮ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত অগ্রণী এক্সচেঞ্জ হাউস, সিঙ্গাপুরের সিইও হিসেবে দায়িত্বে থাকাকালীন ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধিতে অসাধারণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস এসোসিয়েশন, বাফেডা এর টেকনিক্যাল কমিটির চেয়ারম্যান। দেশ-বিদেশে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন। তিনি চাঁদপুর জেলার মতলব উপজেলায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। সম্প্রতি আর্থিক খাতের নানা বিষয়ে একান্ত সাক্ষাতকারে কথা বলেন তিনি।
প্রশ্ন: কৃষি ব্যাংক এখন কোন লক্ষ্যে কাজ করছে- শুরুতেই জানতে চাই?
মোহাম্মদ আলী হোসেন প্রধানিয়া: হাফ মিলিয়ন বা ৫ লক্ষ পরিবারকে আমরা কৃষি ঋণের আওতায় নিয়ে আসতে পেরেছি। এটি হলে দুটি কাজ হবে। একটি হলো- আপনি জানেন যে, আয় বৈষম্য, যেটি বেড়ে গেছে এটিকে আমরা কন্ট্রোলে নিয়ে আসছি। এইভাবে করতে পারবো যে, গ্রামীণ এলাকাতে যদি আমরা কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারি। ৫২ শতাংশ মানুষ কৃষির সাথে সম্পৃক্ত আছে। এই মানুষগুলোকে যদি আমরা সেলফ এমপ্লয়মেন্ট বা কাজের সংস্থান করে দিতে পারি তা হলে কিন্তু অটোমেটিক্যালি আয় বৈষম্য কিন্তু হ্রাস পাবে এবং এই ক্ষেত্রে সাসটেইন অ্যাবল ডেভলপমেন্টের যে গোল আছে এখন তা বাস্তবায়ন অত্যন্ত সহজ হবে। এই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
প্রশ্ন: মডার্ন ব্যাংকিং সেবা দেয়ার ব্যাপারে কৃষি ব্যাংক কিভাবে ভাবছে- বিশেষ করে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মত সেবা?
মোহাম্মদ আলী হোসেন প্রধানিয়া: আমি একটু পেছনে থেকে আসতে চাই। এই মুহূর্তে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের গ্রাহক সংখ্যা ৩ পয়েন্ট সিক্স সেভেন মিলিয়ন বা প্রায় ৩৭ লক্ষ কাস্টমার, শুধু ঋণ গৃহিতা। এদের এভারেজ সাইজ অব দ্যা ট্যারিফ হলো ৪২ হাজার। এই যে বিপুল পরিমাণ- এর ম্যানেজিং কস্ট অনেক হাই কিন্ত তারপরেও আমি কিন্তু ল্যান্ডিং করছি ডাইরেক্ট লেন্ড অব কস্ট অব ফান্ড এর নীচে। দ্যাট ইজ দ্যা এজেন্ডা। কারণ একটি ব্যাংক যদি লস করে। ধরেন, বারো শত কোটি বা পাঁচ শত কোটি টাকা লস করলো কিন্তু আলটিমেটলি এর যে মাল্টিপল ইফেক্ট ওন দ্যা ইকোনমি তা কিন্তু অনেক অনেক গুণ বড়। সুতরাং আমি ৩৭ লক্ষ কাস্টমারকে সার্ভিস কিন্তু এক সাথে আমি দিতে পারবো না। বাট অফকোর্স বাজারে এখন যেটা এসেছে সামনের দিকে যদি আপনি ফিনটেক প্রডাক্ট নিয়ে কাস্টমারদের কাছে না যেতে পারেন তাহলে বাজার স্কুইজ হয়ে যাবে। বাট উই হ্যাভ দ্য প্ল্যান। আমাদের টোটাল ব্র্যাঞ্চ এর মধ্যে ৮০০ ব্রাঞ্চ অনলাইন আছে। বাকী ১ হাজার ৩৮ টি শাখা আমরা নেক্সট ইয়ার জুনের ভেতরে অনলাইনে নিয়ে আসবো। অনলাইনে যখন চলে আসবে তখন আমার এগজিস্টিং যে ম্যান পাওয়ার আছে তখন এই ম্যান পাওয়ার দিয়ে আমি টেকনোলজি বেজড সার্ভিস দিতে পারবো। ফিনটেক প্রডাক্ট এবং আদার ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিসগুলো আমরা ইজিলি দিতে পারবো। ব্যাংকিং সেবা পেতে গ্রাম ও শহরে মানুষের প্রত্যাশা এখন অনেক বেশি।
প্রশ্ন: গ্রাম ও শহরের তুলনা তো এখন অনেক বেশি?
মোহাম্মদ আলী হোসেন প্রধানিয়া: হ্যাঁ। অনেক বেশি। এই সেবার সম্প্রসারণের জন্যে সময়ের প্রয়োজন। প্রতিযোগিতা থাকবে এবং সেই সাথে সার্ভিসের প্রতিযোগিতাও থাকবে। সরকারি ব্যাংকগুলোকে ডিসপাইট সট অব লিমিটেশন অনেক সার্ভিস দিতে হয় ফ্রি অব কস্ট। কাস্টমারের সংখ্যা অনেক বেশি কিন্তু তা সত্ত্বেও আমাদেরকে প্যারালাল প্ল্যাটফর্মে আসতে হবে প্রাইভেট ব্যাংকের সাথে সার্ভিসের ক্ষেত্রে। আর আমরা এই লক্ষেই কাজ করছি।
প্রশ্ন: কৃষককে কৃষি লোন দেওয়ার পরে তাদেরকে শস্য বীমা করার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করেন কি না?
মোহাম্মদ আলী হোসেন প্রধানিয়া: খুব জরুরী একটি প্রসঙ্গ আপনি তুলেছেন। আমি অলমোস্ট প্রতি সপ্তাহেই কোন ডিভিশনে, কোন জেলায় অথবা কোন গ্রামে আমি যাই। কৃষকরা শুধু একটি ফসলে না, তিনটি ফসলে মার খেয়েছে এমন ঘটনা আমি চোখের সামনে দেখেছি। এই বছর সরকার বাজেটে টাকা রেখেছে শস্য বীমার জন্যে। আমার পার্সোনাল ধারণা হলো- তা হলো ইন্স্যুরেন্সের জন্যে কৃষিঋণের সাথে তাকে এডজাস্ট করতে হবে। শস্য ঋণ থেকে ৫০০ টাকা শস্য বীমার প্রিমিয়াম হিসেবে দিতে হবে। শস্য বীমা করা থাকবে। যদি কোন কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ অথবা যে কোন কারণে যদি নস্ট হয় তাহলে এই বীমা কোম্পানি ক্ষতিপূরণ দেবে। কৃষক তার ব্যক্তিগত টাকা থেকে ৫০০/১০০০ টাকা শস্য বীমার জন্যে দেবে না। কৃষি ঋণ নিতে হলে তার সাথে শস্য বীমাকে যুক্ত করে দিতে হবে এবং এই ক্ষেত্রে বীমা কোম্পানীর সাথে কৃষি ব্যাংকের চুক্তি থাকবে।
প্রশ্ন: কৃষি ঋণ নেওয়ার শর্ত হিসেবে শস্য বীমা তার সাথে চালু করতে হবে?
মোহাম্মদ আলী হোসেন প্রধানিয়া: কারেক্ট। যদি কৃষি ব্যাংকের সাথে বীমা কোম্পানির- মে বি আই উইল প্রেফার টু হ্যাভ দ্যা সাধারণ বীমা কর্পোরেশন- সরকারের ক্ষেত্রে যদি সাবসিডি দেওয়া হয় এবং সেটা যদি বিকেবি অথবা ডাইরেক্ট যারা এগ্রিকালচার ক্রেডিট দিচ্ছে সেখানে লিংক করে দেওয়া হয় তাহলে আমার মনে হয়- একটা লেভেল থেকে এটা হতে হতে পরবর্তীতে কিন্তু কৃষকরা যখন এই বেনিফিটটা বুঝবে তখন কিন্তু তারা স্বত:প্রণোদিত হয়ে শস্য বীমার ক্ষেত্রে উৎসাহী হবে। এটি আমার একটি ধারণা। সেদিন ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের একটি টীম এসেছিল। সেখানেও আমার বক্তব্য এই রকমই ছিল। আমি ফিল করি যেটা- ইন বিল্ড থাকতে হবে এবং একটা স্পেস পরে দুই চার বছর পরে দেখবেন অটোমেটিক্যালি কৃষকরা তখন শস্য বীমা করার জন্যে খুঁজবে বীমা কোম্পানিকে।
প্রশ্ন: তাই এখন সচেতনতার জায়গায় অনেক বেশি কাজ করতে হবে?
মোহাম্মদ আলী হোসেন প্রধানিয়া: একদম ঠিক তাই। সচেতনতা তৈরি করতে পারলে এমনিতেই কাজ হয়ে যাবে।